ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপে উঠে আসা বার্জটিকে নামানোও কঠিন হয়ে দেখা দিয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ঝড়ের পরদিন মঙ্গলবার টাগবোট দিয়ে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বার্জটি। এখন চট্টগ্রামের বেসরকারি উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এটিকে সাগরে নামানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট রাগিব তানজুম স্বর্ণাভ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জোয়ার আর ঝড়ো হাওয়ার কারণে বার্জটির অবস্থান এখন পরিবর্তন হয়েছে। এটি এখন বেশ উপরে উঠে এসেছে। প্রায় পুরোটাই এখন ছেঁড়াদ্বীপের উপরে আছে।”
বার্জটি খুব ‘বাজেভাবে’ আটকে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বার্জটির মালিক পক্ষের তরফ থেকে একটি টাগবোট এসেছিল। তারা আজ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। পরিস্থিতি দেখে তারা যেটি জানিয়েছে যে, তাদের একার পক্ষে এটিকে সমুদ্রে নামানো সম্ভব হবে না। বার্জটিকে উদ্ধারে তারা বাংলাদেশের প্রান্তিক বেঙ্গল স্যালভেজ অ্যান্ড ডাইভিংয়ের সাথে যোগাযোগ করেছে।
“আগামীকাল চট্টগ্রাম থেকে তাদের একটি দল আসবে। অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তারা এটিকে কীভাবে নামানো যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।“
চট্টগ্রামের প্রান্তিক বেঙ্গল স্যালভেজ অ্যান্ড ডাইভিংয়ের অপারেশন ম্যানেজার শোয়েব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বার্জটি উদ্ধারে ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, এখনও ফাইনাল হয়নি।”
কবে নাগাদ উদ্ধার তৎপরতা শুরু হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আলোচনা ফাইনাল হলে তখন জানানো যাবে।”
সোমবার নৌযানটিকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তার উপর উঠে কোনো মানুষকে দেখতে পায়নি, কক্ষগুলোও ছিল তালাবদ্ধ।
ওই বার্জ ভেসে আসার তথ্য ও ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় নানা আলোচনা।
কক্সবাজারের টেকনাফের ইউএনও এরফানুল হক চৌধুরীর ধারণা, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বার্জ টেনে নেওয়ার টাগবোট থেকে ছুটে গিয়ে ভেসে এসেছে এটি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার দুপুরে ছেঁড়াদ্বীপ সংলগ্ন সাগরে এ বার্জটি ভেসে আসে। তবে ভেসে আসা বার্জটিতে কোনো লোকজন নেই। স্থানীয়রা বার্জটি ভেসে আসতে দেখে প্রশাসনকে অবহিত করে। এতে পাথর ও কঙ্কর বোঝাইয়ের আলামত দেখা গেছে।”
ভেসে আসা বার্জটিতে লোকজন ও কোনো পতাকা না থাকায় শুরুতে এটি শনাক্ত করা পারেননি স্থানীয়রা। এর গায়ে লেখা নাম ‘এম আর ৩৩২২’ ধরে আন্তর্জাতিকভাবে জাহাজের তথ্যদাতা ওয়েবসাইট ‘মেরিটাইম ডিরেক্টরি’ ঘুরে দেখা যায়, এটি সিঙ্গাপুরের। মালিকানা প্রতিষ্ঠানের নাম মেরিনা টোয়েজ প্রাইভেট লিমিটেড।
১০ হাজার টনের কিছু বেশি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই বার্জটি ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর তৈরি করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ১০০.৬ মিটার এবং প্রস্থ ৩০.৪৯ মিটার।
মেরিনা টোয়েজ প্রাইভেট লিমিটেডের অধীনে এমন আরও পাঁচটি নৌযান আছে; যার মধ্যে তিনটি বার্জ এবং দুটি তরল পণ্যবাহী ট্যাংক বার্জ।
চট্টগ্রাম বন্দরে আসা নৌযানের তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, সিঙ্গাপুরের এই বার্জটিকে ভাড়া করে বাংলাদেশে এনেছিল স্থানীয় এজেন্ট চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের জার ওয়ার্ল্ড লজিস্টিকস। বার্জটি তখন ৪২৩৬ টন পাথর বহন করছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টমসে পণ্য খালাসের জন্য দেওয়া বাতিকর শুল্ক চালানপত্রে দেখা গেছে, এই নৌযানটি গত ১৮ অক্টোবর মালয়েশিয়ার মালাক্কার লুমুট বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছায়। ১৯ অক্টোবর এটি শুল্ক পরিশোধ করে বন্দরের কাছ থেকে পণ্য খালাসের অনুমতি নেয়।
বার্জটিকে ভাড়া করে আনা এজেন্ট জার ওয়ার্ল্ড লজিস্টিকসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ নয়ন হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৯ তারিখে পণ্য খালাসের অনুমতি পেলেও এই বার্জটি বহির্নোঙরে আসে এর আগের দিন। মালয়েশিয়া থেকে নির্মাণকাজের জন্য নিয়ে আসা পাথর খালাসের জন্য সেটি কুতুবদিয়ায় গিয়েছিল।
“পাথর খালাস শেষ করে ২২ অক্টোবর বন্দরের ছাড়পত্র নিয়ে এটি তার ক্যাপ্টেন ও ক্রুদের নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বের হয়ে গেছে।”
বার্জটির পরের গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়ার সেই লুমুট বন্দরই। তবে চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়ার পর নৌযানটি আর তাদের অধীনে ছিল না বলে জানান নয়ন।
কীভাবে এটি সেন্টমার্টিনে গেল, এ প্রশ্নের উত্তরে একই প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা অপু দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই বার্জটি নিজে চলতে পারে না। তাকে টাগবোট দিয়ে টেনে নিতে হয়। পণ্য খালাস করে টাগ আর বার্জ দুইটাই একসঙ্গে মালয়েশিয়ার দিকে যাচ্ছিল। তখন ঝড়ো বাতাসে বার্জটি টাগ থেকে ছুটে গিয়ে এদিকে চলে এসে থাকতে পারে।”
কবে বার্জটি মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা করতে পারে? কোস্টগার্ড কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট রাগিব তানজুম স্বর্ণাভ বলেন, “খুব দ্রুত এটিকে সরানোর সম্ভাবনা নেই। মালয়েশিয়ার উদ্দেশে এখন রওনা হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।”