বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কায় ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই চলছে সার্বিক প্রযুক্তি খাতে। কেবল নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রেই চাকরি হারিয়েছেন কাজের ভিসায় দেশটিতে যাওয়া ৫০ হাজার প্রযুক্তি কর্মী। এখন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ধরে রাখতে অল্প সময়ে নতুন চাকরি খোঁজে মরিয়া হয়ে পড়েছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক পরিধি বেড়েছে টানা কয়েক বছর ধরে। মহামারী পরবর্তী বিশ্বের ভূরাজনৈতিক অস্থিরতায় হঠাৎই হোঁচট খেয়েছে এই শিল্পখাত। নানা ভাবে খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে। তারই অংশ হিসেবে চাকরি খোয়াচ্ছেন এ খাতের কর্মীদের অনেকে।
অস্থায়ী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এমন অভিবাসী কর্মীদের ওপর এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের চাকরিদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এইচ-১বি ভিসা অনুমোদন পায় প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো। দীর্ঘ দিন ধরেই কাজের ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসা কর্মীদের ওপর নির্ভর করেছে সিলিকন ভ্যালি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী আইন নিয়ে আলোচনায় দেশটির প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর সরব উপস্থিতির একটি বড় কারণ– অভিবাসী কর্মীদের ওপর নির্ভর করছিল তারা নিজেরাই।
কিন্তু, কাজের ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রের যারা অবস্থান করেন, চাকরি খোয়ালে নতুন চাকরি খুঁজে নেওয়ার জন্য সাধারণত ৬০ দিন থেকে ৯০ দিন সময় পান তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্পের অভিবাসী কর্মীদের ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার আইনজীবী সোফি আলকর্নের মতামত, “এমন মেধাবী কর্মীদের আকৃষ্ট করতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র ভাগ্যবান। তাদের অনেকেই ৬০ দিনের সময়সীমার মুখে পড়ছে। তাদের স্পন্সর করবে এমন চাকরি খোঁজার একটাই সুযোগ পাচ্ছেন তারা। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে তাদের। তাই সবার জন্যই সময়টা কঠিন চাপের।”
অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে নভেম্বর মাসে। কর্মী ছাঁটায়ের ঘোষণা দিয়েছে মেটা, অ্যামাজন, টুইটার, লিফট, সেলসফোর্স, এইচপি এবং ডোরড্যাশের মতো কোম্পানিগুলো। এক মাসে চাকরি হারিয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি কর্মী।
ছাঁটাই করা কর্মীদের কোম্পানি ভিন্ন পদে চাকরি খুঁজে নেওয়ার জন্য ৬০ দিন সময় দিয়েছে অ্যামাজন। ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে অ্যামাজনের স্পন্সরশিপে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেয়েছিলেন ছয় হাজারের বেশি কর্মী; যা ছিল ওই সময়ের সর্বোচ্চ। তালিকায় উপরের সারিতেই ছিল গুগল, মাইক্রোসফট এবং আইবিএম।
অন্যদিকে, নভেম্বর মাসেই নতুন কর্পোরেট কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে অ্যামাজন। অ্যামাজন প্রধান অ্যান্ডি জ্যাসি চাকরি খোয়ানো কর্মীদের নতুন চাকরি পেতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন সে সময়ে। এ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে এক অ্যামাজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো উত্তর পায়নি সিএনবিসি।
ছাঁটাইকৃত কর্মীদের কতো শতাংশ অভিবাসী কর্মী, সে তথ্য সাধারণত প্রকাশ করে না কোম্পানিগুলো। তবে চাকরি হারানো কর্মীদের অনেকেই এখন লিংকডইন, ডিসকর্ড, ব্লাইন্ড এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নতুন চাকরি জোগাড়ের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে সিএনবিসিকে জানিয়েছেন সদ্য চাকরি খোয়ানো এক অ্যামাজন কর্মী।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী কর্মীদের জন্য এই ঝুঁকি নতুন নয়। গেল কয়েক বছর ধরেই বিপাকে আছেন তারা। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে হুমকিতে পড়েছিল পুরো এইচ-১বি ভিসা প্রক্রিয়া। অস্থায়ী কাজের ভিসার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় জনশক্তি কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাচ্ছে বলে একাধিকবার বলেওছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ওই মতামতের কঠোর বিরোধীতা করেছিলেন প্রযুক্তিখাতের শীর্ষ নির্বাহীরা। ট্রাম্প ২০২০ সালে সকল এইচ-১বি ভিসা প্রক্রিয়া স্থগিত করলেও ২০২১ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন বাইডেন।
বাইডেন প্রশাসনের কারণে অভিবাসী কর্মীদের ওপর থেকে যতোটা চাপ কমেছিল তা চাকরি খোয়ানো কর্মীদের জন্য এখন কার্যত অর্থহীন বলে উল্লেখ করেছে সিএনবিসি।
জিন-সিকোয়েন্সিং নিয়ে কাজ করে প্রযুক্তি কোম্পানি ইলুমিনা। কোম্পানিটি থেকে সদ্য চাকরি খোয়ানো এক কর্মী সিএনবিসিকে বলেছেন, কোম্পানিটি তার ভিসা পরিবর্তনে সহযোগিতা করবে বলে আশা করছিলেন তিনি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন ‘অপশনাল প্র্যাকটিকাল ট্রেইনিং (ওপিটি)’ ভিসায়। এই ভিসায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে তিন বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি পান।
কিন্তু, ইলুমিনা থেকে চাকরি খোয়ানো ওই কর্মী নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সিএনবিসিকে জানিয়েছেন, তাকে কেবল ৯০ দিনের মধ্যে নতুন চাকরি খুঁজতে হচ্ছে না, তার ওপিটি ভিসার মেয়াদ শেষ হবে অগাস্ট মাসে।
তাকে যে কোম্পানিই নিয়োগ দিক না কেন, সে কোম্পানিকে তার ভিসা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এবং আনুসাঙ্গিক খরচ মেটাতে রাজি থাকতে হবে।
নভেম্বর মাসেই পাঁচ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছিল ইলুমিনা। কোম্পানির এক মুখপাত্র সিএনবিসিকে বলেছেন, চাকরি খোয়ানো কর্মীদের মধ্যে ১০ শতাংশের কম কাজের ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। চাকরি খোয়ানো কর্মীদের পরিস্থিতি বুঝতে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করার কথা সিএনবিসিকে পাঠানো ইমেইলে বলেছেন তিনি।