মস্কো ইউক্রেইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন থেকে নিজেদের বাহিনী প্রত্যাহারে বাধ্য হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই দেশটিতে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তারমধ্যেই পোল্যান্ডে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বলে খবর আসে।
পোল্যান্ডে নেটোভুক্ত দেশ। নেটোর নীতি অনুযায়ী তাদের সদস্য কোনো দেশের ওপর হামলা হলে প্রতিরক্ষা জোটটির সব দেশের ওপর হামলা হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে, তাই পোল্যান্ডের সীমান্ত অঞ্চলের একটি গ্রামে পড়া ওই দুটি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণে দু’জনের নিহত হওয়া নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
পোল্যান্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেইন সীমান্তবর্তী পোল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রাম সেবোদুফে ‘রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র’আঘাত হেনেছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
প্রাথমিক প্রতিবেদনগুলোতে এ বিস্ফোরণের জন্য রাশিয়া দায়ী হতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু রাশিয়া এ হামলার দায় অস্বীকার করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, “যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার উস্কানি তৈরির লক্ষ্যে সচেতনভাবে এ অভিযোগ করা হচ্ছে।”
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভও জানান, পোল্যান্ডের বিস্ফোরণের বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তি বলেছে, পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ইউক্রেইনই দায়ী।
কিন্তু ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ‘হামলার জন্য ইউক্রেইন দায়ী’, এমন যে কোনো দাবিকে রাশিয়ার ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বলে অভিহিত করেছেন এবং অনেকে রাশিয়ার এ ‘প্রপাগান্ডা’ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দজেই ডুডা সাংবাদিকদের জানান, কীভাবে বিস্ফোরণটি ঘটেছে তা পরিষ্কার হয়নি এবং তদন্তকারীরা সম্ভাব্য সবকিছু খতিয়ে দেখছে।
“কারা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এই মুহূর্তে তার কোনো অকাট্য প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্ভবত রাশিয়ার তৈরি, কিন্তু এর সবকিছুই এখনও তদন্তাধীন,” বলেছেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার সকালে বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘সম্ভবত’ রাশিয়া থেকে ছোড়া হয়নি। প্রাথমিক যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে ‘তা রাশিয়া থেকে ছোড়া ধারণার বিপরীত’ বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার তীব্র ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে পোল্যান্ডে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার পর তা নিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে তিন জন মার্কিন কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, মঙ্গলবার ইউক্রেইনের বৈদ্যুতিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাশিয়া ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে একটিকে ধ্বংস করতে ইউক্রেইনীয় বাহিনীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রই পোল্যান্ডে গিয়ে পড়েছে বলে প্রাথমিক মূল্যায়নে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
বিবিসির সংবাদাতা জানিয়েছেন, এ ঘটনার সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা হতে পারে।
তিনি বলেন, পোল্যান্ডের কৃষি খামারকে লক্ষ্যস্থল করার কোনো আগ্রহ রাশিয়ার নেই, তাই কোনো ত্রুটি হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। আবার ওই দিন ইউক্রেইনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী রাশিয়ার হামলা ঠেকানোর জন্য কঠিন পরিশ্রম করছিল, তাদের ছোড়া একটি বা দুটি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পোল্যান্ডে গিয়ে পড়তে পারে।
ইউক্রেইনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাশিয়া ইউক্রেইনের বিভিন্ন জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ৯০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে আর সেগুলোর মধ্যে ৭০টিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে তারা।