শুধু বাসী খাবার থেকেই নয়, যে কোনো খাবার থেকেই পেটে গোলমাল বাঁধতে পারে।
আর খাবার থেকে শরীর খারাপ হওয়ার অপর নাম ‘ফুড পয়জনিং’ বা খাদ্যে বিষক্রিয়া। তবে ইচ্ছে করে তো কেউ খাবারে বিষ ঢালে না। বরং খাবার থেকে বিভিন্ন কারণে শরীর যেমন খারাপ করতে পারে তেমনি হতে পারে মরণঘাতি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তাই খাবার থেকে বিষক্রিয়া হলে কোন লক্ষণগুলো খারাপ সেগুলো জানা থাকা জরুরি।
যা জানা জরুরি
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটি হসপিটাল’য়ের পুষ্টিবিদ আমারগো কুটিয়র বলেন, “খাদ্যে বিষক্রিয়া আপনা থেকে সেরে গেলেও রোগটি আপনাকে কতদিন ভোগাচ্ছে এবং কতবার এতে আপনি আক্রান্ত হচ্ছেন সেটা লক্ষ্য করার বিষয়।”
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “আক্রান্ত হওয়ার পর যদি কোনো তরল পেটে রাখতে না পারেন, বমি হয়ে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে দ্রুত।”
এড়ানোর উপায়
কুটিয়র পরামর্শ দেন, যে কোনো খাবার খাওয়া, পরিবেশন কিংবা তৈরির আগে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করার অভ্যাস নিশ্চিত করতে হবে। খাবার দ্রুত ঠাণ্ডা করার জন্য ছড়ানো পাত্রে রাখতে হবে।
রান্না করা খাবার ও কাঁচা খাবার একই স্থানে রাখা উচিত হবে না। এতে সংক্রমণের সুযোগ থাকে।
৪.৪ থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস খাবারের জন্য বিপজ্জনক। কারণ এই তাপমাত্রায় ব্যাক্টেরিয়া দ্রুত বংশবিস্তার করে।
বিপজ্জনক পরিস্থিতি
“খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে মৃদু থেকে তীব্র পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়। তবে মাত্রা তীব্র হলে শ্বাসতন্ত্রের পেশিতে ‘প্যারালাইসিস’ও দেখা দিতে পারে খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে”, বলেন কুটিয়র।
পেটের গোলমাল
কুটিয়র বলেন, “খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে পেটে যে গোলমাল দেখা দেয় তার কারণ হল, পেটে যাওয়া বিষাক্ত উপাদানগুলো অপসারণ করার জন্য যে বিক্রিয়াগুলো ঘটছে সেগুলো। এই বিক্রিয়াগুলো পাকস্থলি ও অন্ত্রের ভেতরের আবরণে অস্বস্তি তৈরি করে বলেই পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হয়।”
সংক্রমিত খাবার খাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে সাধারণত। তবে ক্ষেত্রবিশেষে তা এক বা একাধিক দিন পরেও দেখা দিতে পারে।
বমিভাব ও বমি
বাজে খাবার খাওয়ার কারণে শরীরের যে বিষাক্ত উপাদান সৃষ্টি হয়, সে কারণে বমি ও বমিভাব দেখা দেবে। কারণটা সহজ, শরীরের জন্য তা বিষ এবং শরীর তা বের করে দিতে চাচ্ছে। এই সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে যাতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে না পারে।
অবসাদ
কুটিয়র বলেন, “খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে শরীর স্বাভাবিকভাবেই দূর্বল হয়ে পড়বে, প্রচণ্ড অবসাদ কাজ করবে। ‘সাইটোকিনেস’ নামক একটি জৈব রাসায়নিক উপাদান এই দুর্বলতা সৃষ্টি করে। এই জৈব রাসায়নিক উপাদানের কাজ হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ করা। খাওয়ার রুচি হারানোও আরেকটি কারণ হতে পারে শারীরিক অবসাদের।”
দৃষ্টি ঝাপসা, কথায় আড়ষ্টতা
কুটিয়র জানান, “এটা বিরল হলেও খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে, কথা বলায় জড়তা বা আড়ষ্টতা দেখা দিতে পারে। সংক্রমিত খাবারে থাকা ‘নিউরোটক্সিন’ অনেকসময় ‘প্যারালাইসিস’ সৃষ্টি করে।”
‘নিউরোট্রান্সমিটার’কে বন্ধ করে দিয়ে এই কাজ করে ‘নিউরোটক্সিন’। উপসর্গের মধ্যে আছে চোখের পাতা ভারি হয়ে আসা, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, কথায় জড়তা আসা এবং এক পর্যায়ে দেখা দেবে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা।