বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে।
ঝড়ের প্রভাবে নদ-নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বেড়িবাঁধ উপচে বা ভেঙে নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সিত্রাং মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি একটি জরুরি সভা করে। সাধারণ মানুষকে আশ্রয় দিতে জেলার ৩৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে দুই লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনা খাবার।
সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। বৈরি আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। মাছ ধরার ট্রলারগুলো ঘাটে অবস্থান করছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে শরণখোলা উপজেলার ৬৫ কিলোমিটার বাঁধ সুরক্ষিত রয়েছে। মোংলা উপজেলাতে কোনো বাঁধ নেই। মোরেলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলার কিছু অংশে বাঁধ রয়েছে। এসব এলাকার দেড়শ কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী তিন থেকে সাত ফুট পর্যন্ত জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, এ কারণে এসব এলাকা প্লাবিত হবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটিতে যে বেড়িবাঁধ রয়েছে তা ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে পাউবির এ প্রকৌশলী বলেন, “বেড়িবাঁধটি মেরামতের জন্য আমরা কাজ চলমান রেখেছি। পানির চাপে কোন অংশে বাঁধ ভেঙে গেলে তা মেরামতের জন্য ১৫ হাজার জিও ব্যাগ ও ৫ হাজার সিনথেটিক ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
এদিকে রোববার থেকে টানা বৃষ্টির কারণে মোংলা বন্দরে জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরে থাকা দেশী-বিদেশী জাহাজ ও ছোটবড় নৌযানগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এসব তথ্য জানিয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, “বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্ট হওয়ায় মোংলা বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক নামিয়ে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ইউরিয়া সার, কন্টেইনার, কয়লা, গ্যাস, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালসহ মোট ১৪টি দেশি বিদেশি জাহাজ বন্দরে অবস্থান করছে।”
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মঙ্গলবার ভোরে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর আশঙ্কা করছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেই হিসেবে একটি প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে।
“বাগেরহাট জেলায় ৩৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। এই আশ্রয় কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা দুই আট হাজার ৪৩০ জন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এ সব কেন্দ্রে মানুষদের নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা পেলে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে। বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও, জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় জনগনকে সচেতন করবে।”
দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য নগদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও প্রায় ৩০০ মেট্রিকটন চাল মজুদ রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় শুকনা খাবার বরাদ্দ দিচ্ছে। এই বরাদ্দ স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া সবাইকে শুকনা খাবার চিড়া, মুড়ি ও গুড় মজুদ করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী সব প্রস্তুতি গ্রহণ করবে প্রশাসন।