Loading...
The Financial Express

দুই বছর পর ইজতেমা, তাবলীগ জামাতে বিভক্তি রয়েই গেল

| Updated: January 13, 2023 19:57:05


দুই বছর পর ইজতেমা, তাবলীগ জামাতে বিভক্তি রয়েই গেল

করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছর বিরতির পর বিশ্ব ইজতেমা আবারো শুরু হলেও, তাবলীগ জামাতের মধ্যে বিভক্তি কাটেনি এবং সেটি দূর হবার কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

তাবলীগ জামাতের দুটি গ্রুপ আলাদাভাবে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করেছে, যার প্রথম পর্বটি শুরু হয়েছে শুক্রবার।

তেরই জানুয়ারি থেকে পনেরই জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম পর্বের ইজতেমার আয়োজন করেছে মাওলানা জুবায়ের আহমদের নেতৃত্বাধীন অংশ। আর ২০ থেকে ২২শে জানুয়ারি ইজতেমা আয়োজন করেছেন মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলামের অংশ, যারা ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দলভীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

মাওলানা জুবায়ের আহমদের অংশটিকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে মাওলানা সাদ-এর বিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছে হেফাজতে ইসলামী।

মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয় হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসা। মাওলানা সাদ যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারেন সেজন্য হেফাজতে ইসলাম নানা তৎপরতা শুরু করে।

গত ১৭ই ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে কিছু দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিশ্ব ইজতেমার সময় মাওলানা সাদকে যাতে বাংলাদেশে আসতে দেয়া না নয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়া এক গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলামের বিরোধিতার মুখে মাওলানা সাদ-এর অনুসারীরা যদি তাকে বাংলাদেশে আনার চেষ্টা করে, তাহলে পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

মাওলানা সাদ-এর অনুসারীদের সাথে সম্পৃক্ত মোহাম্মদ সায়েম বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা আশা করছেন আগামী বিশ থেকে বাইশে জানুয়ারি তাদের ইজতেমা পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।

“তাদের ইজতেমা আলাদা, আমাদের ইজতেমা আলাদা। আমাদের ইজতেমায় কে আসবে সেটা আমরা নির্ধারণ করবো। তারা কেন বলছে যে মাওলানা সাদ সাহেব আসতে পারবে না? কারণটা কী?” প্রশ্ন তোলেন মি. সায়েম।

কেন সমঝোতা হচ্ছে না?

তাবলীগ জামাতের দুটি অংশ এখনো চরম বৈরি অবস্থায় রয়েছে।

গত বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান উভয় পক্ষের সাথে বৈঠক করে সমঝোতার চেষ্টা করলেও তাতে কোন লাভ হয়নি।

দুটি অংশ আলাদাভাবে আয়োজন করার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমা বেশ স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে উঠেছে।

মাওলানা জোবায়ের-এর অনুসারীদের বক্তব্য হচ্ছে, মাওলানা সাদ তার কিছু বক্তব্যের মাধ্যমে কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়েছেন। এজন্য তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েন। সুতরাং তার সাথে সমঝোতা সম্ভব নয় বলে অনেকে মনে করেন।

মোহাম্মদ সাদ কান্দালভী নিজ থেকে এর সমাধান না করলে তাবলীগ জামাতের বিভক্তির অবসান হবে না বলে মনে করেন মাওলানা জোবায়ের-পন্থীরা।

মাওলানা জোবায়ের-এর অনুসারীরা এখন নিজেদের তাবলীগ জামাতের মূলধারা হিসেবে দাবি করছে।

মাওলানা জোবায়ের-এর অনুসারীদের সাথে সম্পৃক্ত এবং হেফাজতে ইসলামের অন্যতম নেতা জাকারিয়া নোমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ আমাদের ইজতেমায় অনেক মানুষ হয়েছে, অতিরিক্ত মানুষ হইছে।”

দুই পক্ষ কি আর কখনোই একত্রিত হতে পারবে না? এমন প্রশ্নে জাকারিয়া নোমান বলেন, মাওলানা সাদ-পন্থীরা ধীরে ধীরে দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যাবে।

“আশা করি এই অবস্থা থাকবে না। ওরা সংখ্যায় অতি নগণ্য। আমরা মনে করতেছি খু্ব শীঘ্রই ওদের অস্তিত্ব থাকবে না,” বলেন মি. নোমান।

তবে মাওলানা সাদ-এর সমর্থকরা বলছেন তারা একত্রিত হবার জন্য চেষ্টা করেছেন।

মাওলানা সাদ তার বক্তব্যের বিষয়ে ইতোমধ্যে ভারতের দেওবন্দের কাছে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বলে তারা উল্লেখ করেন।

“আমরা এখনো মেলার জন্য চেষ্টা করেছি। সমঝোতার জন্য আমরা সবসময় তৈয়ার। আমাদের দেশের কিছু ওলামায়ে কেরাম হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে এসব করছে। তারা যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতো তাহলে এই ফেতনা সৃষ্টি হতো না,” বলেন মোহাম্মদ সায়েম।

মাওলানা সাদ কী করেছিলেন?

উনিশ’শ চুরানব্বই সাল থেকে টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমায় বক্তব্য দিয়েছেন ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দলভী।

কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে তাকে কেন্দ্র করে তাবলীগ জামাতে বিভক্তি তৈরি হয়।

মাওলানা সাদ তাবলীগ জামাতে কিছু সংস্কার করার পক্ষে। তার সংস্কার ভাবনা নিয়ে ২০১৭ সালেই ভারতে তাবলীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিভক্তির শুরু হয়।

মাওলানা সাদ বলেছিলেন "ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয়"। অনেকেই মনে করেন যে এই বক্তব্যের মাধ্যমে মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকাণ্ড পরিচালনার বিনিময়ে অর্থ নেয়ার বিপক্ষে বলা হয়েছে।

সাদ কান্দালভী আরও বলেছিলেন, "মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিত, যাতে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ে।" মাওলানা সাদ-এর এসব বক্তব্য ভারতে তাবলীগ জামাতের একাংশকে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে। বিশেষ করে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ তার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে।

দারুল উলুম দেওবন্দ-এর সাদ-বিরোধী অবস্থান প্রকাশ্য হওয়ার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। বিভক্ত হয়ে পড়েন বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের শীর্ষ নেতারা।

তবে উভয়পক্ষ যেভাবে অনড় অবস্থানে রয়েছে তাতে এই বিরোধের মীমাংসা সহজে হবে বলে মনে হচ্ছে না।

কারণ, উভয় পক্ষই দাবি করছে এর মধ্যে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। এজন্য তারা পরস্পরকে দায়ী করছে। খবর বিবিসি বাংলার।

Share if you like

Filter By Topic