মোবাইল ফোন হাতে আসায় জীবনযাত্রার ‘উন্নতি ঘটেছে’ মনে করলেও বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যবহারকারীই ডিভাইসে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে ভোগেন বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
টেলিযোগাযোগ খাতের আন্তর্জাতিক কোম্পানি টেলিনরের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আটটি দেশে এ জরিপ চালানো হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের আট হাজার মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এ সমীক্ষার আওতায় ছিলেন বলে টেলিনরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকার বনানীর হোটেল শেরাটনে গ্রামীণফোনের চেয়ারম্যান ও টেলিনর এশিয়ার প্রধান ইয়র্গেন সি অ্যারেন্টজ রোস্ট্রাপ ‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’ শীর্ষক এ সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন।
টেলিনর বলছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী এক হাজার বাংলাদেশির ৯১ শতাংশ মনে করেন, মোবাইল ব্যবহার করার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটেছে।
তবে ৯৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েছে।
জরিপের এই তথ্য তুলে ধরে রোস্ট্রাপ বলেন, “মোবাইল ডিভাইস মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করছে, সম্পর্ক ও পারস্পরিক যোগাযোগ দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে আমরা শুনে থাকি। কিন্তু এই সমীক্ষা আমাদের অন্যরকম ধারণা দিচ্ছে।”
মহামারীর মধ্যে এশিয়ার দেশগুলোতে মোবাইল ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা ঘরে-বাইরে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এই সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”
জরিপের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে টেলিনর এশিয়ার প্রধান বলেন, আটটি দেশের ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার বিকাশ নিয়ে চিন্তিত। বাংলাদেশি উত্তরদাতাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ এ ব্যাপারে শঙ্কিত।
“মোবাইল কানেক্টিভিটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে, এ বিষয়ে সঠিক দক্ষতা ও সচেতনতার অভাব– যেমন নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা এখন আমাদের জন্য স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের মতো সুযোগগুলো সীমিত করে তুলতে পারে। ডিজিটাল খাতে আমাদের ঘাটতিগুলো কী এবং কীভাবে সে ঘাটতিগুলো পূরণ করা যায়, তা আমাদের জানতে হবে।”
মোবাইল ব্যবহারের বৃহত্তর সম্ভাবনার কথাও এ সমীক্ষায় এসেছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বিশ্বাস, জনসাধারণের জন্য শিক্ষা (৬৪ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্যসেবার (৫৫ শতাংশ) মতো প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তি আরো সহজ করে মোবাইল কানেক্টিভিটি।
পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি নারী মনে করেন, মোবাইল সংযোগ তাদের কর্মসংস্থান এবং উপার্জনের বিকল্পগুলো উন্নত করেছে। সেইসাথে এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও বেশি দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা অর্জনে সহায়তা করেছে।
সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপনের পর বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাপ্ত ফলাফলগুলোর ওপর আলোচনা করেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, বাংলাদেশে ইউএনডিপির ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি ভ্যান নুয়েন এবং চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা।
গ্রামীণফোনের চিফ বিজনেস অফিসার আসিফ নাইমুর রশিদ প্যানেল আলোচনায় সঞ্চালনা করেন।
১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করা গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে ৮ কোটি ৩১ লাখের বেশি, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন সেবাগ্রহীতার প্রায় অর্ধেক। এ কোম্পানির ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক নরওয়ের টেলিনর।