পড়াশোনার পদ্ধতি হোক ফলপ্রদ


ফারজানা জামান | Published: January 27, 2023 16:18:34 | Updated: January 28, 2023 15:55:30


ছবিসূত্র: উইকিমিডিয়া কমনস

গতানুগতিক মুখস্তবিদ্যা যেন বিদ্যার সঠিক অনুধাবনকে অনেকটা গ্রাসই করে ফেলে। তবে মুখস্তবিদ্যাই যেন আজকাল পড়াশোনা করার সবচেয়ে বেশি চর্চিত অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়াশোনা আরো আকর্ষণীয় করে তোলার কিছু অন্যান্য অভ্যাসও কিন্তু রয়েছে, সাধারণ জানাশোনার অনেকটা আড়ালেই যেন রয়ে যায় সেসব পন্থা।

দ্যা ফেম্যান টেকনিক

নোবেল জয়ী পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফেম্যান, তিনি পদার্থবিজ্ঞানকে আয়ত্ত করতেন নিজস্ব পদ্ধতিতে। না বুঝে নিছক মুখস্ত করে যাওয়ার বিপক্ষে ছিলেন তিনি।

ফেম্যান যে উপায়ে পড়ালেখাকে আরও কার্যকরী করে তোলার চেষ্টা করতেন সেখান থেকেই জন্ম হয়েছে দ্যা ফেম্যান টেকনিক এর। পদ্ধতিটি ৪ টি পর্যায়ে বিভক্ত,

প্রথম ধাপে শিখতে চান এমন একটি প্রসঙ্গ বা অধ্যায় বেছে নিতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপে সেটি নিজেকে অথবা অন্যকে বোঝাতে হবে। নিজে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন কি না সেটি জানতে খাতায় নোট করা যেতে পারে।

বোঝাতে গিয়ে যদি কোথাও আটকে যান তাহলে তৃতীয় ধাপে পুনরায় প্রসঙ্গটি বই বা খাতা থেকে কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে সেটি শুধরে নিতে হবে।

চতুর্থ ধাপে নিজের ব্যাখ্যাগুলো খুব সহজ ভাবে উপস্থাপন এবং এনালজি তৈরি করতে হবে। নিজের কাছে যতক্ষণ না বিষয়টি স্পষ্ট হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যাখ্যা করতে হবে।

ফেম্যান টেকনিক এর মূল কথা হচ্ছে পড়াশোনাকে যেন বুঝে আয়ত্তের মধ্যে আনা হয়। সেটি না করলে কোনো পড়াই কাজে লাগবেনা।

এসকিউথ্রিআর পদ্ধতি

এসকিউথ্রিআর হচ্ছে বুঝে বুঝে পড়ার এমন একটি কৌশল যেটি শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শনাক্ত ও মনে রাখতে সাহায্য করে। এটি একটি সংক্ষিপ্ত রূপ, যা পড়ালেখা বোধগম্যতার প্রক্রিয়ার পাঁচটি ধাপকে উপস্থাপন করে।

সেই পাঁচটি ধাপ হচ্ছে,

সার্ভে - পুরো বইটি একবারে পড়ে ফেলার পরিবর্তে যেকোনো অধ্যায় বেছে নিয়ে সেখান থেকে পড়া শুরু করতে হবে। সেখান থেকে শিরোনাম, উপ-শিরোনাম, চিত্র বা চার্ট থেকে গুরুত্বপূর্ণ নোট সংগ্রহ করতে হবে।

কোয়েশ্চান - এরপর অধ্যায়ের বিষয়বস্তু থেকে প্রশ্ন তৈরি করতে হবে। যেমন : অধ্যায়টিতে কী সম্পর্কে লিখা হয়েছে বা অধ্যায়টি সম্পর্কে আমি কী কী জানি?

রিড - পরবর্তী পর্যায়ে পুরো অধ্যায়টি ভালো করে পড়ে নিতে হবে এবং নিজের বানানো প্রশ্নের উত্তর সেখান থেকে খুঁজে বের করতে হবে।

রিসাইট - এক একটি ভাগ পড়ার পর নিজস্ব ভাষায় সেটির সারমর্ম তৈরি করতে হবে। অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো পুনরায় স্মরণ ও চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাতে হবে এ পর্যায়ে। আবার এটাও দেখতে হবে যে দ্বিতীয় ধাপে যে প্রশ্নসমূহ তৈরি করা হয়েছিলো সেগুলোর উত্তর মনে আছে কি না।

রিভিউ - সর্বশেষ পর্যায়ে অধ্যায়টি পুরোপুরি আয়ত্তে এসেছে কি না সেটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সে জন্য পূর্বে তৈরিকৃত প্রশ্নগুলো থেকে নিজের উপর কুইজ প্রক্রিয়ার প্র‍্যোগ  করতে হবে এবং দরকার বোধ হলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ আবার ঝালাই করে নিতে হবে।

ব্লার্টিং পদ্ধতি

ইদানীং কালে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন: ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম ও টিকটকে পড়া রিভিশন দেওয়ার জন্য  একটি পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই পদ্ধতিটির নাম ই হচ্ছে ব্লার্টিং।

এটি কোনো কঠিন টেকনিক নয়। একটি বিষয় বেছে নিয়ে সেটি মুখস্ত করে খাতায় লিখে ফেলতে হবে। এরপর দেখতে হবে  বইয়ের সাথে সম্পূর্ণ  সাদৃশ্য রয়েছে কি না।

যদি দেখা যায় লিখার মধ্যে ভুল রয়েছে বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য বাদ রয়ে গেছে সেক্ষেত্রে পুনরায় বই বা গাইড বই থেকে তথ্যগুলো মুখস্ত করে ফেলতে হবে। এতে করে মস্তিষ্কে তথ্যগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য সঞ্চিত হয়ে যাবে।

আনজেডেড জেড নামক ইউটিউব কন্টেন্ট নির্মাতার হাত ধরেই বর্তমানে এই ব্লার্টিং পদ্ধতিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি তার জিএসসিই ও এ-লেভেল এর পরীক্ষাকালীন সময়ে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেন।

স্পেসড প্র‍্যাক্টিস

এই পদ্ধতিটি পরীক্ষার আগের রাতে সব একসাথে না পড়ে দীর্ঘ সময় ধরে নতুন নতুন বিষয় পড়ার জন্য উৎসাহিত করে। কারণ মস্তিষ্কে অনেকসময় একসাথে অনেক তথ্য গ্রহণ করে সেগুলো মনে রাখতে পারেনা। যার ফলে দেখা যায় পরীক্ষার হলে লিখার সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো মস্তিষ্কে ভুলে গেছে।

এই সমস্যা এড়াতেই স্পেসড প্র‍্যাক্টিস পদ্ধতিটি তৈরি করা হয়েছে। এটিকে ডিসট্রিবিউটেড প্র‍্যাক্টিস হিসেবেও সম্বোধন করা হয়।

এই প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সময় ধরে পড়া মনে রাখার উদ্দেশ্যে একটি সময়তালিকা অনুসরণ করা হয়৷ যেমন:

প্রথম দিন : ক্লাস থেকে কোনো বিষয় বা আধেয় শিখতে হবে

দ্বিতীয় দিন : পুনরায় দেখা ও পর্যালোচনা করা।

তৃতীয় দিন : আবার দেখা ও পর্যালোচনা করা।

এক সপ্তাহ পর: পুরোনো তথ্য আবার দেখা ও পর্যালোচনা করা।

দুই সপ্তাহ পর: একই কাজ করা।

এভাবে করে রিভিশন দিতে থাকলে মুখস্ত করতে চাওয়া তথ্যগুলো ভালোভাবে স্মৃতিবদ্ধ হয়ে যাবে৷ সেই জন্য হাতে সময় রেখে সিমেস্টার এর শুরুতে স্পেসড প্র‍্যাক্টিস পদ্ধতিটি  প্রয়োগ করতে হবে।

ফারজানা জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

farjanazaman305@gmail.com

Share if you like