পুলিশি অভিযানে ‘তছনছ’ বিএনপির নয়া পল্টনের কার্যালয় ঘুরে দেখে এর নিন্দা জানিয়ে এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর আন্দোলনে তারাও থাকছেন।
এক সময়ের এই বিএনপি নেতা বলেছেন, “আজকে বিএনপি যেভাবে সমগ্র দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে, এককভাবে, সমগ্র পৃথিবী এটা দেখছে। শতকরা ৯০ ভাগ লোক বিএনপির পক্ষে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি এখন সরকার পতনের ডাক দিচ্ছে। এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে টানপড়েনের মধ্যে গত সপ্তাহে তাদের কার্যালয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ কয়েকশ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। পরে দলটির মহাসচিবকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বুধবার থেকে বিএনপির কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল পুলিশ; রোববার অবরোধ তুলে নেওয়ার পর বিএনপির নেতারা সেখানে যেতে পারেন। দুদিন বাদে মঙ্গলবার ওই কার্যালয়ে যান অলি, যিনি এক সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। দেড় যুগ আগে তিনি বিএনপি থেকে বেরিয়ে নতুন দল গড়েন।
বিএনপি কার্যালয় ঘুরে দেখে অলি সাংবাদিকদের বলেন, “এই হামলা ও বর্বরতা এই সরকারকে পৃথিবীর কাছে নগ্ন করে দিয়েছে। পৃথিবী মানুষ বুঝতে পেরেছে এরা (সরকার) কত জঘন্য, এরা কত বর্বর, এরা যে সভ্য সমাজের বসবাস করার উপযুক্ত নয়।”
আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলডিপি চেয়ারম্যান বলেন, “এই সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এলডিপি সবসময় বিএনপির সাথে একসঙ্গে কাজ করে যাবে।
“আজকে বিএনপি যেভাবে সমগ্র দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে, এককভাবে সমগ্র পৃথিবী এটা দেখছে। শতকরা ৯০ ভাগ লোক বিএনপির পক্ষে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।”
সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে নিয়ে বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে এই সরকারকে বিদায় করতে যা যা করা দরকার, তা আমাদের করতে হবে। তবে আমাদের কর্মসূচি আইন অনুযায়ী হবে, সংবিধান অনুযায়ী হবে। তারা যতই অন্যায় করুক না কেন, আমাদের তাদের পাতা ফাঁদে পা দেব না।”
সরকারের উদ্দেশে অলি বলেন, “তারা (ক্ষমতাসীনরা) মনে করছে এই সরকার বোধহয় কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তাদেরকে বুঝতে হবে কোনো স্বৈরাচার দীর্ঘ কোনো দেশে রাজত্ব করতে পারে নাই। এখন তারা রাজত্ব করছে, দেশ চালাচ্ছে না। যেখানে গণতন্ত্র নাই…স্বৈরাচারী সরকার দেশ পরিচালনা করছে।”
তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসহ গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান।
সকালে নয়া পল্টনে গেলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলিকে স্বাগত জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
অলি আহমেদের সঙ্গে ছিলেন এলডিপির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আওরঙ্গজেব বেলাল, নিয়ামুল বশির, সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ, সাকলাইন, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুর রহমান, মাহে আলম চৌধুরী, বিলাল হোসেন মিয়াজি, কফিল উদ্দিন, আবুল হাসেম ভুঁইয়া, হাফিজুর রহমান।
বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এলডিপির নেতাদের প্রতিটি কক্ষ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের অফিসে ঢুকে এভাবে ভাংচুর-লুটপাট এটা স্বাভাবিক না। এটা সরকারের ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা, এক ধরনের দূর্বলতাই প্রকাশ পায়।
“আমরা মনে করি, এর প্রতিবাদ-প্রতিবিধান হওয়া দরকার। এদেশটাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি, এই দেশটাকে কারও খেলার বস্তু বানানো যায় না। তারা খেলার কথা বলে। রাজনীতি তাদের কাছে খেলা। তাদেরকে এই নোংরা খেলা থেকে বিরত করার জন্য বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই।”
আরও যারা গিয়েছিলেন
মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে যান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নুরুল কবির পিন্টু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, ফারুক রহমান, এনপিপি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, রফিকুল ইসলাম।
এছাড়া এলডিপির একাংশের শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির আবু তাহের, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী,জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, এসএম শাহাদাত, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলামও বিএনপি কার্যালয়ে যান।
ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল করিম খান, শওকত আমীন, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকী প্রমূখ নেতারা বিএনপির কার্যালয় পরিদর্শন করেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।