দাম বেড়েছে, তবুও বাজারে ভোজ্যতেল-চিনির ঘাটতি


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: November 19, 2022 11:50:30 | Updated: November 19, 2022 20:59:55


ফাইল ছবি

নিত্যপণ্যের চড়া দামের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই বাজারে ভোজ্যতেল ও চিনির ঘাটতির খবর মিলছিল। এরইমধ্যে সরকারি বার্তা না এলেও বৃহস্পতিবার এ দুই পণ্যের পরিশোধনকারীরা দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বসেছেন।

এরপরও সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি জানিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘নতুন দরে’ পণ্য পেতেও তাদেরকে দু-একদিন অপেক্ষা করতে বলেছেন ডিলাররা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরা বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে চিনি ১১০ থেকে ১১২ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা বিক্রি করতে দেখা যায়।

দোকানিরা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা তেল-চিনির সরবরাহ বলতে গেলে বন্ধই করে দিয়েছে। কিন্তু নিয়মিত ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন পাইকারি দোকান থেকে বেশি দরে এ দুই পণ্য এনে বিক্রি করছেন তারা।

রামপুরা কাঁচাবাজারের তাহের স্টোরের মালিক আবু তাহের বলেন, “আসলে আমার কাছে মনে হয়েছে তেল-চিনির কোনো সংকট নেই।…‍ডিলাররা জানিয়েছেন- আর দুই-একদিন অপেক্ষা করতে, নতুন দরে বাজারে তেল চিনি আসছে।”

নতুন দর নির্ধারণ না হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে বোতলজাত সয়াবিনের লিটার ১৮০ টাকা বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।

হাজীপাড়া এলাকার আদিবা স্টোরের দোকানি আব্বাস আলী বলেন, “দুই-তিন সপ্তাহ ধরে প্যাকেটজাত কোনো চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা চিনি রাজারবাগ এলাকার একটি পাইকারি দোকান থেকে বেশি দরে আনতে হচ্ছে, তাও সব সময় পাওয়া যায় না। সেই হিসাবে কেজিতে এক-দুই টাকা লাভ করে ১১০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।”

দুই-একটি কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিন বাজারে পাওয়া গেলেও পাইকারি দরই বেশি দিয়ে আনতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বোতলজাত সয়াবিনের লিটার ১৮৫ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। আর খোলা সয়াবিন আরেকটু বেশি, ১৯০ টাকা।”

গত ৩ অক্টোবর সয়াবিন তেল লিটারে ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। তখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৭৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ১৫৮ টাকা দরে বিক্রির জন্য নির্ধারিত হয়।

আর ৬ অক্টোবর চিনিতে কেজি প্রতি ৬ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ। সেই থেকে খোলা চিনির দাম বেড়ে ৯০ টাকা কেজি, আর প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হয়ে আসছিল।

কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরে বাজারে তেল ও চিনির এ সংকটের মধ্যে হঠাৎ বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের এ দুই সংগঠন থেকে পৃথকভাবে এই দুই পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।

ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষণা অনুযায়ী সয়াবিন তেল লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯০ টাকা নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে ১৩ টাকা বাড়িয়ে প্যাকেটজাত চিনির দর ১০৮ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে দর বাড়ানোর ঘোষণা হলেও সরকার থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি জানিয়ে শুক্রবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, “আইন অনুযায়ী কোম্পানি কিংবা অ্যাসোসিয়েশন তেল চিনির দাম নির্ধারণ করতে পারে না। তারা একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে, কিন্তু সরকার এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। সুতরাং তেল চিনির আগের দামই এখনও কার্যকর আছে।”

তবে এ বিষয়ে টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার বলেন, “সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়েছি। আমরা ১৫ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম; সরকারের পক্ষ থেকে ১২ টাকা বাড়ানোর পক্ষে সায় দেওয়া হয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। সেই হিসাবে এখন আমরা নতুন এমআরপি লিখছি।”

বাণিজ্যমন্ত্রী নাকি বাণিজ্য সচিব- কে নতুন মূল্য নিশ্চিত করেছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে পুষ্টি ব্র্যান্ডের তেল কোম্পানি টিকে গ্রুপের এমডি মোস্তফা বলেন, “সেটা আমি জানি না। আমার কোম্পানির লোকজন বলেছে- ১২ টাকা বাড়ানোর পক্ষে সায় এসেছে। এখানে মন্ত্রণালয় ছাড়াও ট্যারিফ কমিশন কাজ করছে।”

দাম বাড়ানোর পরও বাজারে তেলের সরবরাহ কেন নেই, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “টিকে গ্রুপের পক্ষে থেকে আগের মতোই সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত ক্রেতা ও টিসিবির সরবরাহ মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ টন করে তেল বের হচ্ছে।

“অন্যরা কী করছে- সেটা অবশ্য আমি বলতে পারব না। এমনিতেই এখন এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যা দূর হওয়ার আগে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক নাও হতে পারে।”

দাম কমেছে মুরগি ডিম ও পেঁয়াজের

বেশ কয়েক মাস দফায় দফায় দাম বাড়ার পর বাজারে মুরিগ, ডিম ও পেঁয়াজের দর কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা।

অন্যদিকে এ সপ্তাহের ফার্মের ডিম ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে দেশি ও আমদানি করা দুই ধরনের পেঁয়াজ কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে।

বাজারভেদে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শান্তিনগর বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. সোহেল রানা জানান, কয়েক দিন ধরে সরবরাহ বেশি থাকায় ডিমের দর কমেছে। ডিমের চাহিদাও বেড়েছে বলে জানান তিনি।

তবে ডিমের সংকট ও চড়া দামের মধ্যে সম্প্রতি ছয়টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫১ কোটি ডিম আমদানির অনুমিত চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার পর থেকে ডিমের ডজন দেড়শ টাকা থেকে ১২৫ টাকায় নেমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

ডিমের চড়া বাজার পরিস্থিতির কারণে আমদানি করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবেদনকারীদের একজন রিপা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শেখ আল মামুন আহমেদ।

তিনি বলেন, “খুচরা বাজারে যখন প্রতি পিছ ডিম ১২ থেকে সাড়ে ১২ টাকা বিক্রি হয়, পাইকারি দর প্রতি ১০০ ডিম এক হাজার ২০ টাকা। তখন বুঝলাম এরা একটা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে পাবলিকের দূরাবস্থার মধ্যে টাকা নিচ্ছে। তখন আমরা বলছি- ৫১ কোটি ডিম আমদানির সুযোগ দিলে আমরা জনগণকে ৬ টাকা করে ডিম খাওয়াতে পারব।

“যেহেতু ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিটি ডিম ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা কিনতে পাই, সে অনুযায়ী আমরা সরকারকে শুল্ক দিয়েও ৫ পয়সা লাভ হোক, আর সমান সমান হোক বাজারজাত করতে পারব।”

ডিম আমদানির আবেদন জমা দেওয়ার পর দর কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমদানির আবেদন জমা দেওয়ার পর তারা পাইকারি দর ১০০ ডিম এক হাজার ২০ টাকা থেকে ৯৬০ টাকায় নামিয়েছে। যেখানে ১০০ ডিম ৬৩০ টাকা ছিল, সেখানে এক হাজার ২০ টাকা কিভাবে হল? মানে এখানে একটা হরিলুট চলছে।”

তবে তেজগাঁওয়ের জিলানী মার্কেটের ইসলামী ট্রেডার্সের মালিক পাইকারি ডিম বিক্রেতা মো. ইসলামের ভাষ্য, “শীতকালীন শাসসবজি বাজারে আসছে বলে ডিমের ওপর চাপ কমতে শুরু করেছে, এ কারণে দামও কমছে।”

এদিকে পেঁয়াজের দর কমার বিষয়ে ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল কুদ্দুস জানান, সামনে পেঁয়াজের মৌসুম আছে বলে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। একইসঙ্গে ভারত থেকে যথেষ্ট পরিমাণ আমদানি করা পেঁয়াজও দেশে এসেছে।

Share if you like