চলতি মাসের শুরুতে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের পেছনে কারিগরি নয়, ‘ব্যবস্থাপনাগত ক্রুটি’ ছিল জানিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এর পেছনে সঞ্চালন কোম্পানি পিজিসিবি কর্মকর্তাদের দায় থাকার কথা বলেছেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বড় ধরনের এ বিভ্রাটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার অংশ হিসেবে আগামী রোববারই কয়েকজনকে ‘চাকরিচ্যুত’ করার কথাও শুক্রবার রাতে এক আলোচনায় বলেন তিনি।
বিদ্যুতের জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গত ৪ অক্টোবর দুপুরে বিপর্যয়ের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের পূর্বাঞ্চল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
এ ঘটনার পর থেকে দেশে লোড শেডিং বেড়েছে বলেও ধারণা দেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কনটেন্ট পার্টনার ডয়চে ভেলের চলমান লোডশেডিং ও গ্যাস সংকট নিয়ে এক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
ডয়েচে ভেলের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ওই আলোচনায় নসরুল হামিদ শুক্রবার রাত ৯টার কিছু সময় পরের তথ্য তুলে ধরে বলেন, “এখনও ৫০০ মেগাওয়াট লোড শেড চলছে। কিন্তু ওয়েস্টার্ন ব্লক থেকে যদি ৭০০ মেগাওয়াট নিয়ে আসতে পারতাম, তাহলে লোড শেডিং থাকত না।“
ওইদিনের বিপর্যয়ের কারণে সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বর্তমানে বিদ্যুতের লোড শেডিং এর কোনো সমস্যাই থাকত না বলে দাবি করেন তিনি।
কী কারণে ওয়েস্টার্ন ব্লক থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা যাচ্ছে না- এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এটা হচ্ছে ঘোড়াশাল গ্রিড উপকেন্দ্রে ম্যানফল্ট বা আমি মনে করি হিউম্যান ফল্টের কারণে। আমরা আজকেও এটা নিয়ে ন্যাশনাল লোড ডিসবার্স সেন্টারে বসেছিলাম।
“আমাদের যে ব্ল্যাকআউটটা হয়েছিল, সেটা পিজিসিবি তার ম্যানেজমেন্ট করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল, সে কারণেই হয়েছে। সেদিন ডিমান্ড উৎপাদনের চেয়ে বেশি ছিল। তাদেরকে ডেসকো থেকে বলা হয়েছিল যে, তোমরা কাট ডাউন কর। অন্যথায় তোমরা বাধাগ্রস্ত হবে। ফ্রিকোয়েন্সি আরও উপরে উঠে গিয়ে ক্র্যাশ করবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। ওরা কথাটা শুনে নাই। ওরা কন্টিনিউ করেছে, একপর্যায়ে ব্ল্যাক আউট হয়ে গেছে।“
এ ঘটনায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানি পিজিসিবি কর্মকর্তাদের দায় রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এ কারণে আমরা কতগুলো মানুষকে আইডেন্টিফাই করেছি, যারা কথাগুলো শুনতে চেষ্টা করেনি। এদেরকে আমরা স্যাক করব। আগামী রোববারের মধ্যেই ব্যবস্থা নেব। এটা কোনো টেকনিক্যাল ফল্ট ছিল না। ম্যানেজমেন্টের ফল্ট ছিল।"
গত ৪ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে জাতীয় সঞ্চালন লাইন ব্যর্থ হওয়ার ফলে সাত ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয় দেশের পূর্বাঞ্চলে। মাঝে একদিন বিরতি দিয়ে ৬ অক্টোবর সচিবালয়ে বিষয়টি নিয়ে সংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী; কিভাবে ঘটনা ঘটেছিল তার একটি প্রাথমিক ব্যাখ্যাও দেন তিনি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, ওই সময় পূর্বাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি ছিল এবং পশ্চিমাঞ্চলে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বাড়তি ছিল। এর ফলে পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হচ্ছিল। ঘটনার সময় আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি দুটি সার্কিট এবং ঘোড়াশাল এআইএস থেকে ঘোড়াশাল জিআইএস এলাকায় ২৩০ কেভি একটি সার্কিট ট্রিপ করায় পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
“ফলে পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায়। আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সিজনিত কারণে গ্রিড আন স্ট্যাবল হয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ট্রিপ করে বিভ্রাটের সৃষ্টি করে।”
এ ঘটনা তদন্তে সঞ্চালন সংস্থা পিজিসিবির নিজস্ব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।