বিশ্বের প্রথম ‘সুপার ম্যাগনেট’ সেট তৈরির ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের এক কোম্পানি। আর এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে পারমানবিক ফিউশনের পাওয়ার প্ল্যান্ট পরীক্ষায়।
‘টোকামাক এনার্জি’ নামের ওই কোম্পানিটি বলেছে, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের তুলনায় ‘ডেমো৪’ নামের এই চৌম্বক ক্ষেত্র প্রায় ১০ লাখ গুণ ক্ষমতাধর। ফলে, ফিউশন প্রক্রিয়া চলাকালীন তৈরি হওয়া অত্যন্ত গরম প্লাজমা ধরে রাখা ও নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
পারমাণবিক ফিউশনকে ধরা হয় ক্লিন এনার্জি বা প্রকৃতিবান্ধব শক্তির পরম আধার। আর এই প্রযুক্তি নিয়ে ১৯৫০’র দশক থেকেই কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।
সূর্যের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিক্রিয়ার ক্ষুদ্রাকৃতির অনুকরণ হয় ফিউশন প্রক্রিয়ায় এবং এর ফলে প্রায় সীমাহীন শক্তি পাওয়া সম্ভব। এর সফল পরীক্ষা সম্ভব হলে মুক্তি মিলবে জীবাশ্ম জ্বালানীর কারণে বিপজ্জনক বর্জ্য উৎপাদন থেকে।
২০৩০’র দশকের শুরুতে বিদ্যুৎ গ্রিডে শক্তি সরবরাহযোগ্য ফিউশন পরীক্ষার লক্ষ্যস্থির করেছে টোকামাক এনার্জি। সেটি সম্ভব হলে কোম্পানিটি সম্ভবত প্রথম বাণিজ্যিক ফিউশন শক্তি উৎপাদক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
“এটি একটি বিশাল, চাক্ষুষ মুহূর্ত, যা নিয়ে আমরা সত্যিই উত্তেজিত।” --বলেন টোকামাক এনার্জি’র ড. রোড বেটম্যান।
“আমাদের চুম্বকগুলো বিভিন্ন গোলাকার টোকামাক তৈরি ও এর কার্যক্রম সক্ষম করে তোলে। আর গ্রিডে তুলনামূলক দ্রুতগতিতে পরিষ্কার ও সীমাহীন ফিউশন শক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে এটি।”
বৈদ্যুতিক উৎসের বাণিজ্যিকীকরণ এখনও সুদূরপ্রসারী বিষয় হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ কিছু সংখ্যক বড় অগ্রগতি আভাস দিচ্ছে এটি সম্ভবত এক দশকের মধ্যে অর্জন করা সম্ভব হবে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত গবেষণা সংস্থা ‘লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি (এলএলএনএল)’র বিজ্ঞানীরা প্রথম পারমানবিক ফিউশন শক্তি ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেন।
এলএলএনএল ওই অর্জনকে আখ্যা দেয় ‘মানবতার তৈরি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জগুলোর একটি’ হিসেবে। আর এটি ফিউশন থেকে পাওয়া শক্তিকে বাস্তবে ব্যবহার্য রূপে আনার প্রচেষ্টায় গতিও বাড়িয়ে দেবে।
টোকামাক এনার্জি’র প্রধান নির্বাহী ক্রিস কেলসাল বলেন, কোম্পানির নতুন চৌম্বকীয় প্রযুক্তি ফিউশন প্রক্রিয়ার মূল উপাদান প্রদান করে এই অগ্রগতি এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
“ডেমো৪ থেকে অর্জিত জ্ঞান কম খরচে গোলাকার টোকামাক পাওয়ার প্ল্যান্টের বিশ্বব্যাপী স্থাপনার মূল অনুঘটক হবে।” --বলেন কেলসাল।
“বিশ্বে প্রথমবার ‘এইচটিএস’ ম্যাগনেটিক কয়েলের সম্পূর্ণ সিস্টেম সরবরাহ করতে পেরে আমরা গর্বিত। আর এটি এখন পরীক্ষার জন্য গোটা টোকামাক কনফিগারেশনের সঙ্গে সমন্বিত করা হবে।”