চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সমঝোতামূলক এক বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের ‘নতুন স্নায়ু যুদ্ধ’ হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, চীন তাইওয়ানে আক্রমণ করবে, এটা তিনি বিশ্বাস করেন না।
বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সোমবারই প্রথম দুই পরাশক্তির শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি২০ সম্মেলন শুরুর আগের দিন দ্বীপটিতে হওয়া এ বৈঠকে দুই নেতা উত্তর কোরিয়া ও ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযান নিয়েও কথা বলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দুই প্রেসিডেন্টই জানান, তারা ইউক্রেইনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিপক্ষে।
শান্তির জন্য চীনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে শি বলেছেন, “জটিল সমস্যার কোনো সহজ সমাধান নেই।”
বাইডেন তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “চীন উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এই বিষয়ে আমি সুনিশ্চিত, এমনটা বলা কঠিন।”
নতুন কোনো পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা থেকে পিয়ংইয়ংকে বিরত রাখতে চীনের ‘দায় আছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বালিতে শি-র পদার্পণের পর বিলাবসহুল একটি হোটেলে দুই নেতার তিন ঘণ্টার বৈঠকে তাইওয়ান ইস্যুই প্রাধান্য পেয়েছে।
স্বশাসিত এ দ্বীপটিকে চীন তাদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ বলে মনে করে; দ্বীপটিকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করতে প্রয়োজনে বল প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয় না তারা।
এদিকে তাইওয়ান নিজেদেরকে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র দাবি করে; যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপটিকে চীনের অংশ (যা এক চীন নীতি হিসেবে পরিচিত) মনে করলেও তাইপের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
তাইওয়ানে আক্রমণ হলে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারও আছে ওয়াশিংটনের। স্বশাসিত এ দ্বীপটিই মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের মাঝে কাঁটা হয়ে আছে।
অগাস্টে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্ক উত্তেজনার চূড়ায় পৌঁছেছিল।
পেলোসির সফরের পাল্টায় চীন তাইওয়ানের চারপাশে বড় বড় সামরিক মহড়া করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কাও সৃষ্টি করেছিল।
সোমবার শি তাইওয়ান যে ‘চীনের মূল স্বার্থের মূলে অবস্থিত এবং এটি যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের প্রথম লাল দাগ, যেটি টপকানো যাবে না’ তাও জোর দিয়ে বলেছেন বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
চীন তাইওয়ানে আক্রমণের পরিকল্পনা জোরদার করছে বলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন কর্মকর্তারা বারবার সতর্ক করছিলেন।
বাইডেন এটি বিশ্বাস করেন কিনা এবং নতুন স্নায়ু যুদ্ধ আসন্ন কিনা, সোমবার সাংবাদিকরা তা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে জানতে চান।
“আমি পুরোপুরিই বিশ্বাস করি, নতুন স্নায়ু যুদ্ধের দরকার নেই। শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আমার অনেকবার সাক্ষাৎ হয়েছে, আমরা একে অপরের সঙ্গে অকপট ও স্পষ্টভাষায় কথা বলেছি। তাইওয়ানে আক্রমণের ব্যাপারে চীনের দিক থেকে শিগগিরই কোনো চেষ্টা হবে বলে মনে করছি না আমি।
“আমি পরিষ্কার করে বলেছি, তাইওয়ান প্রণালীর এপার-ওপারের ইস্যুগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধান দেখতে চাই আমরা, তেমনটা হলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির উদ্ভবই হবে না কখনো,” জবাবে বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আলোচনার প্রক্রিয়া ঠিক করতে দুই নেতা রাজি হয়েছেন বলেও বাইডেন জানিয়েছেন; মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন শিগগিরই চীন সফরে যাবেন বলেও তিনি জানান।
বাইডেন বলেন, তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের যে কোনো বদল হয়নি তা তিনি শি-র কাছে স্পষ্ট করেছেন।
“যে অবস্থান আমাদের ছিল, একই অবস্থান এখনও আছে,” বলেছেন তিনি।
শি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাইওয়ান নিয়ে ‘কথা, কাজে মিল রাখার’ আহ্বান জানিয়েছেন বলে খবর চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের।