চীন যখন তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়েছে, পাকিস্তান ভাসছে বন্যায়; ধান উৎপাদক এ বড় দুই দেশে ফসলের ক্ষতি বিশ্বের চালের বাজারে চোখ রাঙালেও সঙ্কট এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তাদের সাথে কথা বলে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে লিখেছে, প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোর পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে পাকিস্তান ও চীনের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব, তাতে এশিয়ার বাজারে চালের দামে স্থিতিশীলতা আসতে পারে।
সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ পাকিস্তান চালের উৎপাদনসহ কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
অন্যদিকে অগাস্টের শেষ দিকে রেকর্ড তাপপ্রবাহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল আমদানিকারক দেশ চীনে ধান উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে।
চালের ব্যবসায় বিশ্বের অন্যতম বড় এক কোম্পানির এক ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে রয়টার্সকে লিখেছে, পাকিস্তান ও চীনে চালের উৎপাদন কমার আশঙ্কা থাকলেও বিশ্বে চালের মজুদ এখন সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশে হঠাৎ করে চালের চাহিদা বেড়ে গেলেও ভারতে এবার উৎপাদন বাড়ার আভাস মিলেছে। ফলে চাল নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কট বা দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি হয়ত সামাল দেওয়া সম্ভব।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, বন্যার কারণে তা প্রায় ১০ শতাংশ কম হতে পারে। খরার কারণে চীনেও চালের উৎপাদন মার খাবে, তবে পরিমাণ এখনও স্পষ্ট নয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাতে ফসল নষ্ট হওয়ায় এবং সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায় বাজারে খাদ্যের দাম বেড়েছে। চলমান আর্থিক সংকটের মধ্যেই কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা পাকিস্তানকে বড় ধরনের খাদ্য ঘাটতিতে ফেলে দিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিলের বাজার বিশ্লেষক পিটার ক্লাব বলেন, “গত কয়েক মওসুমে পাকিস্তানের চালের উৎপাদন সত্যিই ভালো হচ্ছিল। সেখানে বড় ধরনের বিপর্যয় সত্যিই খারাপ হল। গত কয়েক মওসুমের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হল।”
চীনে উচ্চ তাপমাত্রা ও খরা পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংসু ও আনহুই প্রদেশে ধান উৎপাদনে প্রভাব ফেলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চীনের কৃষিমন্ত্রী ট্যাং রেনজিয়ান।
পিটার ক্লাব বলেন, “ঠিক কতটা ফলন কম হতে পারে (চীনে) তা আগেই বলা কঠিন। সাধারণ একটি ব্যাপার হল, চীনে চালের মজুদ এখনও অনেক বেশি।”
বৃষ্টিতে ভারতে ফসল বাড়ার সম্ভাবনা
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে ধান উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোর কিছু অংশে বর্ষা মওসুমের বৃষ্টিপাত দেরিতে হলেও গত কয়েক সপ্তাহে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম চাল সরবরাহকারী দেশটি উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা দেখছে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের চাহিদা মেটাতে ভারত এর আগে চালের রপ্তানি সীমিত করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু বৃষ্টিপাতের উন্নতির ফলে রপ্তানিতে বিধিনিষেধের সেই আলোচনা আর এগোয়নি বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের এক ব্যবসায়ী, যিনি ভারতের চাল এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন।
রয়টার্স লিখেছে, ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মূল্য সূচক মার্চে রেকর্ড ছুঁয়েছিল, পাঁচ মাস পর অগাস্টে সেই সূচক খানিকটা নিচে নেমেছে।
তবে গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে চালের ব্যাপক চাহিদার কারণে দাম বেড়ে গেছে। আগামী কয়েক মাসে প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন টন চাল আমদানির পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ, যাতে চালের মজুদ বাড়িয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখা যায়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স লিখেছে, বাংলাদেশ সরকার ভারত, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন চাল কিনছে। বিষয়টি নিয়ে ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।
প্রতি টন ভারতীয় চালের দাম গত সপ্তাহে ৩৮৩ ডলারে উঠেছিল, যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে এই দর ৪০৫ ডলার এবং তার আগের বছর ২০২০ সালের সর্বোচ্চ ৪২৭ দশমিক ৫০ ডলারেও উঠেছিল।
বিশ্ব বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম চালের মূল্য সমন্বয়ে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।