গাম্বিয়ায় ৬৬ শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, এমন ধারণা পাওয়ার পর ভারতে বানানো ৪টি কাশির সিরাপের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মেইডেন ফার্মাসিউটিকেলের ওই সিরাপগুলোর বিক্রি বন্ধ রাখতে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে পরামর্শও দিয়েছে তারা।
কিডনি জটিলতায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে কয়েক ডজন শিশুর মৃত্যু নিয়ে তদন্ত শেষে ডব্লিউএইচও এই সতর্কতা জারি করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বৈশ্বিক এ স্বাস্থ্য সংস্থাটি এখন সিরাপগুলোর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেইডেন ফার্মাসিউটিকেল ও ভারতীয় কর্তপক্ষকে নিয়ে এ ব্যাপারে ‘আরও তদন্তের’ ঘোষণা দিয়েছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এখনও ডব্লিউএইচও-র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সতর্কবার্তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে, ঘটনা সম্বন্ধে অবগত হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বরই এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে ভারতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
তারা ডব্লিউএইচও-র কাছে তাদের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও চেয়েছে।
মেইডেন ফার্মাসিউটিকেলের চারটি সিরাপের সঙ্গে আফ্রিকার দেশটির শিশুমৃত্যুর যোগসাজশ থাকতে পারে- ওষুধগুলোর নমুনা পরীক্ষা করে দেখার পর ডব্লিউএইচও এমন ধারণা পেয়েছে বলে বুধবার জানান বৈশ্বিক সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস।
তারা যে চারটি সিরাপ নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে, সেগুলো হল- প্রোমেথাজাইন ওরাল সল্যুশন, কোফেক্সমালিন বেবি কফ সিরাপ, ম্যাকফ বেবি কফ সিরাপ ও ম্যাগ্রিপ এন কোল্ড সিরাপ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সিরাপগুলোতে অনুনমোদিত মাত্রার ডাইইথিলিন গ্লাইসল ও ইথিলিন গ্লাইসল পাওয়া গেছে বলে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় উঠে এসেছে। অতিরিক্ত মাত্রার ডাইইথিলিন গ্লাইসল ও ইথিলিন গ্লাইসল মানুষের জন্য ক্ষতিকারক এবং শরীরে নেওয়ার পর তা মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
এসব সিরাপ এখন পর্যন্ত গাম্বিয়াতে মিললেও তা কালোবাজারিদের মাধ্যমে অন্য দেশেও চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ডব্লিউএইচও-র।
“সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের পর্যালোচনা ছাড়া এসব ওষুধের সব ব্যাচকেই অনিরাপদ বলে গণ্য করতে হবে,” বলেছে তারা।
তবে ভারতীয় সূত্রগুলো বলছে, হরিয়ানাভিত্তিক ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি মেইডেন ‘এখন পর্যন্ত কেবল গাম্বিয়াতেই’ ওই সিরাপগুলো রপ্তানি করেছে।
বিশ্বে যত ওষুধ লাগে তার এক তৃতীয়াংশই ভারতে বানানো হয়; দ্রুত বর্ধনশীল কিছু ফার্মাসিউটিকেল কোম্পানির কারণে দেশটি এরই মধ্যে ‘বিশ্বের ফার্মেসি’ হিসেবে পরিচিতিও পেয়েছে।
আফ্রিকার দেশগুলোর বেশিরভাগ ওষুধও ভারত থেকে যায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মেইডেন ফার্মাসিউটিকেল তাদের ওষুধ মূলত এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় পাঠায়।
কয়েক ডজন শিশুর কিডনিতে গুরুতর জটিলতা ধরা পড়ার পর জুলাইয়ে গাম্বিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা প্রথম ভারতে বানানো এই চারটি কাশির সিরাপ নিয়ে সতর্কতা জারি করেন।
আফ্রিকার দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মুস্তাফা বিতায়ে রয়টার্সকে বলেছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা কমেছে, আর তারা ওই সিরাপগুলোর বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞাও দিয়ে রেখেছেন।
“তবুও কিছুদিন আগ পর্যন্ত বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে কিছু কিছু সিরাপ বিক্রি হয়েছে,” বলেছেন তিনি।