যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় গত শনিবার ভূপাতিত করা চীনা গুপ্তচর বেলুন পাঁচ মহাদেশ জুড়ে চীনের নজরদারির বিস্তৃত কর্মসূচিরই অংশ বলে ধারণা ওয়াশিংটনের।
কেবল যুক্তরাষ্ট্রে নয়, বিশ্বজুড়ে পাঁচ মহাদেশের বিভিন্ন দেশ চীনা গুপ্তচর বেলুনের নিশানা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, বেলুনের ধ্বংসাবশেষ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য আমরা ডজনের বেশি দেশকে দিয়েছি।
তিনি বলেন, “ওয়াশিংটন থেকে এবং বিশ্বের দেশে দেশে আমাদের দূতাবাসগুলো থেকে এরই মধ্যে বহু দেশকে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।”
“আমরা একাজ করছি, কারণ (চীনের) এই বিস্তৃত কর্মসূচির নিশানা কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নয়। পাঁচটি মহাদেশের বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উড়তে থাকা চীনা বেলুনকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সমুদ্রে নামায় বাইডেন প্রশাসন। প্রথম থেকেই অভিযোগ ছিল, গোপন তথ্য জানতে হানা দিচ্ছে চীনের গুপ্তচর বেলুন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
যুক্তরাষ্ট্রের পর পরই ল্যাটিন আমেরিকার আকাশেও দেখা গিয়েছিল এমন বেলুন। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। চীনে নির্ধারিত সফর বাতিল করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন।
যদিও চীন বেলুন দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার কথা অস্বীকার করে বলে আসছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ এবং এ সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যই বেলুনটি ব্যবহার করা হয়েছে। সেটি উড়তে উড়তে হাওয়ায় কোনওভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ঢুকে পড়েছে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পরে জানান, চীনের সামরিক বাহিনীর নজরদারি মিশনে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য বেলুনটি ব্যবহার করা হয়েছিল বলেই তাদের বিশ্বাস।
মার্কিন গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, কিছু বেলুন দক্ষণাঞ্চলীয় চীনা দ্বীপ হাইনান থেকে ওড়ানো হয়েছিল। ওই দ্বীপে আছে সামরিক ঘাঁটি। চীনের গুপ্তচর বেলুনের নিশানায় ছিল আরও বেশ কিছু দেশ। তার মধ্যে জাপান, ভারত, তাইওয়ান এবং ফিলিপিন্সের নাম বলেছেন কর্মকর্তারা।
বিবিসি জানায়, বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস- একই ধরনের আরও বেলুন দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে নজরদারি চালিয়েছে চীন।
রাইডার বলেন, “আমরা এই বেলুনগুলো সম্পর্কে অনেককিছু জেনেছি এবং সেগুলোকে কিভাবে শনাক্ত করতে হয় তাও শিখেছি। এসব বেলুন নজরদারি মিশনে ব্যবহার হয়েছে এবং এগুলোর আকার এবং কার্যক্রমেও ভিন্নতা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে যে বেলুনটি শনাক্ত হয়েছিল সেটি ২০০ ফুট লম্বা ছিল বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এটির ওজন ছিল কয়েকশ অথবা কয়েক হাজার পাউন্ড। একটি আঞ্চলিক উড়োজাহাজ-আকৃতির বোঝা বহনের মতো জায়গা ছিল তাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, বেলুনগুলো অন্তত চারবার মার্কিন ভূখণ্ড প্রদক্ষিণ করেছে। তবে প্যাট রাইডার এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ৪০টি মিত্র দেশকে চীনের এই গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে সতর্ক করেছে।