নিউ ইয়ার’স রেজলুশনের ধারটা সবার কাছে বেশ পরিচিত। পুরনো বছরের ভাঙাগড়া পাল্টে নতুন বছরে নতুন মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা কার না থাকে? ফেলে যাওয়া বছরের ভুল শুধরে নিয়ে সামনে এগোতে চাওয়ার চেষ্টা এবং সাথে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ – মূলত এগুলোকেই বলা হয় নিউ ইয়ারস রেজলুশন। তবে মুশকিল হয়ে ওঠে এই নতুন বছরের পরিকল্পনার বাস্তবায়নে। কারণ আমরা সবাই প্রত্যেক বছর পরিকল্পনা সাজাই এবং দেখা যায় খুব দ্রুতই সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কিন্তু কেন এই ব্যর্থতা এবং কীভাবে এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সাফল্যের হার বেশ কিছুটা বাড়ানো যায়, সেগুলোই জানবো আজ।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা
নিউ ইয়ারস রেজলুশন কাজে না আসার একটা বড় কারণ হলো নতুন বছরে যে লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে চাই, সেগুলোর মাত্রা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে না পারা। আগামী বছর অনেক অনেক বই পড়বো ঠিক করলে একজন লক্ষ্যের কাছে আদৌ পৌঁছাতে পারছেন কিনা বা কতোটা পারছেন তা যাচাই করে উঠতে পারেন না। কিংবা যদি ঠিক করা হয় ৫০০ বই পড়ে ফেলবো, সেটাও অবাস্তব হয়ে যায়। তার চেয়ে যদি লক্ষ্য এমন হতো যে আগামী বছরের ৫২ সপ্তাহের প্রায় প্রতি দুই সপ্তাহে একটা বই পড়ে ২৫ টা বই পড়ে ফেলবো এবং এর পর ২৫ টা বইয়ের তালিকা করে শুরু করা হতো, তাহলে নতুন বছরে গিয়ে সহজেই হিসেব করা যেতো কতো পথ এলাম এবং আর কতোটা যাওয়া প্রয়োজন। এই ধরণের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সাজানোর সহজ বুদ্ধিও রয়েছে। লক্ষ্যকে স্মার্ট(SMART) করে ফেলুন অর্থাৎ Specific(নির্দিষ্ট), Measurable(পরিমাপযোগ্য), Achievable(বাস্তব এবং অর্জনযোগ্য ), Relevant(প্রাসঙ্গিক), and Time-bound (সময় সীমার মধ্যে)।
(ছবি: বডিবিল্ডিং প্লান)
মোটিভেশনের অভাব
মোটিভেশন শব্দটি মোটিভেশন স্পিকারদের কল্যাণে সাম্প্রতিক সময়ে বহুল প্রচলিত হলেও একটা বিষয়ে সবাই একবাক্যে মানতে রাজি হবেন যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অর্জনে অনেক সময়ই আমরা ব্যর্থ হয়ে পড়ি কারণ সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাইনা, উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। এই উদ্যম হারিয়ে ফেলার একটা বড় কারণ হয়ে ওঠে চলার পথের ছোটখাটো ব্যর্থতা। একবার এই ধাক্কা খেয়ে এগিয়ে যাওয়া শিখে ফেললে এগিয়ে যাওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যেতো। মোটিভেশন ধরে রাখার কিছু সহজ উপায়ের মধ্যে রয়েছে অর্জন করা সম্ভব এমন লক্ষ্যই নির্ধারণ করা এবং লক্ষ্যের প্রতি ধাপে এগোতে পারলে নিজেকে খুব ছোট কিছু হলেও পুরস্কৃত করা। বই পড়ার উদাহরণে ফিরে গেলে বলা যেতে পারে, প্রতি একটা করে বই পড়ার পর নিজেকে এক প্যাকেট চকলেট কিনে দিতেই পারেন!
(ছবি: ব্রিটিশ কাউন্সিল)
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা
প্রতিদিন ঘুম ভাঙে সকাল নয়টায়, কিন্তু নতুন বছরে ঠিক ছয়টার মধ্যে বিছানা ছেড়ে ওয়ার্কআউট করে দুই মাসে বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলবোই– এমন পরিকল্পনা হুট করে ঠিক করে ফেলাই যায়। কিন্তু কাজের সময় আসলে দেখা যায় এই পরিকল্পনার কানাকড়িও করা সম্ভব হচ্ছেনা, বরং এই ব্যর্থতায় বাড়ছে বিষণ্ণতা। তাহলে সমাধান কোথায়? প্রথমেই লক্ষ্য অর্জনে এমন লক্ষ্য খুঁজে আনতে হবে যা বাস্তব। এরপর পুরো পরিকল্পনাকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে আস্তে আস্তে এগোতে হবে। সকাল নয়টার ঘুমভাঙাকে ছয়টায় আনতে প্রতি সপ্তাহে আধাঘণ্টা আগে আগে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করলে কাজটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে। আবার এভাবে প্রতিদিন অল্প অল্প করে চেষ্টার ফলে এই চেষ্টাগুলো পরিণত হবে অভ্যাসে যা প্রত্যেক নিউ ইয়ারস রেজলুশনেরই চাওয়া থাকে।
দায়িত্ববোধ
নিউ ইয়ারস রেজলুশন কাজ না করার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর আরেকটি হলো দায়িত্ববোধের অভাব। যে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে গড়িমসি করে দুইদিন ফাঁকি দিতে ইচ্ছে হতেই পারে। লক্ষ্য যেহেতু নিজের কাছে, তাই বাইরের কেউ কোনো প্রশ্নও হয়তো করবেনা। কিন্তু ফাঁকি দিলে নিজের কাছে হেরে যেতে হবে, এই দায়িত্ববোধটুকুই সাহায্য করবে মনোবল ধরে রেখে দৃঢ়চিত্তে কাজ করতে। একা একা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গেলে লক্ষ্য স্থির রাখা অনেকক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে যায়। এজন্য সাহায্য নেয়া যেতে পারে সমমনা কোনো বন্ধুর। একে অপরকে প্রতিমুহূর্তে স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করলে দুইজনেরই উপকার। এধরনের সাপোর্ট গ্রুপের সহায়তাও নেয়া যেতে পারে। সামান্য উৎসাহ আর প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা পেলেই দেখা যাবে নিউ ইয়ারস রেজলুশনের অনেকখানিই সফল।
মোটা দাগে স্মার্ট গোল ঠিক করতে না পারা, প্রেষণার অভাব, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যথাযথ ধারণা না থাকা ইত্যাদি কারণেই নতুন বছরের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নিতে পারেনা। তাই প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, সুদৃঢ় মনোবল। এভাবেই বিন্দু বিন্দু জলকণায় সিন্ধু গড়ে তুলে নিজের খোলনলচে পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব। সব পরিকল্পনা সফল না হলেও, যেটুকু সম্ভবপর হয় – সেটুকুও বা কম কী!
সিরাজুল আরিফিন বর্তমানে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।