আজ ১৩ নভেম্বর, নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পত্রিকার পাতায় -- সর্বত্র আজ প্রিয় লেখকের স্মৃতিচারণ। তিনি আজ আমাদের না থেকেও আছেন তার অমর সৃষ্টির মাঝে।
স্মৃতি হাতড়ে কেউ লিখছেন ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় উপন্যাসের কথা, অনেকে স্মৃতিচারণায় আনেন নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের নাটক, সিনেমার কথা, কেউবা মশগুল ব্যক্তি হুমায়ূনের বন্দনায়।
এতকিছুর ভীড়েও চোখ আটকে যায় লেখকের পোট্রেট বক্সে, যেখানে শুভেচ্ছা কার্ড করে ছোট্ট করে লেখা আছে তার প্রিয় রবীন্দ্র সংগীত - ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছো নয়নে নয়নে।’
গান যে বড় ভালবাসতেন হুমায়ূন তার ছাপ রেখে গেছেন রবীন্দ্র সঙ্গীতের কথা থেকে নিজ বইয়ের নামকরণে। নুহাশ পল্লীতে গানের আসর বসাতেন নিয়মিতই। সহধর্মিনী মেহের আফরোজ, কুদ্দুস বয়াতি, বারী সিদ্দিকী, এস আই টুটূল, সেলিম চৌধুরীর মতো শিল্পীরা সে আসরে গান গাইতেন।
হুমায়ূন আহমেদ গান লিখেছেন প্রায় একশটির কাছাকাছি। অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও স্মৃতিচারণায় তার লেখা গানের কথা তুলনামূলকভাবে কমই দেখা যায়। হুমায়ূন মূলত গান লিখেছেন তার সিনেমা আর নাটকের জন্য।
তার মৃতুর পর মেহের আফরোজ শাওন ‘হুমায়ূন সঙ্গীত: নদীর নামটি ময়ূরাক্ষী’ নামে একটি গানের সংকলনও প্রকাশ করেন।
হুমায়ূনের লেখা দর্শকনন্দিন ৫টি গানের স্মৃতিচারণ নিয়েই সাজানো এই লেখাটি।
একটা ছিল সোনার কন্যা
১৯৯৮ সালে নিজের নির্মিত শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রের জন্য হুমায়ূন আহমেদ এই গানটি লেখেন। সে সময় তো বটেই, গানটি এখনো শ্রোতাদের মাঝে জনপ্রিয়।
এই গানটি গেয়েছিলেন শিল্পী সুবীর নন্দী এবং তাতে সুর দেন মাকসুদ জামিল মিন্টু। রেকর্ডিংয়ের দিন লেখক সুরকার মিন্টুকে বলেন, “আমি তো তেমন গানটান লিখিনা ছন্দ মেলেনি হয়তো।”
সুরকার মিন্টু এক গাল হেসে বলেন, “আমাকে পত্রিকা দিলেও সুর করে দেবো।” হুমায়ূন আহমেদ তার স্বভাবসিদ্ধ হাস্যরসবোধ থেকে উত্তর দিলেন, “তাহলে আর গান কেনো, পত্রিকা লিখে দিলেই পারতাম!”
চাঁদনী পসরে কে আমারে
চন্দ্রকথা চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু হবার আগের রাতে কাগজ-কলম নিয়ে এক বসায় লিখেছিলেন এই গানটি। এর সুরকার মাকসুদ জামিল মিন্টু এবং গায়ক, হুমায়ূনের প্রিয় ছাত্র - সেলিম চৌধুরী।
নুহাশ পল্লীতে বসে চাঁদ দেখতেন অপলক, পূর্ণিমার নরম আলো শত ভাবনার মাঝে তার চন্দ্রাহত লেখায় উঠে আসতো মৃত্যুর ভাবনা। সেসব মিলিয়েই হয়ত লিখেছিলেন এই গানটি।
ও কারিগর দয়ার সাগর
এই গানটি হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত একটি নাটকে ব্যবহৃত হয়েছিলো। গানটিতে সুর এবং কন্ঠ দিয়েছেন এস আই টুটুল। গানটি কক্সবাজার থেকে টুটুলকে লিখে পাঠানো হয়।
গানের সুর প্রথমে অপছন্দ হওয়ায় হুমায়ূন আহমেদ এস আই টুটুলকে খানিক বকেও দেন। পরে কক্সবাজার গিয়ে নতুন করে সুর করা হয়। এ গানটি হুমায়ূন আহমেদ এতই পছন্দ করতেন যে প্রতিটি আসরের শেষেই শুনতেন; বারবার এই গান ব্যবহার করেছেন তার অনেক লেখায়।
যদি মন কাঁদে, তুমি চলে এসো এক বরষায়
মেহের আফরোজ শাওনের কন্ঠে এই গানটির মায়া বর্ষাদিনের মিষ্টি বিষণ্ণতায় প্রতিবারই ছুঁয়ে যায় শ্রোতাদের মন।
এই গানটিরও সুর করেন এস আই টুটুল। ঝুম বর্ষায় বৃষ্টির কারণে নয় নম্বর বিপদ সংকেত ছবির শুটিং বন্ধ থাকলে নুহাশ পল্লীর বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে এই গানটি লিখেছেন তিনি।
আমার আছে জল
আমার আছে জল চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকার গান এটি। চলচ্চিত্রটির পাশাপাশি মেহের আফরোজ শাওনের গাওয়া এই গানটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
দুঃখকে আশ্রয় করে লেখা গানটি পরিচালক এস আই টুটুল একটু আনন্দের সুরেই ইতি টেনেছিলেন। তবে গীতিকার হুমায়ূন আহমেদের ইচ্ছায় আবার দুঃখের সুর যোগ করে বানানো হয় আরেকটি ভার্সন।
শেষ পর্যন্ত ছায়াছবির দুই পর্যায়ে গানটির দুটি ভার্সনই ব্যবহার করা হয়।
মোজাক্কির রিফাত বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত।