ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চলাচল কমে গেছে। মোড়ে মোড়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরও গাড়ি না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন অনেকে৷
শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি৷ বেলা বাড়ার পর স্বল্প দূরত্বের কিছু বাস বের হলেও পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে৷ মহাসড়কের শিমরাইল ও সাইনবোর্ড এলাকায় সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও আটকে দেওয়া হচ্ছে। ছোট বাসগুলোতেও চালকরা বেশি দূরত্বের যাত্রী তুলছেন না। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে; বসানো হয়েছে চৌদ্দটি তল্লাশি চৌকি। সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও অটোরিকশা সাইনবোর্ড মোড়ে থামিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।
হিমালয় ট্রান্সপোর্ট পরিবহনের বাস মদনপুর থেকে ঢাকার মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করে৷ সকালে বাসটিতে কেবল চিটাগাং রোড পর্যন্ত যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। বাসটি কাঁচপুর থামলে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন৷ জায়গা না পেয়ে কয়েকজনকে বাসের গেট ধরে ঝুলেই রওনা করতে দেখা গেছে।
এ বাসের চালকের সহকারী শফিক বলেন, “পুলিশ বাস থামিয়ে দেয়। এ কারণে ঢাকার দিকে যাইতে পারি না৷ চিটাগাং রোড পর্যন্ত চালাইতেছি৷”
নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রফিকুলের বাবা সিরাজগঞ্জ জেলার শাহ্জাদপুরে গ্রামের বাড়িতে শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে মারা গেছেন। বাবাকে শেষ বারের মত দেখতে যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় সকাল ৬টার দিকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
রফিকুল বলেন, “স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বাবাকে শেষবার দেখতে যাব তাই বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। এমনি সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে উঠে সরাসরি গ্রামের বাড়ি যেতে পারি তিন-সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যেই। কিন্তু আজকে আধা ঘণ্টার উপরে দাঁড়িয়ে থাকার পরও কোনো বাস পাচ্ছি না। সকালে কাউন্টারে বলেছে, বিএনপির সমাবেশের জন্য গাড়ি ছাড়বে না, নিষেধ আছে৷
“এখন কিভাবে যে যাবো বুঝতে পারতেছি না৷ ভেঙে ভেঙে কতোক্ষণে পৌঁছাবো জানি না৷ বাবার মুখটা শেষবার দেখতে পারবো কিনা তাও জানি না৷”
৩২ বছর বয়সী আলামিন সাভারের নবীনগরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন৷ শুক্রবার ছুটি পেয়ে নারায়ণগঞ্জে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন৷ কিন্তু কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
আলামিন বলেন, “সাইনবোর্ড থেকে গাড়ি সরাসরি সাভার যায়৷ কিন্তু আজকে কিছু দেখতেছি না৷ গাড়ি-টাড়ি বন্ধ কইরা দিলে তো আমাদের মতো কর্মজীবীদের সমস্যা৷ অফিস তো আর বন্ধ থাকে না৷”
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের মৌচাক ও সাইনবোর্ডে দুটি তল্লাশিচৌকিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কাঁচপুর সেতুর পূর্বপাশেও পুলিশের তল্লাশিচৌকি বসেছে।
এসব স্থানে ঢাকামুখী লেনে চলাচল করা গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে দেখা গেছে; আর চালকদের গাড়ি ঘুরিয়ে একইপথে ফিরে যাওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছে পুলিশ৷
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাই লাউ মারমা বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, মৌচাক, কাঁচপুর, মদনপুর, তিনশ ফুট এলাকাসহ ১১টি স্থানে তল্লাশিচৌকিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে তাদের কার্যক্রম চলছে। সন্দেহভাজন মনে হলে যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে৷
“বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ বিস্ফোরক দ্রব্য বহন করছে কিনা সেসব তল্লাশি করে দেখা হচ্ছে৷ তবে যাত্রীরা যাতে হয়রানি না হয়, সে বিষয়ে পুলিশ তৎপর আছে৷”
এদিকে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের তৎপরতাও লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কাঁচপুর, শিমরাইল, সাইনবোর্ডসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও শহরের মোড়ে মোড়ে তারা অবস্থান নিয়েছেন।
সোঁনারগা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত যাতে সহিংসতা করতে না পারে, তাই কেন্দ্রের নির্দেশে তারা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপি কোনো অরাজকতা করলে তাদের প্রতিহত করা হবে।