Loading...
The Financial Express

ফের গ্রিড বিপর্যয় কেন? বিদ্যুৎ বিভাগও অন্ধকারে


ফের গ্রিড বিপর্যয় কেন? বিদ্যুৎ বিভাগও অন্ধকারে

এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় বার গ্রিড বিপর্যয়ে দেশের বিশাল এলাকা অন্তত ছয় ঘণ্টা থাকল বিদ্যুৎহীন। দুর্গাপূজার মতো উৎসবের মধ্যে এই ধরনের বিপর্যয় জনদুর্ভোগ তুলেছিল চরমে।

দীর্ঘক্ষণ চলা জেনারেটেরের তেল ফুরোনোয় ঢাকার আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো আলোহীন হয়ে পড়েছিল, দেখা দিয়েছিল পানির সঙ্কট, টাকা তোলা যাচ্ছিল না এটিএম থেকে। বাতি না জ্বলায় ও পাখা না ঘোরায় হাসপাতালের রোগীদের কষ্ট বেড়েছিল। বাতি না থাকায় সড়কও হয়ে উঠেছিল অন্ধকার।

কী কারণে কোথায় বিদ্যুতের জাতীয় সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল, যোগাযোগ করেও বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দিলে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ দেশের বিশাল এলাকা ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল।

তার ২৩ দিন পর মঙ্গলবার মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৪ মিনিটের সময় সঞ্চালন লাইন আবার অকার্যকর হয়ে পড়লে জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলের (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ) বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্ন্ধ হয়ে যায়।

এরে পর থেকেই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজের ফেইসবুক পাতায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার খবর দিচ্ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে আসার খবর দেন।

রাত ৮টার দিকে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ অঞ্চল এবং ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জের আংশিক এলাকায় সরবরাহ চালু হওয়ার কথা জানান। রাত ১০টার দিকে ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে আসার খবর পাওয়া যায়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক পাতায় রাত সোয়া ১০টার দিকে জানান হয়, রাত ৯টার দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮ হাজার ৪৩১ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। ক্রমান্বয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ চলছে।

জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলের বড় উৎপাদন কেন্দ্রগুলো (ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, মেঘনাঘাট, হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ) চালু করে ধীরে ধীরে সরবরাহ স্বাভাবিক করা হচ্ছে জানিয়ে বলা হয়, ঢাকায় ২৩০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ১৭৫০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা গেছে।

কী ঘটেছিল?

কী কারণে কোথায় সঞ্চালন লাইনে জটিলতা দেখা দিয়েছিল, বিপর্যয়ের পর থেকে পিজিসিবি, পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা জানা যায়নি।

বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এধরনের সমস্যা হয়েছে। এক এলাকায় সমস্যা হলে সেটা অন্য এলাকাকেও আক্রান্ত করে। তবে আজকের ক্ষেত্রে কোথায় কী হয়েছে, তা আমরা এখনও বুঝতে পারিনি।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একই কথা বলেন।

 জাতীয় গ্রিড লাইন বিপর্যয়ের কোনো কারণ রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। এটা নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা ও তদন্ত করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। বিভিন্ন কারণে গ্রিড বিপর্যয় হতে পারে। আমরা এখনও স্মার্ট গ্রিড চালু করতে পারিনি বিধায় কোথায় সমস্যা হয়েছে সেটা বলতে পারি না।

রাতে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে কী ঘটেছে, সেটা আমরা এখনও বুঝতে পারিনি।

তিনি বলেন, “আমরা এখন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল করার দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। যে কোনো যান্ত্রিক ব্যবস্থায় যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো কাজেরই অংশ। আজকে আসলে কী ঘটেছে, কীভাবে ঘটেছে, সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না।

 আমরা প্রাথমিকভাবে ঘোড়াশালে একটা লোকেশন আইডেন্টিফাই করেছি। কিন্তু আসলে কী ঘটেছে, সেটা গভীর তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ উদ্ঘাটনে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে মন্ত্রণাল জানিয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকেও আরও দুটি কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান হয়েছে।

বিদ্যুৎ সচিব বলেন, “এধরনের ঘটনার সঠিক কারণ বিশ্লেষণ করতে ইন্টারনাল এবং এক্সটার্নাল তদন্ত কমিটি করা হবে।

কেন বার বার?

২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। গত আট বছরে ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও গ্রিড বিপর্যয় হয়েছে।

গত ৭ সেপ্টেম্বরে যে কয়েক ঘণ্টার জন্য গ্রিড বিপর্যয় হয়, তার সুনির্দিষ্ট কারণ ও স্থান নির্ণয় করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।

বার বার কেন এই ধরনের বিপর্যয় হয়- জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সঞ্চালন লাইনে মাঝে মধ্যেই ছোটখাটো সমস্যা হয় এবং সেটা হতে পারেও। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এধরনের ঘটনা ঘটছে। এটা ঠেকানোর জন্য আধুনিকায়ন করতে হবে। তখন প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। যান্ত্রিক ত্রুটি কমে যাবে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন কারণে গ্রিড বিপর্যয় হতে পারে। যখন কোনো গ্রিড বিপর্যয় ঘটে, সঙ্গে সঙ্গেই কারণ বলা যায় না। সবগুলো ‘ফ্যাক্টরবিশ্লেষণ করে একটা কাছাকাছি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়।

 যেমন ২০১৪ সালে যখন একবার গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল, তখন আমরা দেখেছি যে নরসিংদীর ঘোড়াশাল থেকে ভেড়ামারা পয়েন্টের কোনো একটা জায়গায় সমস্যা হয়েছে। কিন্তু কোথায় হয়েছে, সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। লোকালয়ে যখন কোনো গ্রিড ফেইল করে, তখন দেখা যায় কোথাও হয়ত একটা বাজপাখি পড়েছে। অথবা কোথাও কোনো কারণে বড় ধরনের ভাইব্রেশন হয়েছে, একটা লাইন আরেকটা লাইনের কাছাকাছি এসে শর্ট হয়ে গেছে।

 আমরা এখনও স্মার্ট গ্রিড চালু করতে পারিনি বিধায় কোথায় সমস্যা হয়েছে সেটা বলতে পারি না,” বলেন তিনি।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বিভিন্ন বক্তব্যে গ্রিড পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও অটোমেশন এবং স্মার্ট গ্রিডের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে থাকেন।

তবে বাংলাদেশে সেই ব্যবস্থা এখনও চালু না হওয়ায় বিপর্যয়ের পূর্বাভাস কিংবা কারণ উদঘাটন সম্ভব হচ্ছে না বলে বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অটোমেশনের জন্য কাজ করছি। অটোমেশনের মাধ্যমে স্মার্ট গ্রিড চালু করা গেলে এধরনের বিপর্যয়ের উৎসস্থল সাথে সাথে চিহ্নিত করা যায়।

 এখন স্মার্ট গ্রিড চালু করার যে কাজ চলছে তা আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে শেষ হবে। তখন কোথাও লাইন ট্রিপ করলে কোথায় হলো, কীভাবে হল, আমরা বলতে পারব। কোথাও কোনো অসুবিধা হলে কেন্দ্রীয়ভাবে সতর্ক বার্তা পাওয়া যাবে।

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর ছয় ঘণ্টা হাসপাতাল, বাসা-বাড়ি, ফিলিং স্টেশন, মোবাইল সেবা, এটিএম সেবা, পূজামণ্ডপ ও রাস্তাঘাটে স্বাভাবিক জনজীবন হয় বিঘ্নিত।

বিদ্যুৎ নেই বলে মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘরে আলো রাখতে পারলেও পানির অভাবে ভুগতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে।

পানি-বিদ্যুতের সঙ্কটে নিজের পাশাপাশি শিশুদের নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠার কথা জানান মিরপুর-১ এ সি-ব্লকের গৃহবধূ হীরা আক্তার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে সময়টাতে বিদ্যুৎ গেছে, সেটা সাধারণত আমাদের সবার গোসলের সময়। আবার সে সময় বাচ্চারাও স্কুল থেকে ফেরে। বিদ্যুৎ যাওয়ার আধা ঘণ্টা পরেই আমাদের বাসার পানি চলে গেছে। আমাদের একজন বাথরুমে গিয়ে গোসল শেষ করতে পারেনি। বাচ্চারা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কান্নাকাটি করছে। তাদেরকে কোনোভাবে শান্ত রাখা যাচ্ছে না। কী বলব ভাই, দুর্ভোগের তো শেষ নাই!”

ফার্মগেইটের এক বেসরকারি হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, “দুপুরে খেতে বসছি, হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেছে। আমার রুম আগুন হয়ে আছে গরমে। হোস্টেলে খাবার পানি নাই। আর তার চেয়েও বড় সমস্যা হলো, আমার বাসায় ইন্টারনেট কানেকশন নাই। মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়িতে আম্মুর সাথে কথা বলতে পারছি না।

ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার মোবাইল ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, তারা মোবাইলে কল, এসএমএস ও ইন্টারনেট সংযোগ পেতে সমস্যায় পড়েন।

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের বাসিন্দা আরাফাত হোসেন জানান, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর থেকেই তিনি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন।।

কল করছি, কিন্তু কথা শুনতে পাচ্ছি না। এসএমএসও পাঠাতে পারছি না। খুবই ঝামেলায় পড়েছি।

এ সমস্যার সমাধানে বিদ্যুৎ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন- বিটিআরসি।

সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোবাইল অপারেটরদের কিছুটা সমস্যা হয় বলে আমরা শুনেছি। সব মোবাইল অপারেটরের ব্যাকআপ তো সমান না। তাই এ সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব এই সাময়িক দুর্ভোগের কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছে।

ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে জেনারেটর দিয়ে অতিজরুরি সেবা চালু রাখা গেলেও ওয়ার্ডগুলোতে থাকা রোগীদের ভুগতে হয়েছে আলো না থাকায় এবং পাখা না চলায়।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জেনারেটর দিয়ে জরুরি বিভাগ, অস্ত্রোপচার কক্ষ, আইসিইউতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

আর ওয়ার্ডে রোগীদের অনেকে মোবাইলে, মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করেছেন। হাতপাখা, কাগজ দিয়ে বাতাস খাওয়ার চেষ্টা করছেন।

২০/২১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি এক শিশুর মা মরিয়ম বলেন, “ছেলে অসুস্থ্, এরমধ্যে কারেন্ট নাই। এমন গরম যে সে সিটের ওপরে থাকতে চায় না। এজন্য নিচে নামায়া বাতাস দিতাছি।

ঢাকার মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ওয়ার্ড হয়ে পড়ে বিদ্যুৎহীন, বাড়ে রোগীদের দুর্ভোগ |ছবি: ওবায়দুর মাসুম

পাশের ওয়ার্ডের একজন রোগীর স্বজন সাঈদা বেগম জানান, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর হাসপাতালের বাথরুমের সব বাতি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাথরুম ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে একজন রোগীর স্বজন সাব্বির বলেন, “রোগীর বেডের ওপর যে পাখা সেটা বন্ধ। এমনিতেই গরমের সময়, কারেন্ট না থাকলে অসুস্থ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।

বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বিপর্যয়ে পড়ে ব্যাংকের কার্ড সেবায়ও। বেলা ২টার পর বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো জেনারেটর দিয়ে কার্যক্রম চালাতে শুরু করে। কিন্তু এটিএম বুথগুলোর অনেকগুলোতে জেনারেটর ও ইউপিএস সুবিধা না থাকায় কার্ড সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

মহাখালী-গুলশান সংযোগ সড়কে থাকা ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ ও নগদ টাকা জমা নেওয়ার সিআরএম (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) সেবা সন্ধ্যায় বন্ধ ছিল।

এসময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় টাকা তুলতে পারছেন না কেউ।

ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন চললেও তেল ফুরিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ঢাকার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য ভিড় লেগে যায়।

 

বিকাল থেকেই লোকজন কনটেইনার নিয়ে তেলের জন্য বিভিন্ন পাম্পে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। সন্ধ্যায় মহাখালীর ক্রিসেন্ট পেট্রোল পাম্পে খালি কনটেইনার ও ড্রাম নিয়ে লোকজনকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ডিজেলের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।

ক্রিসেন্ট ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার আরিফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গ্রিড বিপর্যয়ের পর ডিজেলের চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে যায়।

গুলশান সার্ভিস স্টেশনের ক্যাশিয়ার কবির হোসেন বলেন, “সবাই জেনারেটরের জন্য ডিজেল নিতে এসেছে। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার লিটার যায়। কিন্তু আজ দুপুরের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি লিটার চলে গেছে।

সায়েদাবাদের কাছে পেট্রোল পাম্প সন্ধ্যা ৭টার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান সিএনজি অটোরিকশাচালক হাফিজ উদ্দিন।

দীর্ঘসময় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার পর মোমবাতির কদর বেড়ে গিয়েছিল ঢাকায়। কোথাও কোথাও সাধারণ মুদির দোকানে বিকালের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল মোমবাতি। সন্ধ্যার পরে ১০ টাকার মোমবাতি দ্বিগুণ-তিন গুণ দামে বিক্রি হয়।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে গ্রিন রোডের একটি মুদি দোকানে ১০ টাকার মোমবাতি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল বলে জানান সুলতানা নামে একজন।

রামপুরায় বাসায় ফেরার সময় নিজ বাসা সংলগ্ন দোকানে মোমবাতি পায় অনেকে।

হাজীপাড়া এলাকার মুদি দোকানি আব্বাস আলী বলন, “আমার দোকানে বিকালের মধ্যে শেষ হয়েছে মোমবাতি। পরে অনেকে এসেছে, কাউকে দিতে পারিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এষা ইসলাম সন্ধ্যা ৭টার পরে দোকানে গিয়েছিলেন মোমবাতি কিনতে। প্রথম দোকানে দাম হাঁকে ৩০ টাকা। কিন্তু এষা ১০ টাকার মোমবাতি তিন গুণ দামে কিনবেন না বলে পাশের দোকানে যান। সেই দোকানে মাত্র ২টি মোমবাতি ছিল। তারপর তিনি ৫ টাকা দামের ২টি মোমবাতি ১০ টাকা করে কিনে আনেন।

রাস্তাঘাট অন্ধকার, পূজামণ্ডপও

গ্রিড বিপর্যয়ের সময়ে ঢাকার মতিঝিল, মালিবাগ, হাতিরঝিল, পুলিশ প্লাজা, গুলশান এভিনিউ, ফার্মগেট, মিরপুরসহ অনেক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যার পর পরই রাস্তাঘাট অন্ধকার হয়ে পড়ে। অলিগলিতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছিল।

এসময় সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।অন্ধকারের মধ্যে গাড়ির হেডলাইটের আলো চোখে পড়ে। শপিং মলের কিছু দোকানপাট জেনারেটর চালিয়ে খোলা রাখে। তবে আশপাশের অধিকাংশ দোকানপাট সন্ধ্যার পরপরই বন্ধ হয়ে যায়।

বিকাল থেকে রাজধানীর পূজা মণ্ডপগুলোর বেশ কয়েকটিতে জেনারেটরের মাধ্যমে পূজার কাজ চলে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকার কয়েকটি মণ্ডপে আলোর ব্যবস্থা ছিল না। ফলে সেসব মণ্ডপের সামনে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল না।

প্রায় অন্ধকার হয়ে পড়ায় ঢাকা মহানগরীতে পলিশকে বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর থেকে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে, বিশেষ করে পূজামণ্ডপগুলোয় বাড়তি সতর্কতার নির্দশ দেওয়া হয়।

Share if you like

Filter By Topic