আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের পর শতভাগ মার্জিন দিয়েও গাড়ি আমদানির ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না; যা নিয়ে এফবিসিসিআইর দারস্থ হয়েছেন আমদানিকারকরা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
দেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ সংগঠনের কাছে গাড়ি আমদানিকারকরা অভিযোগও করেছেন ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যাংকগুলোর গড়িমসি নিয়ে।
বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে সংগঠনের অটোমোবাইল বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির দ্বিতীয় সভায় এমন অভিযোগ করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
মানুষের প্রয়োজন এবং সড়কে পণ্য পরিবহনে ব্যবহারের গুরুত্বের কারণে গাড়ি আমদানিকে বিলাস পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবিও জানান তারা।
এফবিসিসিআইয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, বিলাসপণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় শতভাগ এলসি মার্জিনের আওতাভুক্ত হয়েছে গাড়ি আমদানি। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতির বাস্তবতায় গাড়ি এখন মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে।
“তাছাড়া সড়কপথে পণ্য পরিবহনে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। করোনাভাইরাস মহামারীকালীন ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের কারণেই দেশজুড়ে পণ্যের সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক ছিল। তাই এসব বিবেচনায় গাড়িকে বিলাসী পণ্যের আওতার বাইরে রাখা প্রয়োজন।“
রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সাবেক সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন রিকন্ডিশনড গাড়িকে বিলাস পণ্যের তালিকা থেকে সরানোর দাবি জানিয়ে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স, জিপ, পিকআপ, লরি এগুলো কিভাবে বিলাস পণ্য হয়। এখন তো এগুলো মানুষের নিত্য প্রয়োজনের অংশ হয়ে গেছে। ৩০০০ সিসির ওপরে যেসব গাড়ি বিশেষ করে বিএমডব্লিউ, মার্সেডিজ এগুলো বিলাস পণ্য হতে পারে।
ডলার সাশ্রয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২ মে বিলাসপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন ঠিক করে। এর ১০ দিনের মাথায় এলসি মার্জিন শতভাগ করা হয়। অর্থাৎ যারা গাড়িসহ অন্যান্য বিলাসপণ্য আমদানি করবে তাদেরকে কোনো ধরনের ব্যাংক ঋণ দেওয়া হবে না।
আমদানিকারকরা এ শর্ত মেনে এলসি করতে গেলেও বিভিন্ন কাগজপত্রের নামে ব্যাংকগুলো গাড়ি আমদানিতে নিরুৎসাহিত করে অভিযোগ করে এফবিসিসিআইর সহ সভাপতি ও কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ হাবীব উল্লাহ ডন স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে বলেন, “বৈশ্বিক সংকটের কারণে শতভাগ মার্জিন দিয়ে হলেও আমরা সরকারের সাথে থাকছি।“
পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গত বছরও ২৪ হাজার গাড়ি বাংলাদেশে ঢুকেছিল। গত পাঁচ মাসে আাগের বছরের তুলনায় আমদানি গড়ে ৩৫ শতাংশ করে কমে গেছে। এতে সরকারও অনেক রাজস্ব হারাচ্ছে। কারণ এই খাত থেকে সরকার প্রতিবছর ২৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে পারে। এখন সেটা হবে না।
বারভিডার হিসাবে, রিকন্ডিশন গাড়ি, টায়ার, পার্টসসহ এ খাতে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে এ খাতে।
এফবিসিসিআইয়ের অটোমোবাইল বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও রানার অটোমোবাইলসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, “শতভাগ এলসি মার্জিনে আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না, কিন্তু পুঁজি বিনিয়োগ ও তারল্য ঘাটতির কারণে প্রণোদনা প্যাকেজ জরুরি।“
বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে এরই মধ্যে একটি বিদেশি কোম্পানি ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। নিবন্ধন সমস্যার সমাধান না হলে এ বিনিয়োগ বিফলে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে। আর একটি বিদেশি বিনিয়োগ ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে অন্য কোন বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ খাতে বিনিয়োগ করতে আসবে না।
অটোমোবাইল শিল্পের উন্নয়নে ব্যাকওয়ার্ড শিল্পের উন্নয়ন করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে যারা গাড়ি সংযোজন করছে, ভবিষ্যতে তারাই গাড়ি তৈরি ও রপ্তানি করবে। এজন্য নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, পরিচালক রেজাউল করিম রেজনু অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।