Loading...
The Financial Express

কোভিড লাগামহীন, চীনের হাসপাতাল, শবাগারে ‘তুমুল ব্যস্ততা’

| Updated: December 29, 2022 16:15:22


কোভিড লাগামহীন, চীনের হাসপাতাল, শবাগারে ‘তুমুল ব্যস্ততা’

বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর লাফিয়ে বাড়তে থাকা কোভিডের ঝাপটায় চীনের হাসপাতাল ও শবাগারগুলোকে এখন ব্যাপক চাপের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে।

দেশটির সরকার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে তথ্য দিচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা অনেক দেশ এরই মধ্যে চীন থেকে যাওয়াদের জন্য নতুন নিয়মও চালু করছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

তিন বছর ‘শূন্য কোভিড’ নীতিতে অবিচল থাকা চীন এ মাসেই হুট করেই লকডাউন, নিয়মিত শনাক্তকরণ পরীক্ষায় অংশ নেওয়াসহ কঠোর সব বিধিনিষেধ তুলতে শুরু করে।

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আগামী বছরের মধ্যে যাবতীয় সব বিধিনিষেধ তোলার পথেই রয়েছে তারা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

জনঅসন্তোষ ও বিক্ষোভের মুখে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই চীনজুড়ে করোনাভাইরাসের থাবা বিস্তৃত হতে শুরু করে।

দেশটিতে এখন প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে স্বাস্থ্য বিষয়ক একাধিক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ অনুমান করছেন।

বিপুল সংখ্যক এই রোগী দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরও ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করেছে।

চীনে মঙ্গলবার কোভিডজনিত কারণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ; সোমবার এই সংখ্যা ছিল ১।

সরকারি এই হিসাবের সঙ্গে দেশটির শবাগারগুলো থেকে পাওয়া খবর এবং তুলনামূলক কম জনবহুল দেশে কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরের অভিজ্ঞতার মিল নেই বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

চীনের দক্ষিণপশ্চিমের শহর চেংডুর অন্যতম বড় হাসপাতাল হুয়াশির কর্মীরা জানিয়েছেন, তারা এখন কোভিড রোগীদের নিয়ে ‘তুমুল ব্যস্ত’।

“আমি ৩০ বছর ধরে কাজ করছি, এমন ব্যস্ততা আগে কখনোই দেখিনি,” হাসপাতালের বাইরে এমনটাই বলেছেন নাম প্রকাশে রাজি না হওয়া এক অ্যাম্বুলেন্স চালক।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ ও এর সংশ্লিষ্ট জ্বরের ক্লিনিকের ভেতরে-বাইরে মানুষজনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। অ্যাম্বুলেন্সে আনা বেশিরভাগ মানুষকে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে দিতে হয়েছে অক্সিজেন।

“প্রায় সব রোগীরই কোভিড। হাসপাতালে কোভিডের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধের মজুদ নেই, কেবল কাশির মতো উপসর্গের ওষুধ আছে,” বলেছেন জরুরি বিভাগের ফার্মেসির এক নারী কর্মী।

চেংডুর অন্যতম বৃহৎ শবাগার ডংজিয়াওয়ের আশপাশের পার্কিংগুলোও ছিল গাড়িতে ভর্তি। একের পর এক শেষকৃত্য আর মরদেহ পোড়ানোর চুল্লি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।

“প্রতিদিন প্রায় ২০০টি শবদেহ পোড়াতে হচ্ছে। আমরা এতটাই ব্যস্ত যে খাওয়ার সময়ও পাচ্ছি না। বিধিনিষেধ তোলার পর থেকেই এই পরিস্থিতি। এর আগে দিনে ৩০-৫০টি পোড়াতে হতো,” বলেছেন শবাগারের এক কর্মী।

“অনেকেই কোভিডে মারা যাচ্ছেন,” বলেছেন আরেক কর্মী।

চাপে হিমশিম খেতে দেখা গেছে চেংডুর আরেকটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন শবাগার নানলিংয়ের কর্মীদেরও।

“কোভিডে এখন অনেক মৃত্যু হচ্ছে। শেষকৃত্যের স্লট সব বুক হয়ে গেছে। নতুন বছরের আগে আর কাউকে জায়গা দেওয়া যাবে না,” বলেছেন সেখানকার এক কর্মী।

চীন সম্প্রতি তাদের কোভিডে মৃত্যুর সংজ্ঞাতে বদল এনে বলেছে, কেবল কোভিডজনিত নিউমোনিয়া ও শ্বাসযন্ত্র অকার্যকর হয়ে মৃত্যুকেই তারা এখন থেকে কোভিডে মৃত্যুর তালিকায় স্থান দেবে।

বেইজিংয়ের ছায়োইয়াং হাসপাতালের কর্মকর্তা ঝ্যাং ইউহুয়া রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, এখন যে রোগীরা আসছে তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক, অন্যান্য রোগে গুরুতর অসুস্থ।

এখন প্রতিদিন ৪০০-৫০০ রোগীকে জরুরি সেবা দেওয়া লাগছে, আগে এই সংখ্যা ছিল ১০০র মতো, বলেছেন তিনি।

বেইজিংয়ের চীন-জাপান মৈত্রী হাসপাতালের জ্বরের ক্লিনিকও বয়স্ক রোগীদের দিয়ে ভর্তি বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

রোগীর চাপ সামলাতে গ্রামাঞ্চলের অনেক চিকিৎসাকেন্দ্রে অবসরে যাওয়া কর্মীদের পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, অসুস্থ হলেও নার্স ও চিকিৎসকদের কাজে যোগ দিতে বলা হচ্ছে।

অনেক শহরে ওষুধের ঘাটতিও প্রবল হয়ে উঠেছে।

Share if you like

Filter By Topic