তেলের জন্য সৌদি আরবকে ‘পরিণতি’ ভোগ করতে হবে: বাইডেন


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: October 13, 2022 11:23:42 | Updated: October 13, 2022 20:10:06


তেলের জন্য সৌদি আরবকে ‘পরিণতি’ ভোগ করতে হবে: বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোর আপত্তির পরও সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন ওপেক প্লাস জোট তেল উৎপাদন কামানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব সম্পর্কে এর প্রভাব পড়বে।’’ খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

গত সপ্তাহে বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক প্লাসের সদস্যরা তেলের উৎপাদন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে মার্কিন সেনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রধান প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটিক সেনেটর বব মেনেন্দেজ বলেছিলেন, অবিলম্বে অস্ত্র বিক্রিসহ সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সহযোগিতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

এরপরই এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনও কথা বললেন। সিএনএন-এর জ্যাক ট্যাপারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বললেও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তিনি ভাবছেন সে সম্পর্কে কিছু বলেননি।

হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেছেন, একটি নীতি পর্যালোচনা করা হবে। তবে কবে নাগাদ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে সে বিষয়ে কোনও ধারণা তিনিও দেননি। পুনর্মূল্যায়নের এ কাজে কে নেতৃত্ব দেবেন, সে তথ্যও জাননি।

তিনি বলেন,‘‘ আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।”

ওদিকে, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন, ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অর্থনৈতিক এবং সদস্যদেশগুলো সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আল-আরাবিয়া টেলিভিশনকে তিনি আরও বলেন, ওপেক প্লাস সদস্যরা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে এবং যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা (ওপেক) এবং তাদের মিত্র তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো (যার মধ্যে রাশিয়াও অন্তর্ভুক্ত) মিলে ওপেক প্লাস গঠিত। গত সপ্তাহে তারা তাদের তেল উৎপাদনের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে।

ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ঠেকাতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তদবিরের খাতিরে বেশ দৌড়ঝাঁপ করেছেন। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে বলেছে, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সৌদি আরব রাশিয়ার আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে। ইউক্রেইনে গত ফেব্রুয়ারির আগ্রাসণের জেরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে শাস্তি দিতে তাদের তেলের দাম বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

রাশিয়া তাদের ওই চেষ্টা আটকাতে অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে।

রয়টার্স জানায়, নিজেদের লক্ষ্য পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা গোপনে দেশটির বৃহত্তম আরব অংশীদারকে তেল উৎপাদন কমানোর ধারণা ত্যাগ করতে রাজি করানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এতে প্রভাবিত হননি।

এর মধ্য দিয়ে সৌদি আরবের রাজপরিবারের সঙ্গে বাইডেনের হোয়াইট হাউজের মধ্যকার সম্পর্কের ফাটল আরও চওড়া হয়েছে।

বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর ওয়াশিংটন ২০১৮ সালে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশুগজি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা ছিল জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

তাতে বলা হয়েছিল, যুবরাজ বিন সালমানের নির্দেশেই খাশুগজিকে আটক বা হত্যার অভিযান পরিচালিত হয়। যুবরাজ নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও বলেছেন, ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন।

গত জুলাইয়ে বাইডেন যখন জেদ্দা সফরে গিয়েছিলেন তখন তিনি যুবরাজ বিন সালমানকে বলেছিলেন, তিনি মনে করেন খাশুগজি হত্যার দায় তার (যুবরাজের)।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, কীভাবে এ বিষয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত, সেটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, এখনই তিনি এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে ইচ্ছুক হবেন...এটা এমন কিছু নয় যে খুব বেশি সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে বা অপেক্ষা করা উচিত।”

তবে চাইলেই সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটানো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ কঠিন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাইডেন প্রশাসন চাইলেই ইরানকে এড়িয়ে যেতে পারবে না। ইরান যুক্তরাষ্ট্রের চিরশত্রু এবং সৌদি আরবের সবথেকে বড় আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী।

ওই অঞ্চলে ইরানের হুমকির কথা মাথায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করে সৌদি আরবের কাছে।

তিনি বলেন,‘‘সেখানে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেগুলোর কিছু কিছু ইরান থেকে উদ্ভুত। ইরান শুধু ওই অঞ্চলে নয় বরং তার বাইরেও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আমরা নিশ্চিত ভাবেই এর থেকে চোখ সরিয়ে নিতে পারবো না।”

প্রিন্স ফয়সাল এ বিষয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে যে সামরিক সহায়তার সম্পর্ক রয়েছে তা দুই দেশের স্বার্থেই বজায় থাকা জরুরি।

 

Share if you like