এ প্রশ্ন শুনে যে কেউ চমকে উঠতেই পারেন, ঠোঁট চেপে না রেখেই অট্টহাসি হাসতেও পারেন। কারণ নোবেল পুরস্কারের মতো মহার্ঘ্য অর্জন একবার সম্ভব হলেই জীবন ধন্য হয়ে যায়। সেখানে হাতের কড়ে নোবেল পুরস্কার গোনার বিষয়টি নিতান্তই বাতুলতা। কিন্তু এমনও মানুষ আছেন, যারা তাদের জীবদ্দশায় অর্জন করেছেন একাধিক নোবেল। প্রতি বছর পদার্থ, রসায়ন, অর্থনীতি, চিকিৎসা, শান্তি এবং সাহিত্য – এই ৬টি বিষয়ে প্রদান করা হয় নোবেল পুরস্কার। আর এই অর্জন কেউ কেউ একাধিকবার পেয়েছেন একই বিষয়ে, কেউবা ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে।
মেরি কুরি
ছবি: প্রজেক্ট ব্রেইন লাইট
নোবেল বিষয়ক আলোচনা উঠলেই মেরি কুরির প্রসঙ্গ আসতে বাধ্য। অসম্ভব মেধাবী ক্ষণজন্মা এই পোলিশ-ফ্রেঞ্চ বিজ্ঞানী শুধু প্রথম নোবেল বিজয়ী নারী-ই নন, এর পাশাপাশি দুইটি নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী একমাত্র নারীও বটে। ১৯০৩ সালে মেরি কুরি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান পিয়েরে কুরি এবং হেনরি বেকেরেলের সাথে তেজস্ক্রিয়তার ধর্ম নিয়ে গবেষণার জন্য। পরবর্তীতে ১৯১১ সালে এসে তিনি আবারও নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। এবার রসায়নে এবং এককভাবেই তিনি নোবেল বিজয়ী হন পিচব্লেন্ড থেকে রেডিয়াম পৃথকীকরণের জন্যে। মজার বিষয় হচ্ছে, আজো বিজ্ঞানের দুইটি ভিন্ন বিষয়ে নোবেল বিজয়ী একমাত্র ব্যক্তি মেরি কুরি।
লাইনাস কার্ল পাউলিং
ছবি: নোবেল প্রাইজ ডট অর্গ
রসায়নশাস্ত্রের শিক্ষার্থীদের কাছে এক অন্যতম পরিচিত নাম লাইনাস পাউলিং। রাসায়নিক বন্ধনের ওপর গবেষণা এবং অরবিটাল সংকরণ তত্ত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কারের জন্য ১৯৫৪ সালে পাউলিংকে রসায়নে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। তবে, সেখানেই শেষ নয়। সারাবিশ্ব জুড়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো যখন পারমাণবিক অস্ত্রের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যের বিস্তার ঘটানোর প্রয়াস চালাচ্ছিল, এমনই এক সময়ে বিজ্ঞানী পাউলিং পারমাণবিক শক্তির পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ আইন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টার জন্য শান্তিতে ১৯৬২-এ নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। মার্কিন বিজ্ঞানী লিনাস পাউলিং-ই একমাত্র নোবেল বিজয়ী যিনি দুটি নোবেল পুরস্কারই এককভাবে পেয়েছেন।
জন বারডিন
ছবি: ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট
১৯৫৬ সালে উইলিয়াম ব্রাডফোর্ড শকলি এবং ওয়াল্টার হাউজার ব্রাটেইনের সাথে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলে ভূষিত হন জন বারডিন। তাদের গবেষণার বিষয় ছিল অর্ধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টর এবং তারা অর্ধপরিবাহীর ট্রানজিস্টর ইফেক্ট আবিস্কার করেছিলন। এর ১৬ বছর পর আবারও বারডিন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী হন। জন বারডিন, লিওন নিল কুপার এবং জন রবার্ট স্ক্রিফার অতিপরিবাহিতা বা সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে গবেষণা করেন এবং বারডিন-কুপার-স্ক্রিফার বা বিসিএস থিওরির জন্ম দেন। আণুবীক্ষণিক পর্যায়ে এটাই ছিল সুপারকন্ডাক্টিভিটির ওপর সে সময়কার সবচেয়ে জোরালো তত্ত্ব।
ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার
ছবি: রয়টার্স
প্রোটিনের সংগঠণ, বিশেষ করে ইনসুলিনের রাসায়নিক গঠনের ওপর গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্যে ১৯৫৮ সালে ব্রিটিশ প্রাণরায়নবিদ ফ্রেডরিক স্যাঙ্গারকে রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে রসায়নের নোবেল পুরস্কার ভাগাভাগি করে নেন ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার, ওয়াল্টার গিলবার্ট এবং পল বার্গ। পল বার্গ তাঁর রিকম্বিনেন্ট ডিএনএর ওপর গবেষণার জন্য পান পুরস্কারের অর্ধেক অংশ। অন্যদিকে, স্যাঙ্গার এবং গিলবার্ট নিউক্লিক এসিডের বেস সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ পান নোবেল পুরস্কারের এক - চতুর্থাংশ করে।
কার্ল ব্যারি শার্পলেস
ছবি: সায়েন্স নেট
একাধিক নোবেলের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন মার্কিন রসায়নবিদ কার্ল ব্যারি শার্পলেস। ২০২২ সালের রসায়নে নোবেল বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে কার্ল ব্যারি শার্পলেস, ক্যারোলিন রুথ বেরটোজি এবং মর্টান মেলডালের নাম। ক্লিক রসায়ন এবং বায়োঅর্থোগোনাল রসায়নে অবদানের জন্য তারা পাবেন এই পুরস্কার এবং প্রত্যেকেই পাবেন পুরস্কারের এক তৃতীয়াংশ করে। এর আগে ২০০১ সালেও নোবেল পেয়েছিলেন শার্পলেস। সেবার কাইরাল প্রভাবক ব্যবহার করে জারণ ঘটানোর উপায় আবিস্কার করে তিনি পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কারের অর্ধাংশ। কাইরাল প্রভাবকের হাইড্রোজেনেশন আবিস্কার করে পুরস্কারের বাকি অর্ধেক ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন রিওজি নয়োরি এবং উইলিয়াম স্টান্ডিশ নোয়েলস।
প্রতিষ্ঠান
ছবি: উইকিপিডিয়া
ব্যক্তি হিসেবে একাধিকবার নোবেল বিজয়ীদের নাম পরিচিত হলেও এমন অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ততোটা সামনে আসে না। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউ এন এইচ সি আর) ১৯৫৪ ও ১৯৮১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্যা রেড ক্রস (আই সি আর সি) প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯১৭, ১৯৪৪ এবং ১৯৬৩ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হয়।
সিরাজুল আরিফিন বর্তমানে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।