মহামারী আর ইউক্রেইন যুদ্ধের পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় অনেক উন্নত দেশ নিজেদের ‘মন্দার দেশ’ ঘোষণা করলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা এখনো ‘সচল’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাসস জানিয়েছে, রোববার রাজধানীর পূর্বাচলে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, “সেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন। যার ফলে আজকে সমগ্র বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। নিজেদের মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা করছে। আমরা কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায়ে যাই নাই। আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি।”
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত মাসব্যাপী এ মেলা উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের রপ্তানি বাড়াতে বিশ্বে নতুন নতুন বাজার খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি, পণ্য বহুমুখীকরণ ও খাদ্য প্রকিয়াজাতকরণ শিল্পের দিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীদের।
“আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য খুব সীমিত। কিছু পণ্যের ওপর আমরা খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এটা বহুমুখী করার কথা। আমি বারবার এ কথা বলে যাচ্ছি। আমরা যত বেশি বাজার পাব, তত বেশি আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারব। আর আমাদের দেশের মানুষের কর্মক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। |ছবি পিআইডি
“আমরা রপ্তানিও যেমন করব, তেমনি নিজের দেশের বাজারও যাতে সৃষ্টি হয় এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলেই আমাদের ইন্ডাষ্ট্রিগুলো আরো কার্যকর হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে পারব।”
সরকারপ্রধান বলেন, “বিদেশে আমাদের সকল দূতাবাসকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি, এখনকার ডিপ্লোমেসি এটা পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি না ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি হবে। অর্থাৎ, প্রত্যেকটি দূতাবাস ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, কী আমরা রপ্তানি করতে পারি বা কোথা থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি সেই দিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।”
দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে কল-কারখানা না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা ইন্ডাস্ট্রি করবেন অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে। তার বাইরে করলে কোনো ধরনের সেবা পাবেন না।
“আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা ৫জি চালু করব। এটা সব জায়গায় দরকার নেই, এটা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য বা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রযোজ্য। সেভাবে আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি।”
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিদ্যুৎ আর গ্যাস এটা যদি একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন চান তবে এগুলো ক্রয় করতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে সেই খরচের দামটা তো দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে। কারণ ভুর্তকি তো জনগণের পয়সা, এত বেশি দেওয়া যায় না।
“কাজেই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের এ বিষয়ে অন্তত একটু নজর দিতে হবে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনের যাওয়ায় এখন লোডশেডিং কমে গেছে।”
এবারের মেলায় সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া এবং ভারতসহ ১০টি দেশের প্রায় ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মেলার উদ্বোধনীতে দেশের রপ্তানি কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে পাট ও পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
মেলা উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।