মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নবায়ন করে ই-পাসপোর্ট নেয়ার সময় হয়েছিল সুনামগঞ্জের রবিউল লেইসের। ই-পাসপোর্ট ১০ বছর মেয়াদে নিতে চেয়েছিলেন যেন ৫ বছর পর আবার পাসপোর্টের ঝক্কিটা পোহাতে না হয়।
তবে আবেদন করতে গিয়ে আশাভঙ্গ হয় তাঁর। কারণ তাঁর বয়স ৬৫ পার হয়ে গিয়েছে এবং চাইলেও তিনি ১০ বছর মেয়াদের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
পরিবারের অন্য সব সদস্য ১০ বছরের জন্য পারলেও তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদ হয় ৫ বছর।
বিষয়টা আপত্তিকর ঠেকে তাঁর কাছে এবং এনিয়ে খুব আহত বোধ করেন তিনি।
“আমাদেরকে কেন এরকম করবে? বোঝা গেলো এর বেশি বোধহয় আর বাঁচবে না” এমন মানসিকতা থেকে কাজটি করা হয়েছে বলে ধারণা করেন মি. লেইস।
এমনকি তাঁর সাথে এলাকার ছোটভাই ১০ বছর মেয়াদে পেয়ে যান শুধু বয়স ৬৫ র একটু কম হওয়ার কারণে।
ই-পাসপোর্টের যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে। এরপর থেকে অনেককেই যেতে হয়েছে এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে।
আঠারো বছরের কম বা ৬৫ বছরের বেশি হলে ৫ বছর মেয়াদেই নিতে হবে পাসপোর্ট। তবে এর কারণ উল্লেখ বা ব্যাখ্যা নেই কোথাও।
কেন এ নিয়ম?
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরেও অনেকে পরিস্কার নন কেন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কেউ কেউ ধারণা করেন আগেকার গড় আয়ুর ধারনা থেকে এটা হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ২০১৭ সাল থেকেই ৭২ বছরের বেশি তাই সেই যুক্তি খাটে না।
আগে একটা সময় পাসপোর্টের অপব্যবহারের প্রশ্ন থাকলেও এখন সেই সুযোগ প্রায় নেই বলা যায়। তাহলে কেন নেয়া হল এমন সিদ্ধান্ত?
সরাসরি কেউ মন্তব্য করতে রাজি না হলেও অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায় যে ই-পাসপোর্টে বায়োমেট্রিকের পরিবর্তন ঘটতে পারে এমন চিন্তা থেকেই এমনটা করা হয়েছে।
অর্থাৎ বয়সের সাথে তারতম্য দেখা দিতে পারে চেহারা, চোখের আইরিস এবং আঙুলের ছাপে। এখন যেহেতু বিভিন্ন দেশে স্বয়ংক্রিয় ই-গেটের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয়, সেক্ষেত্রে তথ্য না মিললে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে সেই আশংকা থেকেই নেয়া হয়েছিল এমন সিদ্ধান্ত।
কতটা যৌক্তিক এমন নিয়ম?
কম বা বেশি বয়স, উভয় ক্ষেত্রেই বায়োমেট্রিক তথ্যের কিছুটা তারতম্য হয় বটে কিন্তু সেটা আমূল পরিবর্তন হওয়ার মতো না।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির জানান, বয়সের সাথে সাথে চামড়া কুঁচকে যায়, হাতের রেখা কিছুটা অস্পষ্ট হয়ে আসে, তাই আগের নেয়া বায়োমেট্রিক পুরোপুরি ঠিকভাবে কাজ করে না। কিন্তু সেটা অস্পষ্ট হতে পারে, রিড করতে একটু সমস্যা হতে পারে, কিন্তু পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এছাড়া বায়োমেট্রিক যাচাই করা প্রয়োজন হয় জালিয়াতির সম্ভাবনা থেকে, সেদিক থেকে এখন সবকিছু ডিজিটাল হওয়ায় খুব বড় ঝুঁকি তৈরি হওয়ার সুযোগ দেখছেন না মি. সাবির।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা আইকাও-তেও উল্লেখ নেই এমন কোনো নিয়মের। দেশভেদে ১৮ বছরের নীচে ৫ বছরের নিয়ম থাকলেও বিশেষভাবে বেশি বয়সে কম মেয়াদ দেয়ার নজির তেমন দেখা যায় না। যেমন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও নেই এমন নিয়ম।
বরং ৭০ বছর বয়সে গিয়ে দেশের পাসপোর্ট অফিসের ঝঞ্ঝাট মোকাবেলা করাটা কষ্টকর।
এ বিষয়টিকে বৈষম্য বলে উল্লেখ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা আক্তার।
তাঁর মতে যদি বায়োমেট্রিকের যুক্তিতে এমন হয়ে থাকে তাহলে সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিৎ , যাতে কেউ এটাকে বৈষম্যমূলক মনে না করে।
তবে ৬৫ বছরের উর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের ক্ষেত্রে এমন ব্যতিক্রমের সমস্যা বুঝতে পেরেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পাসপোর্ট, ভিসা ও পরিদর্শন বিষয়ক পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, “আমরা ১০ বছরে ইস্যু করার সিদ্ধান্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে একটা প্রস্তাব চেয়েছি। এটা মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত পেয়ে গেলে আমরা এটা চালু করবো।”
তবে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কবে আসবে সেটা এবং ইতোমধ্যে যাঁদের ৫ বছর মেয়াদে ই-পাসপোর্ট হয়েছে তাদের কোনো সুবিধা হবে কিনা সেটা এখনো পরিস্কার না। খবর বিবিসি বাংলার।