খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। আসার পথে তাদেরকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন নেতারা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
শনিবারের বিএনপির এই সমাবেশের আগে শুক্রবার সকালে থেকেই ৪৮ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট পালন করছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। খুলনার থেকে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ রয়েছে। আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে খুলনাগামী বাসও চলাচল করছে না।
এই অবস্থায় নেতাকর্মীরা ট্রেনে, ছোট ছোট যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে খুলনায় এসেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু।
শুক্রবার বিকালে তিনি বলেন, “নেতাকর্মীদের আসার পথে বাধা দেওয়া হয়েছে। কোথায় কোথায় পুরনো মামলা গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে। তারপরও প্রতিটি জেলা থেকে নেতাকর্মীরা বাধা-বিপত্তি ঠেলে খুলনায় আসতে শুরু করেছেন। অনেকেই চলে এসেছেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় তারা থাকছেন। কেউ উঠেছেন আত্মীয়-স্বজনের বাসায়, কেউ মেস ও হোটেলে।“
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকেই শহরের বেশিরভাগ রাস্তা ছিল ফাঁকা। তবে নগরীর কে ডি রোডের বিএনপির কার্যালয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় ছিল অনেকটাই মুখর। বিকাল থেকেই নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। রাত ৮টার পর কে ডি ঘোষ রোড এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
অনেকে রাতে থাকার জন্য মাদুর, বালিসও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। নেতাকর্মীরা গল্পগুজব আর আড্ডা দিয়ে সময় পার করছেন। সেলফি আর ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে তাদের।
তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণসমাবেশস্থল সোনালী ব্যাংক চত্বরে তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, কিছু সময়ের মধ্যে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হবে। নেতাকর্মীরা রাতে সেখানেই অবস্থান করবেন।
গণসমাবেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত মিডিয়া উপ-কমিটির আহ্বায়ক এহেতেশামুল হক শাওন সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হবে; বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। সমাবেশ উপলক্ষে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
শাওন আরও বলেন, সমাবেশে যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা থেকে নেতাকর্মীদের আসার কথা রয়েছে। খুলনা নগর ও নয় উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেবেন। উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, “কোনো প্রতিবন্ধকতাই নেতাকর্মীদের আটকাতে পারবে না। প্রয়োজনে হেঁটে মানুষ সমাবেশে যোগ দেবে।”
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুদরত-ই-আমির এজাজ খান বলেন, “গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের আসা বাধাগ্রস্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে বাস-লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরেও জনস্রোত ঠেকানো যাবে না।”
সমাবেশ সফল করতে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে শনিবার খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনস্রোতে পরিণত হবে।
যদিও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, “বিএনপি পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ আহ্বান করেছে। এটা প্রতিহত করতে হবে বা বাধা দিতে হবে- এমনটা আমরা বিশ্বাস করি না। বাস-লঞ্চ বন্ধ করেছে মালিক সমিতি। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।”
“বাস ও লঞ্চ বন্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ কাউকে চাপ দেয়নি।”