চট্টগ্রামে পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নূরুন নবী ম্যাক্সন কলকাতায় মারা গেছেন বলে তার পরিবার দাবি করেছে।
বুধবার সকালে কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে তারা খবরটি পান বলে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই আক্তার হোসেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ভাইকে ‘খুন’ করে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচার করা হয়েছে। লাশ বর্ধমানের কালীগঞ্জের একটি হাসপাতালে আছে।
চট্টগ্রামের আলোচিত আট ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা সাজ্জাদের সহযোগী ছিলেন ম্যাক্সন (৪০)।
জামিনে ছাড়া পেয়ে সাজ্জাদ দুবাই পালিয়ে গেলে তার অস্ত্র ভাণ্ডারের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন ম্যাক্সন ও তার আরক সহযোগী সরোয়ার। ওই সময় সরোয়ার-ম্যাক্সন ছিলেন বায়েজিদ এলাকার আতঙ্কের নাম।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবহারসহ নানা অভিযোগে ২২টি মামলা আছে বলে পুলিশের তথ্য, যার কয়েকটিতে তার সাজা হয়।
ম্যাক্সনের বাসা নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায়। এখানে স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা থাকেন।
ম্যাক্সন গত ৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়েন বলে সেখানকার সংবাদমাধ্যমে খবর আসে। পরে চট্টগ্রামের পুলিশও তা নিশ্চিত করে।
মৃত্যুর খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি ফেরদৌস জাহান বলেন, “সকালে ম্যাক্সনের ভাই থানায় এসে কলকাতায় তার মৃত্যুর বিষয়টি জানায়। তবে আমরা অফিসিয়াল কোনো তথ্য পাইনি। তাই এব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।”
তবে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ম্যাক্সনের মৃতদেহের যে ছবিটি পাওয়া গেছে, সেটির সঙ্গে তার চেহারার মিল আছে। তারা ব্যক্তিগতভাবে কলকাতায় খবর নিয়ে ম্যাক্সনের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত হয়েছেন।
ম্যাক্সনের ভাই আক্তার দাবি করেছেন, তার ভাইকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে। পরে লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “মঙ্গলবার ম্যাক্সন আমার সাথে কথা বলেছেন। পরে তিনি মারা গেছে বলে এক পরিচিত জনের কাছ থেকে জানতে পেরে তার মোবাইলে ফোন করেছি। প্রথমে কেউ ফোন রিসিভ না করলেও পরে পুলিশ পরিচয় দিয়ে একজন ফোন ধরেন। তিনি আমাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।”
আক্তার বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যাক্সন কলকাতায় গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিনের মধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি ফোনে বাসা থেকে টাকা চেয়েছিলেন। আর রাতে তাকে টাকার জন্য খুন করা হয়। যারা হাসপাতালে লাশ নিয়ে গেছেন তারা পালিয়ে গেছেন।
ম্যাক্সনের ঘনিষ্ঠদের কাছে জানা যায়, কলকাতায় তিনি এক নারীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতেন। ওই নারী তাকে খুন করেছে বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ।
আক্তার জানান, তারা ম্যাক্সসনের লাশ দেশে আনার চেষ্টা করবেন। সেজন্য তারা ভারত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নিউজ১৮ বাংলা নামে কলকাতার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদে বলা হয়, মঙ্গলবার রাতে হরিদেববপুরের বাসা থেকে ম্যাক্সনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার সঙ্গী অর্পিতাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।
২০১১ সালের ৪ জুলাই রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিঙ্গার বিল এলাকার বিশ্বরোড চৌরাস্তা থেকে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের একটি দল শিবির কর্মী ম্যাক্সন ও সরোয়ারকে গ্রেপ্তার করে। পরে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হন অপর শিবির কর্মী মানিক।
তাদের তথ্যে ওয়াজেদিয়া এলাকার পুকুর থেকে একটি এ কে-৪৭ রাইফেল, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশীয় বন্দুক, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি এলজি, দুটি ম্যাগাজিন ও ২৭ রাউন্ড এ কে-৪৭ রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০১৬ সালের ৩১ অগাস্ট ইসলামী ছাত্র শিবিরের ওই তিনজন কর্মীকে ১৪ বছর কারাদণ্ড দেয় চট্টগ্রামের একটি বিশেষ ট্রাইবুনাল।
পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, পরবর্তীকালে ২০১৭ সালে জামিনে বেরিয়ে কৌশলে ওমান পালিয়ে গিয়ে ফেরার হন ম্যাক্সন। সেখান থেকে পরিচয় পাল্টে তিনি পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যান। তমাল চৌধুরী নামে বর্ধমান এলাকায় তিনি থাকছিলেন।