Loading...
The Financial Express

জন্মের পরপরই পাওয়া যাবে এনআইডি, আইন হচ্ছে

| Updated: October 11, 2022 13:40:15


প্রতীকী ছবি প্রতীকী ছবি

নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কাজ সরকারের অধীনে আসার পাশাপাশি শিশুর জন্মের পরপরই জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনে নতুন আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পর এই তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

দেড় দশক আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজটি নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হয়েছিল। এরপর নির্বাচন কমিশনই ছিল এর ব্যবস্থাপনায়।

এখন নির্বাচনের কমিশনের আপত্তির মধ্যেই তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে আনছে সরকার।

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী এনআইডির নিবন্ধন প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের কাছে ছিল। নির্বাচন কমিশন থেকে এখন এটা সরকারে নিয়ে আসতে চাচ্ছে।

“এজন্য এটা হোম মিনিস্ট্রি বা সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু যে আইনটা উনারা আজকে এনেছেন, সেটা আমরা পরিবীক্ষণ করেছি। মন্ত্রিসভা মনে করে যে, এই আইনটা আরেকটু রিভিউ করা দরকার।”

তিনি বলেন, নতুন আইনটি পাস হয়ে যাওয়ার পরে এনআইডির পুরো কাজ সুরক্ষা সেবা বিভাগ করবে। তখন জন্মের সাথে সাথে এনআইডি হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে এনআইডি তৈরির ইতিহাসের উপর আলোকপাত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব একে সরকারের অধীনে আনার যুক্তি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, মূলত ১৯৯৬ সালে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। পরে যা এনআইডি হিসাবে রূপান্তর করা হয়।

“কিন্তু বেসিক কনসেপ্ট তখন ছিল নির্বাচন সম্পর্কিত। পরে যখন এনআইডিতে টার্ন হল, তখন এটার সাথে সব কর্মসূচি এবং আইডেন্টিফিকেশন সব কিছু যোগ করে দেওয়া হল। এখন দেখা যাচ্ছে, এটা নির্বাচন কমিশনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা।”

এর ব্যাখ্যায় আনোয়ারুল বলেন, “নির্বাচন কমিশন তো সব ক্ষেত্রে সরকারের সাথে অত ডিরেক্ট রিলেটেড না। সেজন্য এটা ডিসিশন অনুযায়ী সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা পাসপোর্টটা হ্যান্ডল করে।”

এনআইডি সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে কবে যাবে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আইন যতদিন পর্যন্ত না হবে, ততদিন স্বরাষ্ট্রতে আসবে না। এখন যেভাবে আছে চলতে থাকবে, ওই নির্বাচন কমিশনের অধীনে।

“নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শর্ত হল, লেজিসলেটিভ ডিভিশন সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে পরামর্শ করবে এবং কেবিনেটকেও কনসাল্ট করে যথাসম্ভব, যে আইনটা আগে ছিল, সেটাকেই বেটার মনে হয়েছে, সেটার সাথে কোনো কিছু যোগবিয়োগ করা হয়, ওভাবে করে দিতে বলা হয়েছে।”

এই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে পুনরায় মন্ত্রিসভায় আইনটি উঠতে এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে বলে ধারণা দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এক ব্যক্তি এক নম্বর

বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো এক ব্যক্তির জন্য একটি নম্বর রাখার পরিকল্পনা সরকার নিচ্ছে, যেটাকে বলা হয় ‘ইউনিক আইডি’।

এখন বাংলাদেশে এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম নিবন্ধনের নম্বর, পাসপোর্টের নম্বর সব আলাদা। এতে একজনের অনেকগুলো নম্বর বহন করতে হচ্ছে।

ইউনিক আইডির ধারণা দিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, “ইউনিক আইডি, একটাই আইডি থাকবে সবার। জন্মের সময় যে নম্বরটা পড়বে, আইডি কার্ডটা হবে, এটাই সবক্ষেত্রে সারাজীবন থাকবে।

চূড়ান্ত বিচারে সরকার প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একক পরিচয়পত্রের দিকে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সব কিছু মিলিয়ে আর্লি রেজিস্ট্রেশন বা জন্মের সাথে সাথে যে রেজিস্ট্রেশনটা হবে, আলটিমেটলি আজ থেকে ৫-৬ বছর পরে ওইটাই সব জায়গায় নম্বর হইতে থাকবে। সেজন্য পাসপোর্টের সাথে সিক্রোনাইজ করে জন্মের সময় নম্বরটা দিয়ে দেওয়া হবে।

“আগামী ৩-৪ বছর পর থেকে জন্মের সাথে সাথে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট, আই ইমপ্রেশন, ফেস ইমপ্রেশন- সবই দিয়ে দেওয়া হবে, মোডিফিকেশন হবে এখানে। তো, আমরা যারা বয়স্ক, আমাদের তো আর মোডিফিকেশন লাগবে না। আমাদের একবারে দিয়ে দিলে হবে।”

তবে সে জন্য সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা আপনার-আমার জন্য এখনই সম্ভব না। কারণ, আমাদের আলাদা আলাদা হয়ে গেছে, আমাদের জন্ম অনেক আগে হয়ে গেছে। এটা আইনটা বাস্তবায়ন হওয়ার পরে আলাপ-আলোচনার করে একটা যৌক্তিক সময় দিয়ে তার পরে যে নাম্বারটা পড়বে, সেটাই পরবর্তীতে সব জায়গায় নাম্বারটা হবে।”

তাহলে জন্ম নিবন্ধন অধিদপ্তর সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে চলে যাবে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এটা আইনটা হলে, রুলটা হলে জিনিসটা পরিষ্কার হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত যেভাবে আছে সেভাবে চলবে।

“কিন্তু এগুলো নিজেরা বসে, যাতে ইন্টারঅপারেবিলিটি থাকে, ডুপ্লিকেশন না হয়, কেউ যেন বাদ না পড়ে- এই জিনিসগুলো দেখে দেখে তারপর কাজ করতে হবে।”

ভোটার আইডির কী হবে?

ভোটার আইডি কোন প্রক্রিয়ায় হবে- এ প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “ভোটার আইডি তো হলে ১৮ বছর ও তার উপরে। এখন একটা ডাটাবেইজ করে, যেহেতু আমরা ডিজিটাল অবকাঠামো করে ফেলছি, ইন্টারঅপারেবিলিটি একটা সিস্টেমে যাবে।

“অটোমেটিক ১৮ ও তার উপরের সবগুলো আপনার ইলেকশন কমিশনের কাছে চলে যাবে, নির্বাচন কমিশন করতে পারবে। পাসপোর্ট বা অন্যান্য সার্টিফিকেটের জন্য, সবার ওয়ার্কিং এন্ট্রি থাকবে ওই ডাটাবেইজে।”

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন যেহেতু স্বাধীন, যদি তারা মনে করে ইন্টারঅপারেবিলিটি যেটা থাকবে, সেখান থেকে ডাটা নিয়ে পারপাস সার্ভ করবে। আবার তারা যদি মনে করে, তাদের অতিরিক্ত কিছু দরকার, এটা তাদের ইস্যু।”

এই ডাটাবেজ সবাই কীভাবে ব্যবহার করতে পারবে, সেই ধারণা দিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, “ভোটার তালিকা ভিন্ন বিষয়। ওইটা হচ্ছে ১৮ বছর ও তার উপরে। যদি কেউ এখানে ইনপুট দেয়, আমি কত ভোটার দেখতে চাই, ওইখানে রিড অনলি থাকবে, তারা কোনো সার্ভারে ঢুকতে পারবে না, এডিট করতে পারবে না, সে দেখে নিতে পারবে। আপনি-আমি পারব।

“নির্বাচন কমিশনের জন্য ওপেন রাখা যাবে, হয়ত পুলিশের জন্য ওপেন থাকবে। হয়ত একটা ক্লিক করলে পুরো ভোটার তালিকা তাদের কাছে চলে আসবে।”

এক সার্ভারের অধীনে থাকা তথ্য থেকে সবাই ব্যবহার করতে পারবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই সিস্টেম থাকবে। আবার একটা চুক্তিরও সিস্টেম থাকবে। ধরেন, কোনো ডিপার্টমেন্ট বা কোনো ইয়ে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ডাটাবেইজগুলো লাগতেছে, তখন এক্সট্রা চুক্তি করে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী মডিফাই করে নিতে পারবে।”

ভোটার আইডি করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের আশঙ্কার বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “সরকার এটা চিন্তা করছে… নির্বাচন কমিশনের মূল কাজ হল ভোটার রিলেটেড কাজ করা। তারা ভোটার রিলেটেড কাজ করে।

“তো, ভোটার নিয়ে তো সরকার ইনভলভড হচ্ছে না। সিস্টেম করে সরকার তাদেরকে একটা ডাটাবেইজ অফার করবে যে, তোমরা নাও। তারা যদি মনে করে যে, সরকারেরটা আমরা নেব না, তারা আলাদা তাদের মতো করতে পারবে।”

এনআইডি, ভোটার আইডি ও জন্ম নিবন্ধনের কর্তৃপক্ষ আলাদা থাকবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “যখন আমরা সিঙ্গেল রেজিস্ট্রেশনে চলে যাব, যখন এস্টাবলিশড হয়ে যাবে, তখন হয়ত থাকতে পারে আলাদা… ইন্টারঅপারেবিলিটি থাকবে তাদের মধ্যে।”

নতুন আইনে কী পরিবর্তন

নীতিগত অনুমোদন দিলেও ২০১০ সালের আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন আইনটি পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, “৩২টা ছিল ধারা। সেখান থেকে কমিয়ে ১৫ ধারায় আনা হয়েছে। অনেকগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো কেবিনেট এগ্রি করে নাই। বলেছে, এটাকে আবার রিভিউ করে আনার জন্য।

“৬-৭টা ছিল অপরাধ এবং আলাদা আলাদা দণ্ড ছিল। এই আইনে কী করা হলো, সবগুলোকে একসাথে করে সাত বছরের কারাদণ্ড। মাইনর অফেন্সের জন্য তো ৭ বছরের কারাদণ্ড হবে না। সেজন্য এগুলোকে সেপারেট করে করে রেখে দিতে হবে।”

অন্যান্য কাজে এনআইডি ব্যবহারের ‍সুযোগ রাখার ধারা যুক্ত করতেও বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মন্ত্রিসভা বলছে যে, এটাকে আবার রিভিউ করে আগের যে ৩২টা ধারা সেই অনুযায়ী করে ওটার সাথে যদি কোনো অ্যাড করে বা মাইনাস হয় দুয়েকটা, এটা ভিন্ন বিষয়।

“লেজিসলেটিভ ডিভিশন সবাইকে ডেকে এবং আমাদের সাথে কথা বলে যথাসম্ভব এটাকে ওই ৩২টা ধারার অনুরূপ একটা আইন নিয়ে আসবে আর কী।”

Share if you like

Filter By Topic