আগামী সংসদ নির্বাচনে অর্ধেক আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে আট হাজার টাকার প্রকল্প দাঁড় করিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে তা পরিকল্পনা কমিশন থেকে ফেরত আসার পর ইসির পক্ষ বলা হল, মধ্য জানুয়ারিতে এই প্রকল্প অনুমোদন না পেলে তাদের পরিকল্পনা আটকে যাবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বুধবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রজেক্টটা মধ্য জানুয়ারির মধ্যে পাস না হলে পরবর্তী কাজগুলো করা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের অতিরিক্ত ইভিএম ব্যবহার সম্ভব হবে না।”
আগামী বছরের শেষে কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ওই নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে দেড়শ আসনে যন্ত্র বা ইভিএমে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনাও সাজিয়েছে ইসি।
বর্তমানে ইসির কাছে যে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে, তা দিয়ে সর্বাধিক ৭০-৮০টি আসনে যন্ত্রে ভোট নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।
তাই ইসি ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ একটি প্রকল্প গ্রহণ করে গত অক্টোবরে তা সরকারের কাছে পাঠায়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার লক্ষ্যে প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা এবং রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি নেওয়ার কথা বলছে ইসি।
মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশন কিছু ‘পর্যবেক্ষণ’ দিয়ে প্রকল্পটি ইসিতে ফেরত পাঠিয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রকল্পটি জানুয়ারির মধ্যে অনুমোদন প্রয়োজন বলে মনে করছেন আলমগীর।
তিনি জানান, প্রকল্প অনমোদনের পর এলসি খোলা, যন্ত্রাংশ দেশে আনা, মান পরীক্ষা করা, প্রশিক্ষণ, মাঠে ইভিএম পাঠানো, কাস্টমাইজেশনের জন্য তাদের সময় লাগবে।
“ডিসেম্বরের শেষে বা মধ্য জানুয়ারির মধ্যে আমাদের এ প্রজেক্ট পাস হতে হবে। এরপরে হলে সম্ভব হবে না, টাইম আর এলাউ করবে না। প্রজেক্ট পাস হলে ওয়ার্ক অর্ডার দিতে সময় তেমন সময় লাগবে না; এক্ষেত্রে টেন্ডারও দিতে হবে না।”
নতুন ইভিএমের জন্য জানুয়ারির মধ্যে ক্রয়াদেশ দিতে চাইছে ইসি।
আলমগীর বলেন, “আমরা মোটামুটি হিসাব করে দেখেছি- ওয়ার্ক/সাপ্লাই অর্ডারটা জানুয়ারির মধ্যে দিতে হবে। জানুয়ারির মধ্যে যদি না পাই; সে হিসাবে জানুয়ারির পরে হলে আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না বলে আমরা মনে করি।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশন ‘যৌক্তিকভাবে’ প্রকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেছে। পর্যবেক্ষণ কী দিয়েছে, তা ইসি সচিবালয় জানে। বিষয়টি কমিশনে উপস্থাপন হলেই বিস্তারিত জানতে পারবেন তারা।
বাজার দর আগের দামেই
নির্বাচন কমিশনার আলমগীর জানান, এবারের ইভিএম কেনায় ২০১৮ সালের মতো একই দর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ডলারের দাম সমন্বয় করতে গিয়ে তুলনামূলকভাবে এবার ব্যয় বেশি হচ্ছে।
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) ইভিএম কেনাকাটায় একমাত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বাজার দর যাছাইয়েরও সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “যে জিনিস একাধিক জায়গায় পাওয়ার সুযোগ থাকে, সেখানে বাজার দর যাচাই করার সুযোগ থাকে। যেখানে সিঙ্গেল সোর্স হয়, সেখানে তো বাজার দর যাচাই করার সুযোগ থাকে না।
“ইভিএমের যে সোর্স বিএমটিএফ, আগে তারা যে দরে দিয়েছিল ওই রেটেই দিয়েছে। শুধু ডলারের দাম ফ্ল্যাকচুয়েট করায় অ্যাডজাস্ট করতে গিয়ে আগের চেয়ে দাম বেশি হয়েছে। এছাড়া আগের দামেই রাখা হয়েছে।”
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে বৃহস্পতিবার বসবে একটি কমিটি। রোববার তা চূড়ান্ত করে পরিকল্পনা কমিশনে ফের পাঠানো হবে।
কারিগরি ওই কমিটিতে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রয়েছেন বলে জানান তিনি।