ছোট বাচ্চাদের মধ্যে অনেক ধরনের ভীতি কাজ করে আর এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অন্ধকারভীতি। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী বাচ্চারা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে অন্ধকারকে ভয় পায়।
তবে বড় হওয়ার সাথে সাথে বিশেষত কৈশোরে এসে এই ভয়টা কেটে যায়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই এই ভয়টা মনের কোণে ঠিক রয়ে যায়। ভয় শুধু ভয় নয়, রোগ হয়ে একদম জেঁকে বসে।
অন্ধকারের প্রতি মারাত্মক এই ভীতির সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘নিকটোফোবিয়া’ বলে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্ধকারে কোথাও একা যেতে ভয় পায়, অন্ধকার কোনো স্থানে গেলে অস্থিরতা কাজ করে এমনকি অন্ধকার ঘরে একা ঘুমাতেও পারে না। কারো কারো ক্ষেত্রে প্যানিক অ্যাটাক হয়।
শুধু কি তাই? এই ধরনের মানুষ সাধারণত সূর্য ডোবার পর আর বাড়ি থেকে বাইরে বের হয় না এবং সন্ধ্যার পরে সামাজিক কোনো অনুষ্ঠান থাকলেও সেগুলো এড়িয়ে চলে। অনেকক্ষেত্রে ‘ইনসোমনিয়ার’ অন্যতম কারণ এই নিকটোফোবিয়া।
গ্ল্যামারে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০০ জনে ১১ জন এই রোগে আক্রান্ত।
কেন এই ধরনের ভীতি তৈরি হয়?
কখনো কখনো কল্পনা থেকে ভয়ের সৃষ্টি হয়। এমন কিছু যা সে কখনো দেখেনি, যেমন - ভূত, দৈত্য-দানব বা ডাকাতকে ঘিরে অন্ধকারে থাকাকালীন সময়ে এক ধরনের ভীতির সৃষ্টি হয় যা অন্ধকারকেই ভীতিকর করে তোলে।
আবার কখনো, অন্ধকার কোনো স্থান থেকে ভেসে আসা কোনো শব্দ যার উৎস সম্পর্কে সে আসলে ঠিক অনুমান করতে পারে না বা জানে না, এই অবস্থাতেও একজন অন্ধকারকে ভয় করতে শুরু করে।
অনেকক্ষেত্রে দিনে ঘটে যাওয়া কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যা মনকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে, অন্ধকার নেমে এলে অনুভূতিটাকেই আরো বিশ্রী করে তোলে।
কোন পরিস্থিতি বা বিষয়গুলো এই রোগের ‘প্রোভোকিং এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করে?
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগের মুহূর্তগুলো।
অন্ধকার কোনো জায়গায় যাওয়া।
সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করা।
ঘরের আলো নিভিয়ে দেয়া।
রাতের কোনো ভয়ের দৃশ্য দেখানো হয়েছে এমন প্রোগ্রাম দেখলে।
যে লক্ষণগুলো নিকটোফোবিয়ার ইঙ্গিত দেয়
ভয়ের অনুভূতি বা ক্ষতি হতে পারে এমন চিন্তা।
অতিরিক্ত ঘাম।
ঘুম ঘুম ভাব।
মাথাব্যথা।
কোনো কিছু গিলতে কষ্ট অনুভব করা।
মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া বা বুকে ব্যথা।
অন্ধকারে একলা কান্না করা বা জোরে জোরে চিৎকার করা।
অন্ধকারের কথা চিন্তা করলেই কেমন যেনো বমিবমি ভাব বোধ করা।
খুব জোরে জোরে বা ধীরগতিতে শ্বাস নেয়া।
কাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে?
যে কেউ যেকোনো বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অধিক ঝুঁকি থাকে-
যারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন।
যাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেশি কাজ করে।
পরিবারে কারো মানসিক সমস্যা থাকলে।
যাদের অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার থাকে।
এই রোগটিকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না বা অনেকক্ষেত্রে ‘রোগ’ বলেই মনে করেন না। চিকিৎসা করা না হলে এই রোগের প্রভাব আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে সমস্যায় জর্জরিত করে তুলবে।
মানসিক বিকাশ থেকে শুরু করে আচরণগত দিক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে একজন মানসিক রোগীতেও পরিণত হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, চিকিৎসার পাশাপাশি মেডিটেশন ও যে বিষয় বা চিন্তাগুলো তার মনে ভীতির সৃষ্টি করে সেগুলো খুঁজে বের করে ধীরে ধীরে ইতিবাচকতার সাথে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এর ফলে একদিকে যেমন মানসিক প্রশান্তি মিলবে অন্যদিকে মিলবে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ।
শবনম জাবীন চৌধুরী ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।