গোলাপবাগে সমাবেশ করার পর বিএনপিকর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে, তেমনটাই আশা করছে পুলিশ।
তা না করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে দমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বিএনপির বহুল আলোচিত এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতেও চলছে তল্লাশি।
শনিবার সকাল ১১টায় সায়েদাবাদের কাছে গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়। তার আগে রাত থেকেই বিএনপিকর্মীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করে।
বিএনপি এই সমাবেশটি নয়া পল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সেখানে তাদের অনুমতি দেয়নি।
এর মধ্যে নয়া পল্টনে জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীদের উপর বুধবার চড়াও হয় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহত হন একজন। এরপর পুলিশ কার্যালয়ে ঢুকে বিএনপির কয়েকশ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে, পরে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে।
এরপর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে গোলাপবাগে সমাবেশের অনুমতি পায় পুলিশ। সমাবেশ গোলাপবাগে হলেও নয়া পল্টনেও পুলিশ পাহারা বসিয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে থাকা ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব সরকার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশা করি, সমাবেশ শেষ করে তারা (বিএনপি) শান্তিপূর্ণভাবে, স্বাভাবিকভাবে চলে যাবে।
“কিন্তু যদি নাশকতার চেষ্টা করে, সরকারি এবং পাবলিক সম্পত্তি ভাঙচুরের চেষ্টা করে বা অন্য কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাহলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।”
বুধবার বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানে বিপ্লবও ছিলেন। বিএনপির অভিযোগ, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে বিনা উসকানিতে তাদের উপর হামলা চালায় এবং কার্যালয়ে ঢুকে অভিযান চালায়।
পুলিশের অভিযোগ ছিল, বিএনপি সমাবেশের নামে নয়া পল্টনে স্থায়ীভাবে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করেছিল।
নাশকতার আশঙ্কার সন্দেহের বিষয়ে ডিএমপি কর্মকর্তা বিপ্লব বলেন, “আপনারা দেখেছেন, পুলিশ সদস্যদের উপর লক্ষ্য করে আঘাত করা হয়েছিল, ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল।”
সেজন্যই সারা ঢাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানমালের ক্ষতির যে কোনো চেষ্টা প্রতিরোধ করতে।
যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছে তাদেরও যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে বলেও বিপ্লব সরকার জানান।
রাজধানীতে কত সংখ্যক পুলিশ এখন মোতায়েন আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে। নয়াপল্টন এলাকায় তিন-চারশ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।”
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে কি না- জনতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সেটা বলিনি। আমরা বলেছি, আমরা সতর্কাবস্থায় আছি। সমাবেশ যারা করছে তারা সমাবেশ করবে।”
শুক্রবারের পর শনিবারও ঢাকায় যান চলাচল একেবারেই কম। খুব অল্প সংখ্যক বাস দেখা গেছে রাস্তায়।
যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা আছে কি না- জানতে চাইলে বিপল্ব সরকার বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধের বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।
নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে। ভেতরে একজন নিরাপত্তাকর্মীকে দেখা গেল। তবে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।
নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়ক পুলিশ বন্ধ করেই রেখেছে। তল্লাশি ছাড়া কাউকে সেদিন দিয়ে যেতে দিচ্ছে না পুলিশ।
মধ্য বয়সী একজন পথচারী সড়কে ব্যারিকেড দেখে বলেন, “সমাবেশ তো গোলাপবাগে, তাহলে এই সড়ক বন্ধ রেখে কী লাভ?”
সেখানে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “যা দেখছেন তা জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থেই।”
নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড়ের সড়ক ব্যড়িকেড দিয়ে বন্ধ করা ছাড়াও সড়কের উভয় পাশের গলিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এই সড়কের উভয় পাশের দোকানপাট, অফিস বন্ধ রয়েছে।