Loading...
The Financial Express

নিজের কেনা কাফনের কাপড় ভাগ্যে জোটেনি শহীদ মাজহারের

| Updated: December 16, 2022 22:27:06


শহীদ স্বামীর কিনে রাখা কাফনের কাপড় গণহত্যা-নির্যাতন জাদুঘরে দিয়েছেন রাশিদা খাতুন। শহীদ স্বামীর কিনে রাখা কাফনের কাপড় গণহত্যা-নির্যাতন জাদুঘরে দিয়েছেন রাশিদা খাতুন।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সংকট হতে পারে ভেবে বিভিন্ন ধরনের কাপড় কিনে রেখেছিলেন ঠাকুরগাঁও সদরের মাজহারুল ইসলাম, তার মধ্যে কাফনের সাদা কাপড়ও ছিল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

ঠাকুরগাঁও শহরের খানকা শরিফ এলাকায় একটি বড় মুদি দোকান চালাতেন মাজহারুল। খানকা শরিফের সংগঠকদেরও একজন ছিলেন তিনি।

এপ্রিলে একদিন মাজহারসহ কয়েকজনকে ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য রাজাকারদের মাধ্যমে চিঠি পাঠায় পাকিস্তানি বাহিনী। খবর পেয়ে ৭-৮ জন মিলে ক্যাম্পে যান তারা।

এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেওয়া, তাদের খোঁজখবর দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিভিন্ন বয়সী এই ব্যক্তিদের হুঁশিয়ারি দেয় পাকিস্তানি বাহিনী।

৭-৮ দিন পর মাজহারকে আবারও ক্যাম্পে ডেকে নেওয়া হয়, এরপর মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে পরিবার জানতে পারে, সেটাই ছিল বাড়িতে মাজহারের শেষ আগমন, আর তিনি ফিরবেন না।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা থেকে পরিবার জানতে পারে, মে মাসেই মাজহারুল ইসলামসহ ১৪-১৫ জনকে গণকবর দেওয়া হয় টাঙন লোহার ব্রিজ এলাকায়। নিজের কেনা কাফনের কাপড় ঘরে পড়ে থাকে।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শহীদ মাজহারুল ইসলামের স্ত্রী রাশিদা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাপড় পরানো তো দূরে থাক, আমরা তাকে দেখতে পর্যন্ত পারিনি। মারার খবরই তো পেলাম অনেক পরে।”

এমন অনেক শহীদের রক্তস্নাত এই বাংলাদেশে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে বিজয় লাভের আগে ৩০ লাখ মানুষকে প্রাণ দিতে হয় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে।

মাহারের কেনা কাফনের সেই কাপড় ৫০ বছরের বেশি সময় আগলে রেখেছেন রাশিদা খাতুন; গত বছর সেটি তিনি খুলনার ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরে’ সংরক্ষণের জন্য দিয়ে দেন তিনি।

এখন সত্তরোর্ধ্ব রাশিদা একাত্তরে ছিলেন তরুণী বধূ। তিনি বলেন, “একদিন ১৪-১৫ জনকে পাকিস্তানিরা চিঠি পাঠায় ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য। অগ্রপশ্চাৎ ভেবে ৭-৮ জন গিয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু ক্যাম্পে গেলে তাদের আটকে রাখা হয়।

“সাত-আট দিন পর বাড়িতে নিয়ে আসে। আবার নিয়ে যায়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন উনি। এ কারণে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে ওদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলছিল হানাদারেরা।”

এর মধ্যে পরিবার শহীদ মাজহারের আরও কোনো খোঁজ পায়নি। একেক জনের কাছ থেকে একেক রকম উড়ো খবর পেলেও ভরসা করার মতো তথ্য পেতে লেগেছে অনেক দিন।

মাজহারকে যখন নিয়ে যায়, তখন তার ঘরে ছিল পাঁচ বছরের এক মেয়ে এবং দেড় বছরের এক ছেলে। পরিবারের সহায়তা নিয়ে ছেলেমেয়েদের বড় করেন রাশিদা।

তিনি জানান, মাজহার আওয়ামী লীগের সমর্থক থাকলেও কোনো পদে ছিলেন না। ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ বড়ই ছিল তার।

<div class="paragraphs"><p>স্বামীর কেনা সেই কাফনের কাপড় বুকে আগলে রাশিদা খাতুন</p></div>

স্বামীর কেনা সেই কাফনের কাপড় বুকে আগলে রাশিদা খাতুন

দেড় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে কেবল মায়ের যত্নে বেড়ে উঠেছেন শহীদ মাজহারের ছেলে আলী আহমেদ। বাবার পথ ধরে এখন তিনিও ব্যবসা করেন।

আলী আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেবল এলাকার মানুষ আর রাজাকারদের চক্ষুশূল হওয়ার কারণে আমার বাবাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আমরা তার লাশের খবরই পেলাম অনেক দিন পর।

“আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি, এভাবে অনেকে হারিয়েছে। মাঝেমধ্যে আমাদের খোঁজখবর করে অনেকে। কিন্তু শহীদের রক্তের মর্যাদা কি আমরা দিতে পেরেছি?”

শহীদ মাজহারের কাফনের কাপড়ের মতো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শহীদদের নিদর্শন, স্মারক, আলোকচিত্র, বইপত্র, দলিল সংগ্রহের পাশাপাশি বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ ও গণহত্যা সম্পর্কে বিস্তৃত পরিসরে তথ্য সংগ্রহ করছে গণহত্যা-নির্যাতন জাদুঘর।

জাদুঘরের ট্রাস্টি সম্পাদক চৌধুরী শহীদ কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গণহত্যা ও বধ্যভূমির তথ্য সংগ্রহে সারা দেশে কাজ করছি আমরা। আমাদের একজন গবেষক মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে শহীদ মাজহারুল ইসলামের কাফনের কাপড়ের সংগ্রহে থাকার সন্ধান পেয়েছেন।

“আমরা এ ধরনের নিদর্শন ও স্মারক সংগ্রহের কাজ করছি। বধ্যভূমি থেকে শহীদদের মাথার খুলি, হাড়গোড় ইত্যাদি সংগ্রহেও কার্যক্রম আছে আমাদের।”

Share if you like

Filter By Topic