বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডে তার ‘মাদক সংশ্লিষ্টতা’ নিয়ে গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন বিচারের দাবিতে সরব সবার ‘মনোবল ভেঙে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন।
ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে সোমববার বুয়েটে এক মানববন্ধনে তিনি বলেন, “আমার সন্তান ধূমপান কেন, ধূমপানের ধোঁয়াটা পর্যন্ত নিতে পারে না। ধূমপান যে করে না, সে ফেনসিডিলে আসক্ত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। ময়নাতদন্তে ডাক্তার তো কোনো মাদকের বিষয়ে বলে নাই। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
“কিন্তু তার হত্যার বিচারের দাবিতে যারা পাশে দাঁড়িয়েছিল, গণমাধ্যমের কিছু রিপোর্ট তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। … একজন ভালো ডিবেটরের… পাশে যারা ছিল, মাদকের বিষয়টা এনে তাদের ধাক্কা দেওয়া হয়েছে।”
বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে কথা বলছিলেন ফারদিনের বাবা। সেখানে ‘মাদকের সঙ্গে ফারদিনের সংশ্লিষ্টতা’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো হত্যাকাণ্ডের ‘তদন্ত কাজ ব্যাহত করছে’ বলেও তিনি দাবি করেন।
নূর উদ্দিন বলেন, “আমি আশা করি, তদন্তে যে সংস্থাগুলো আছে, তারা দ্বায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা খু্ব সহজ বিষয় নয়।
ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ড দ্রুত তদন্ত করে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
“আমাদের যে সংস্থাগুলো আছে, র্যাব, ডিবি ও পিবিআই এগুলোর উপর আস্থা রাখছি। আমি চাই না, কোনো কারণে সেই আস্থার জায়গাটা ভেঙে যাক। তারা সময় নিচ্ছেন, প্রকৃত যে অপরাধী তাকেই চিহ্নিত করবে, এজন্য তাদের সময় লাগতে পারে, এতে আমি হতাশ নই।”
গত ৪ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ফারদিনের লাশ ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে উদ্ধার করা হয়।
নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফারদিন ছিলেন তার বান্ধবী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমাতুল্লাহ বুশরার সঙ্গে। ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর বুশরার বিরুদ্ধে মামলা করেন নূর উদ্দিন। সেই মামলায় বুশরাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
বুশরার বিরুদ্ধে মামলা কেন? মানববন্ধনে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে নূর উদ্দিন বলেন, “বুশরাকে আমি আইডেন্টিফাই করেছি, সর্বশেষ সঙ্গী যে ছিল, সেই হিসাবে। আমার তিনটি সন্তান। তাদের মা যে পয়েন্টে যেতে বলে, তার বাইরে তারা কখনও যায়নি।
“বুয়েটে গ্রুপ স্টাডি করতে বাড়ি থেকে বের হয়েছে, পরদিন পরীক্ষা দিয়ে বাসায় যাওয়া কথা। আমার প্রশ্ন, আমার সন্তানটি বাসা থেকে বের হয়ে কী কারণে বুশরা নামের মেয়েটির কাছে গেল? সে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল যে, তার সঙ্গে এতটা সময় কাটাতে হল। বুশরাকে কে তো আমার পরিবারের কেউ চিনত না। পরদিন তার পরীক্ষা। আমার সন্তান তো রাত ১০টা পর্যন্ত তার সঙ্গে সময় কাটানোর কোনো কথা না।”
ফারদিনকে ‘মাথায় ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত’ করে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে এই বাবা বলেন, “শুনেছি, ছয়-সাত জন পিটিয়ে মেরেছে। তাহলে তো পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব জায়গায়ই আঘাত করত। সর্বত্র আঘাত না করে মাথায় ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত করা হয়েছে।
“এর মানে টার্গেট ছিল তার (ফারদিনের) হৃদয় ও মস্তিস্ক। সে যে চিন্তা করত, তারা এটার পক্ষে ছিল না। তারা এটা নিতে পারেনি।”
ফারদিন বুয়েটের পুরকৌশলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ায় থাকতেন।
তারা বাবা জানান, গত ৪ নভেম্বর বাসায় খেয়ে বের হয়েছিলেন ফারদিন। শনিবার তার পরীক্ষা ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে পড়তে হলে থাকার কথা বলেছিলেন। আর পরীক্ষা শেষে শনিবার বিকালে তার বাসায় ফেরার কথা ছিল।
দ্রুত তদন্ত করে খুনিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় বুয়েটের এই মানববন্ধন থেকে।