পুঁজিবাজারে রবির শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ মেয়াদে সম্মানজনক মুনাফা পাবেন বলে আশার কথা শুনিয়েছেন মোবাইল ফোন অপারেটরটির নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাজীব শেঠি।
বুধবার ঢাকার গুলশানে অপারেটরটির করপোরেট অফিসে টেলিকম সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বলেন, একটা বড় পরিমাণ স্থানীয় বিনিয়োগকারী থাকায়, কোম্পানির দায়দায়িত্বও একটু বেশি। যারা কষ্টের টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তারা দীর্ঘ মেয়াদে যাতে সম্মানজনক রিটার্ন পায়, সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
“যখন আপনি শেয়ারহোল্ডার হবেন, তখন আপনি বোঝেন, এটা বর্তমান প্রান্তিক নয় বা পরবর্তী প্রান্তিকের ব্যাপার নয়, দীর্ঘ মেয়াদে আপনি কতটা রিটার্ন পাচ্ছেন, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। আর এটার ওপরই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। সময়ের ধারাবাহিকতায় আমাদের বিনিয়োগকারীরা খুশিই হবেন, কোম্পানিতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের জন্য।”
গ্রাহক ও আয়ের বিবেচনায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন রবিতে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সিইও হয়ে এসেছেন রাজীব শেঠি, এর আগে যিনি ২০১৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রামীণফোনে একই দায়িত্ব সামলেছেন দুই বছর। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে দুই দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
২০২০ সালের শেষে পুঁজিবাজারে আসে মোবাইল অপারেটর রবি। ওই সময় আইপিও এর মাধ্যমে মোট ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ মূলধন সংগ্রহে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ছাড়ে কোম্পানিটি।
২০২০ সালের ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে শেয়ারপ্রতি ৩৩ পয়সা মুনাফা করলেও তালিকাভুক্তির বছরেই অপারেটরটির লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিস্মিত দেখা দেয়। তখন রবির কর্তাদের ডেকে অসন্তোষও জানিয়েছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরপর ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে এ মোবাইল অপারেটর। পরে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত বছরের জন্য আরও ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় অপারেটরটি।
সব মিলিয়ে ২০২১ সালে শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা করে নগদ লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের দেয় রবি। গত বছর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৩৪ পয়সা।
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর তৃতীয় প্রান্তিকে মোট ২ হাজার ২০৭ কোটি টাকা আয়ের কথা জানিয়েছে রবি। তবে এসময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে মুনাফা কমেছে কোম্পানিটির।
এ বছর প্রথম নয় মাসে রবি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ৩২ পয়সা।
বেশ কিছুদিন থেকে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ফ্লোরপ্রাইসে ৩০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটরটির শেয়ার।
এমন প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারে রবির অবস্থার বিষয়ে এক প্রশ্নে ‘দীর্ঘ মেয়াদে লাভের আশা’ বিনিয়োগকারীদের দেখালেন নতুন সিইও রাজীব শেঠি।
গ্রাহক সেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, “অবাস্তব প্রতিশ্রুতি না দিয়ে আমরা গ্রাহকদের মতামত গ্রহণ করে সে অনুযায়ী কাজ করতে চাই। আমরা সেবার গুণগতমান নিশ্চিত করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব, যাতে গ্রাহকদের ডিজিটাল জীবনধারা উপভোগ করার পথ আরও সুগম হয়।”
ফোরজি সেবা প্রদানে প্রতিযোগী কোম্পানিদের থেকে রবি এগিয়ে আছে দাবি করে তিনি বলেন, “রবি’র মোট গ্রাহকের ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ গ্রাহক ফোরজি ব্যবহারকারী। আপনি যদি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দিক থেকে দেখেন, মোট গ্রাহকের হিসাবে রবি’র ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সর্বোচ্চ (৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ)।”
কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সামগ্রিক দিক বিবেচনায় নিতে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও বিএসইসির প্রতি অনুরোধ জানান রবি আজিয়াটা’র চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম।
তিনি বলেন, “কোনো কোনো সময় বিটিআরসির সিদ্ধান্ত মোবাইল অপারেটরদের পারফর্মেন্সকে গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত করে। আমরা চাই, রেগুলেটরদের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না, সেটাতে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে অন্যান্য প্রভাবকেও।
“আমরা সেটা উভয় রেগুলেটরকে অনুরোধ জানিয়ে আসছি এবং বোঝানোর চেষ্টা করছি, আপনারা যখনই সিদ্ধান্ত নেন, তখন সম্পূর্ণ দিককে বিবেচনায় নিন, কেবল কোনো একটি নির্দিষ্ট দিকে নয়। কারণ, তাদের উভয়ের সিদ্ধান্তেই সামগ্রিকভাবে দেশের স্বার্থেই। আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি, একদিকে শেয়ারধারীদের স্বার্থ এবং অন্যদিকে গ্রাহকদের স্বার্থ উভয় দিক বিবেচনায় নিয়ে যেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”