বিএনপির সমাবেশে সরকারের তরফ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাস মালিকরা ‘আগুন সন্ত্রাসের ভয়ে’ গাড়ি বন্ধ করলে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই।
বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘটে জনভোগান্তির মধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্য এল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বাস মালিকরা বাস বন্ধ করে দিয়েছে, সেখানে আমাদের কী করার আছে? ২০১৩/১৪ সালে বিএনপি সারা দেশে যে আগুন সন্ত্রাস করেছে, সেই জন্য বাস মালিকরা বাস বন্ধ রেখেছে, এখানে আমাদের কী করার আছে। আমরা তো আন্দোলনে বাধা দিচ্ছি না।”
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় বিভাগীয় শহরগুলোতে ডাকা গণসমাবেশের অংশ হিসেবে শনিবার বরিশালে বিএনপির কর্মসূচি রয়েছে।
তার আগেই অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ থাকায় সারাদেশের সঙ্গে বরিশালের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তাতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
জেলার পরিবহন শ্রমিক নেতারা বলছেন, মহাসড়কে অবৈধ নছিমন করিমন চলাচল বন্ধের দাবিতে তাদের এই ধর্মঘট, এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এর আগে ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহীতেও একই ঘটনা ঘটেছিল।
শুক্রবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপ কমিটি আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আন্দোলনে কোনো বাধা আওয়ামী লীগ সরকার দিচ্ছে না।
“প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনের বিরুদ্ধে বলেননি। তিনি আওযামী লীগের নেতাকর্মীদের বলেছেন, বিরোধী দল আন্দোলন করছে করুক, বাধা দেবে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমরা মেনে আন্দোলন করতে দিচ্ছি।
“এখন এখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি করছেন, আপনাদের নেত্রীকে তো আপনারা জেল থেকে মুক্ত করেননি।’ খালেদা জিয়ার নামে কে মামলা করেছে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার লোক? বেগম জিয়ার লোক। তারা মামলা দিয়েছে। আসলে তারা লাফায় কেন সেটাও তো বুঝি না। দুই প্রধান নেতাই দণ্ডিত আসামি। একজন ‘জীবনেও রাজনীতি করবে না’ মুচলেকা দিয়ে কাপুরুষের মত দেশ ছেড়ে পালিয়েছে ।”
আওয়ামী লীগের পালানোর কোনো ইতিহাস নেই মন্তব্য করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “প্রয়োজনে জেলে যাব, পালিয়ে যাব না। পালানোর ইতিহাস বিএনপির নেতাদের।”
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ শুরু হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কী প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে? প্রতিহিংসা তো তাদের, যারা একাত্তরের প্রতিশোধ নিতে পঁচাত্তর ঘটিয়েছে, পনেরই আগস্ট ঘটিয়েছিল যারা, তারাই প্রতিহিংসা পরায়ণ, তাদের থেকে প্রতিহিংসা কার বেশি।
“তেশরা নভেম্বর কাল গেল, জেলের মধ্যে তাদের হত্যা করা হয়েছে, প্রতিহিংসা পরায়ণ তো তারা, শেখ হাসিনাকে প্রাইম টার্গেট করে যারা একুশে অগাস্ট ঘটিয়েছিল তাদের চেয়ে প্রতিহিংসা পরায়ণ বাংলাদেশে আর কে? আজকে সত্য বলতেই হবে।”
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে আয়োজিত এই সেমিনারে উৎপাদন বাড়ানোর বিপ্লব ঘটানোর আহ্বান জানান সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের।
তিনি বলেন, “দেশের এখন যে অবস্থা, আমাদের এখন পথের মানুষের কথা ভাবতে হবে, বিপ্লব আমরা করব, কিন্তু এখন মানুষ বাঁচাতে হবে। সংকট থেকে পরিত্রাণ করতে হবে, সংকট উত্তরণই এখন প্রধান কাজ। মানুষ কষ্টে আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্ত কষ্টে আছে। সারা দুনিয়ায় সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে, শুধু বাংলাদেশে নয়।
“এই সংকট থেকে পরিত্রাণের জন্য আজকে আমাদের নেত্রী দিনরাত পরিশ্রম করছেন। এই বাস্তবতায় আমাদের কথা কম কাজ বেশি করতে হবে। উৎপাদন অরও বাড়াতে হবে– এটাই বিপ্লব, এখন উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই, মাছ ভাতটা থাকলেই তো হল। সেটা আমাদের সার্ভাইবালের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এই বিপ্লবটাই এখন করতে হবে। সেটা সকলেরই দায়িত্ব আছে, সবাই দায়িত্ব পালন করবেন।”
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপ কমিটির চেয়ারম্যান হোসেন মনসুরের সভাপতিত্বে এ সেমিনারে দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক বক্তব্য দেন।