বিদেশ থেকে ফিরে এবার সশরীরে সংসদ ভবনে গিয়ে পদত্যাগপত্র দিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির এমপি মো. হারুনুর রশীদ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় তিনি স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। এর মধ্যে দিয়ে বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের সবাই পদত্যাগ করলেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
স্পিকারের দপ্তর থেকে বেরিয়ে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব সংসদের দক্ষিণ প্লাজার গেইটে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “দেশ এখন আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। জাতীয় সংসদ মহাজোটের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এখানে কোনো বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য নেই। এটি একদলীয় সংসদ। আমাদের সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধিতে এ ধরনের কোনো সুযোগ নাই।
"আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাচ্ছে, এইভাবে করতে চাইলে অবশ্যই সংবিধান ও আইনের পরিবর্তন আনতে হবে।"
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশ থেকে বিএনপির সাত এমপির পদত্যাগের ঘোষণা এসেছিল। হারুন সেসময় বিদেশ ছিলেন। পরদিন দলের অন্য এমপিরা স্পিকারের কাছে গিয়ে সাতজনের পদত্যাগপত্রই জমা দেন।
তাদের মধ্যে ছয়জনের পদত্যাগপত্র স্পিকারের দপ্তর গ্রহণ করে নিলেও হারুন বিদেশ থেকে ই-মেইলে স্ক্যান করা সইসহ পদত্যাগপত্র দেওয়ায় সে সময় তা গ্রহণ করা হয়নি। সে কারণে দেশে ফিরে এবার নিয়মমাফিক স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন হারুন।
তিনি সাংবাদিবদের বলেন, “কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে স্পিকারের কাছে উপস্থিত হয়ে নিজের স্বাক্ষরে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হয়। তাই সেদিন আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। গতকাল রাতে দেশে ফিরেই আজকে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।"
তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে ধরে বিএনপির এই পদত্যাগী সংসদ সদস্য বলেন, “বাংলাদেশে নির্বাচন এখন প্রহসন ও উপহাসে পরিণত হয়েছে। সরকার কূটকৌশল ও অপকৌশলের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখেছে।”
তিনি আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট শরিকদেরও সংসদ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানান এবং বিএনপি মহাসচিবসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।
এক প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, "স্পিকারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার সুযোগ নেই। তিনি আমাদের অনুরোধ করেছেন, বলেছেন আপনারা সংসদ থেকে পদত্যাগ না করলেই পারতেন। সংসদে আপনাদের বক্তব্য বলতে পারতেন।"
তার আগে পদত্যাগ করা বিএনপির অন্য এমপিরা হলেন- উকিল আব্দুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), জি এম সিরাজ (বগুড়া-৭), আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), জাহিদুর রহমান (ঠাকুরগাঁও-৩), মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪) ও রুমিন ফারহানা (সংরক্ষিত নারী আসন)।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপির ছয়জন বিজয়ী হন, পরে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় দলটি।
নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে শুরুতে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা সংসদে যাবে না। পরে সিদ্ধান্ত বদলে শপথ নেন দলটির সংসদ সদস্যরা। চার বছর পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে সংসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।
এদিকে বিএনপির ছেড়ে দেওয়া পাঁচ সংসদীয় আসনে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন ভোটের তারিখ রেখে উপ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
সে অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ-নির্বাচন হবে ১ ফেব্রুয়ারি। এসব আসনের ফয়সালা হলে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন হবে। আর হারুনের ছেড়ে দেওয়া আসন শূন্য ঘোষণার পর সেখানেও ভোট করার উদ্যোগ নেবে নির্বাচন কমিশন।