মাথার উপরে সেই একই আকাশ আর পায়ের নীচে অখন্ড ধূসর জমিন থাকা সত্ত্বেও ফিলিপাইনকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খানিকটা আলাদা বলা হয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে ফিলিপাইনকে একটি উন্নতশীল দেশ বলা চলে কিন্তু প্রকৃতি যেনো ঢেলে সাজিয়ে ৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটারের এই ভূ-খন্ডটিকে।
যে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ফিলিপাইনকে ‘আলাদা’ করে পরিচিত করেছে, সেগুলো সম্পর্কে না জানলে পুরো দেশটি সম্পর্কে জানা অপূর্ণ থেকে যায়।
ভূমিরূপ
ভূমিরূপের উপর নির্ভর করে কোনো দেশকে হাজার পাহাড়ের দেশ বলা হয় তো আবার কোনো দেশকে বলা হয় সমতল ভূমির দেশ। কিন্তু ফিলিপাইনকে এরকম সুনির্দিষ্ট কোনো নাম দেওয়া সম্ভব নয়। কারণে এদেশের ভূমিরূপেও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য।
দ্বীপ
ভিস্যায়্যাস, মিন্দান্যাও, লুসোনসহ এরকম বড় বড় অনেকগুলো দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে)
সমতল ভূমি
এদেশের সবচেয়ে বড় সমতল ভূমি রয়েছে সেন্ট্রাল লুসোনে, সেন্ট্রাল লুসোনকে দেশটির ‘শস্য ভান্ডার’ বলা হয়।
উপত্যকা
বহু উপত্যকা রয়েছে যার মধ্যে ক্যাজায়ান উপত্যকা সবচেয়ে বড়।
মালভূমি
মাউন্ট প্রভিন্স, ইফুগ্যাও এই পাহাড়গুলোতে রয়েছে দেশটির বড় বড় মালভূমিগুলো।
পর্বতশ্রেণী
ফিলিপাইনে প্রচুর পরিমাণে পর্বতশ্রেণী রয়েছে এবং এই পর্বতশ্রেণীগুলো টাইফুন বা এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকেই যে শুধু দেশটিকে রক্ষা করছে তা কিন্তু নয়; ইফুগ্যাও নামের এক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
পর্বত
ছোট-বড় অনেক পর্বত রয়েছে। ফিলিপাইনের সবচেয়ে পর্বতের নাম মাউন্ট অ্যাপো।
আগ্নেয়গিরি
এদেশে অনেক সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যেমন-ম্যাওন, ডিডিকাস, বুলুসান।
পাহাড়
চকোলেট হিল হচ্ছে ফিলিপাইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় পাহাড়।
সমুদ্র সৈকত
সমুদ্র সৈকতে বসে পড়ন্ত বিকেলে ঐ দূর সাগরের বুকে সূর্যের অবগাহন দেখতে বা সমুদ্র স্নানে যেতে চাইলে আমাদের দেশে বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ কক্সবাজারে ছুটে আসেন। কিন্তু ফিলিপাইনের মানচিত্রটা এমন যে সেখানে প্রতিটি শহরে শহরে রয়েছে একেকটি করে সমুদ্র সৈকত। ক্যানিগাও আইল্যান্ড, ক্যালাগাস গ্রুপ অব আইল্যান্ডস, সুমিলন আইল্যান্ড, প্যালাওয়ান আইল্যান্ডসহ আরো অনেক দ্বীপ রয়েছে এই দেশটিতে।
ডাইভিং স্পট
এখানে যেকোনো সমুদ্রে ডাইভ করার অনুমতি রয়েছে এবং সেটা অবশ্যই সবার সাধ্যের মধ্যে। সমুদ্র সৈকতে গেলেই দেখা মিলবে বেশকিছু দোকানের যেখানে কীভাবে ডাইভ করতে হবে সে ব্যাপারে পুরো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
ইতিহাসের সাক্ষী
অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঔপনিবেশিক শাসক, যেমন-স্প্যানিয়ার্ড, আমেরিকান বা জাপানিজরা এই ভূ-খন্ডটিকে শাসন করেছিল। শহরের বিভিন্ন জায়গায় আজও তার স্মৃতিচিহ্ন রয়ে গেছে যা গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী।
অদ্ভুত বাহন
ফিলিপাইনের বহুল ব্যবহৃত গণপরিবহণের নাম জিপনেস। এটিকে জিপ বা মিনিবাসও বলা যেতে পারে। জিপনেসকে অবশ্য ‘কিং অফ দ্য রোডও’ বলা হয়। এর আকৃতি, গঠন ও রং বাহারী সজ্জার কারণে এমন নামকরণ করা হয়েছে। গণপরিবহন বলতে যেরূপ দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠে তা থেকে অনেকটাই ভিন্ন এই বাহন।
মৃত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান জানানোর প্রথা
এক্ষেত্রেও খানিকটা ভিন্নতা রয়েছে। ফিলিপাইনরা যারা ক্যাথোলিসজমে বিশ্বাসী, তারা নিকট ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য মারা যাওয়ার পর থেকে টানা নয়দিন পর্যন্ত কোনো একটি ক্যাথলিক চার্চে প্রার্থনা করতে থাকে।
মারা যাওয়ার ৪০ দিন পর আবারো প্রার্থনা অনুষ্ঠান হয়। শুধু তাই নয় প্রতি বছর ঐ দিনে তারা বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেয় এবং পরিবারের লোকজন কালো কাপড় বা ব্যাচ পরিধান করে। এই ধরনের প্রার্থনায় প্রচুর লোকের সমাগম হয়।
উৎসবের মেলা
ফিলিপাইন এমন একটি দেশ যেখানে প্রতি মাসে কোনো না উৎসব রয়েছেই এবং সেগুলো খুব জাঁকজমকভাবে পালন করা হয়।
বাস্কেটবল খেলা
বাস্কেটবল খেলা ফিলিপাইনের জাতীয় খেলা নয় কিন্তু দেশের মানুষের কাছে এই খেলা এতোটাই জনপ্রিয় যে শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য বাস্কেটবল কোর্ট যেখানে সবাই খেলতে পারে।
বাস্কেটবল খেলার প্রতি ফিলিপাইনদের এমন ঝোঁকের উপর ভিত্তি করে একসময় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিল।
ক্রিসমাস উদযাপন
বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এতো দীর্ঘসময় যাবত ক্রিসমাস উদযাপন করা হয় না। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু করে ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত এই দিবস উদযাপন করা হয়।
শবনম জাবীন চৌধুরী ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।