একটি মহল লোভ ও ব্যক্তিস্বার্থে দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ধ্বংস করতে চায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ‘বিশ্বাসের’ ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের এক সভায় তিনি বলেন, “এখানে গণতন্ত্রের অভাবটা কোথায়? নাকি যারা এ কথা বলেন তাদের ভালো লাগে যখন জরুরি অবস্থার সরকার হয়, সামরিক শাসক আসে, তাদের একটু কদর বাড়ে। খোশামোদি-তোষামোদি করে।
“ওইটুকু পাওয়ার লোভে... ব্যক্তিস্বার্থের জন্য তারা দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটাই ধ্বংস করতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি, জনগণের শক্তিটাই বড় শক্তি। তাদের বিশ্বাস ও আস্থাটাই বড় শক্তি।”
দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করেছে কে? আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা আসার পরে এবং আমাদের দলীয় প্রস্তাবে এগুলো ছিল। খালেদা জিয়া এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে ২০০৬ সালে ভোট করতে চেয়েছিল। এটা কেউ ভুলে যান নাই।
“ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে ভোট করা মানে হল ভোট চুরির চেষ্টা করা। আমার কাছে মনে হয় ওটাই তাদের কাছে গণতন্ত্র। জনগণের ভোট চুরি, অর্থ চুরি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ- এগুলো থাকলেই তাদের কাছে গণতন্ত্র। না হলে গণতন্ত্র খুঁজতে যাবে কেন তারা?”
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ কেউ তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলে মেনে নেয় না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছে, মানুষ মেনে নেয়নি। এরপর ২০০১ এ সরকার গঠন করে বিএনপি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছে জনগণ মেনে নেয়নি। সে নির্বাচন বাতিল হয়েছে। বিএনপি, খালেদা জিয়াকে দুই-দুইবার ভোট চুরির অপরাধে সরে যেতে হয়েছে।”
বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সামরিক শাসকদের ‘পকেট থেকে তৈরি’ মন্তব্য করে করে তিনি বলেন, “যারা মার্শাল ল’ জারি করে সারারাত কারফিউ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, তারা গণতন্ত্রটা কীভাবে দেয়? আর কীসের গণতন্ত্র দেয়, সেটা বোধগম্য নয়।
“বাংলাদেশের সকল দলের আমরা যদি চরিত্রগুলো দেখি এবং তার কার্যক্রম দেখি তাহলে একটা জিনিসই প্রতীয়মান হয় যে আওয়ামী লীগ, হ্যাঁ… আমাদের কিছু রেডিক্যাল পার্টি আছে কমিউনিস্ট পার্টি বা অন্যান্য যেগুলো দেখি সেগুলো বাদ দিয়ে যে পার্টিগুলো মিলিটারি ডিক্টেটরদের পকেট থেকে তৈরি হয়েছে যেমন বিএনপি বা জাতীয় পার্টি; আপনারা দেখবেন সেখানে গণতন্ত্রের চর্চাটা কোথায়।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “কোন দল, বিশেষ করে মিলিটারি ডিক্টেটরদের পকেট থেকে যেসব দল বেরিয়েছে তাদের মধ্যে কিন্তু সেই ধারাটা কেউ পাবেন না। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে তারা এবার গণতন্ত্রের কথা বলে। যাদের জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল’ এর মধ্য দিয়ে তারা আবার আমাদের গণতন্ত্রের সবক দেয়, পরামর্শ দেয়। গণতন্ত্র নাকি প্রতিষ্ঠিত করবে।
“মার্শাল ল দিয়ে, সারারাত কারফিউ দিয়ে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, তারা গণতন্ত্রটা কীভাবে দেয় আর কিসের গণতন্ত্র দেয় সেটা আমি বুঝি না।”
তিনি বলেন, “আমার মনে হয় যেন আমাদের দেশে কিছু নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবী বলে পরিচয় দেয়, জ্ঞানী-গুণী বলে পরিচয় দেয় তাদেরও মুখে শুনি গণতন্ত্র নাকি আনতে হবে দেশে।
“আমার এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যে, তাহলে কি মিলিটারি ডিক্টেটরদের সময় মার্শাল ল’ দিয়ে যারা রাষ্ট্র চালিয়েছিল সেটাকেই কি তারা গণতন্ত্র বলতে চান না কি? ওটাই কি গণতান্ত্রিক ধারা ছিল না কি? তারা কি খোলাসা করে এটা বলতে পারে। তারা তো সে কথাটা বলে না।”
সরকারপ্রধানের বক্তব্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গও উঠে আসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাহলে গণতন্ত্র ছিল কোথায়? জিয়ার আমলেই বা গণতন্ত্র কোথায়, এরশাদের আমলেই বা গণতন্ত্র কোথায়, খালেদা জিয়ার আমলেই বা গণতন্ত্রটা কোথায় ছিল?”
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির জন্য চাপ এলেও তাতে রাজি না হওয়ায় সরকারে আসতে না পারার কথা তুলে ধরেন তিনি।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে বাংলা ভাই সৃষ্টি, গ্রেনেড হামলা, ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলাসহ তাদের অপশাসন ও অত্যাচার নির্যাতনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “চরম দুঃশাসন। তার উপর পাঁচ পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে প্রথম। সন্ত্রাসে প্রথম, গ্রেনেড হামলা।
“এটাকে কি গণতন্ত্র বলবে? এটা কী ধরনের গণতন্ত্র? মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল তাদের কারণে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন থেকে সরকার গঠন করেছে তখন থেকে এদেশে গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রেখেছে এবং আওয়ামী লীগই জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করা, ভাতের অধিকার রক্ষা করা, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখনই মানুষের অধিকারগুলো নিশ্চিত হয়েছে।”
আওয়ামী লীগের আগে যারা সরকারে ছিল তাদের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তার আগে আমরা কী দেখেছি? হত্যা, খুন। আপনারা বিএনপির আমলে… সেই জিয়ার আমলের কথা চিন্তা করেন। সাদা মাইক্রেবাসে যাকে তুলে নিয়ে গেছে তাদের আর লাশও খুঁজে পাওয়া যায় নাই।”
তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এই গুমের কালচারটা শুরু করে দেয় এদেশে। মানুষ খুন করে গুম করে ফেলা। এমনকি একই সাথে দেড়শো মানুষ হত্যা করেছিল রাজশাহী কারাগারে। তালিকা দেখলে দেখবেন এবং যেই সমস্ত অফিসার বা যারা জল্লাদ থেকে শুরু করে যারা কাজ করেছে তারাই মানসিক যন্ত্রনায় ভুগেছে যে এটা কী হচ্ছে।”
পরে এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় এসেও জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবং সেই সময়ও এদেশের মানুষের উপর কম অত্যাচার, নির্যাতন হয়নি বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে ১৯৯৬ সালে, তখনই এদেশের জনগণ গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে, দেশের উন্নতি হয়েছে এবং সরকার যে জনগণের সেবা করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।”
দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও সভায় বর্ণনা করেন তিনি।
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টে তাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর সেই হত্যার যেন বিচার না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয় এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়।