বুয়েট ফারদিন নূর পরশ আত্মহত্যা করেছেন, এমন উপসংহারে পৌঁছনোর কথা জানানোর প্রায় দুই মাস পর তার বাবার করা হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
সোমবার বিকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তিনি জানান, “স্পেনে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার বিমান ভাড়া সংগ্রহ করতে না পারা, ছোট দুই ভাইকে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ জোগানোয় সংগ্রাম করতে হওয়াসহ নানা কারণে হতাশা থেকে তিনি (ফারদিন) আত্মহত্যা করেন বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।”
সাক্ষী হিসাবে মোট ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের আলামত না পাওয়ার কথা জানিয়ে এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে উঠবে ডিবির এই প্রতিবেদন।
এদিকে আত্মহত্যার কথাটিকে ‘আষাঢ়ে গল্প’ আখ্যায়িত করে আসা ফারদিনের বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানা এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আমি (আদালতে) নারাজি দেব।”
নুরউদ্দিন রানার করা হত্যা মামলায় আসামির তালিকায় শুধু ফারদিনের বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরার নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়ে বেশ কিছুদিন কারাগারে থাকার পর গত ১০ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান।
আসামির তালিকায় থাকা বুশরাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনও করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা ইয়াসিন শিকদার।
বুয়েটের পুরকৌশলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন (২৪) বিতার্কিক ছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে স্পেনের এক অনুষ্ঠানে তার যাওয়ার কথা ছিল।
তার এক মাস আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন ফারদিন। বাবা-মার বড় ছেলে ফারদিন কোনাপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
ফারদিন বেরিয়ে যাওয়ার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন, পরদিন তার পরীক্ষা রয়েছে বলে রাতে বুয়েটের হলেই থাকবেন। পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরবেন।
কিন্তু পরদিন পরীক্ষায় তার অনুপস্থিত থাকার খবর জেনে খোঁজাখুজি করেও ছেলেকে না পেয়ে থানায় জিডি করেন সাংবাদিক নূরউদ্দিন রানা।
তিন দিন পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ফারদিনের লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসক হত্যার আলামত পাওয়ার কথা বলেছিলেন।
এরপর ১০ নভেম্বর নূরউদ্দিন রানা হত্যামামলা করেন। তাতে আসামি করেন বুশরাকে, যার সঙ্গে ফারদিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত ছিলেন। তখন পুলিশ বুশাকে গ্রেপ্তার করে, হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে।
এদিকে ফারদিনের হত্যামামলার তদন্তে অগ্রগতি না দেখে বুয়েট শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে নামে। তদন্তের গতিতে হতাশা প্রকাশ করে ফারদিনের পরিবারও।
রামপুরা থানায় মামলার পর থানা পুলিশই প্রথমে মামলার তদন্ত শুরু করেছিল, পরে সেই ভার দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে। অন্যদিকে র্যাবও নামে ছায়া তদন্তে।
সেই রাতে ফারদিনের মোবাইল ফোনের অবস্থান শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে চনপাড়ায় চিহ্নিত হওয়ার পর মাদক সংক্রান্ত নানা গুঞ্জনও ছড়িয়েছিল।
তবে শেষ পর্যন্ত লাশ উদ্ধারের ৪০ দিন পর গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ডিবি ও র্যাব উভয়ই একই উপসংহারে আসার কথা জানায়। উভয় বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, নিখোঁজ হওয়ার রাতেই ফারদিন ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।
সেই কথা জানানোর ৫২ দিন পর সোমবার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করল ডিবি।
এখন আদালতে এই প্রতিবেদন গৃহীত হলে এই হত্যা মামলাটির পরিসমাপ্তি ঘটবে। আর যদি ফারদিনের বাবা নারাজি আবেদন করেন, তখন আদালতের পরবর্তী আদেশের উপর নির্ভর করবে মামলার ভবিষ্যৎ।