জনৈকা ভদ্রমহিলা একটি ক্যাফেতে গেলেন, মেন্যু দেখে কফি অর্ডার করলেন। তিনি অবশ্য জানেন না, তিনি যা অর্ডার করলেন সেটি খেতে কেমন। কারণ মেন্যু কার্ডে তেমন কিছু বৰ্ণনা ছিল না, নামগুলো ছাড়া।যে পদটি তার বাজেটে মিলল, তিনি সেটিই চেয়ে নিলেন। ভদ্রমহিলা নিজে মিষ্টি পছন্দ করেন বেশ।
অর্ডারটি আসার পরে তিনি দেখতে পেলেন যেটি অর্ডার করেছেন সেটি সম্পূর্ণ ব্ল্যাক কফি, তেতো মতোন, খেতে এতটুকুন চিনি নেই। এবার নিজেকেই বকতে লাগলেন।
এরকম বিড়ম্বনায় হয়ত অনেকেই পড়তে হয়। কফি একটি ভিনদেশি পরিবেশনা। কফির রেসিপি বলতে সাধারণত চোখে ভাসে দুধের সাথে জ্বাল দেওয়া কফির লিকার। কিন্তু এটিই তো কফির একমাত্র রূপভেদ নয়, এর তো আছে শতেক রকম প্রণালী, সাথে বাহারি নাম সব - যেগুলি আমরা রেস্তোরাঁয় গিয়ে চেখে দেখি।
কফি জিনিসটা মূলত কফি বিনের গুঁড়ো। এই কফি হয় দুই রকমের- রোবাস্তা আর এরাবিকা। জনপ্রিয়তার দৌরথে এগিয়ে এরাবিকা, কারণটা তার মিষ্টতা। তবে জোরালো মাদকতা খুঁজলে রোবাস্তাই সেরা, কাফেইনে ভরপুর বলে। তাই কড়া মাত্রার সব কফিতে এটিকে ব্যবহার করা হয়। ক্যাফেইন তন্দ্রাভাব কাটিয়ে উদ্যমী করে তোলে।
এসপ্রেসো এবং আমেরিকানো : শুধুই কালো কফি
কফির জগতে যতরকম কফি হয়, এটি তাদের বেস বা মাতৃকা। প্রস্তুতি ঘন কালো কফি গুঁড়োর সাথে সামান্য জল মিশিয়ে। দোকানে এই কাজটি হয় মেশিনে। এই ধরণটিতে কফির ঘনত্ব বেশি। এটি দুই ভাবে পরিবেশিত হয় - একক শট আর ডাবল শট। এতে আরো গরমপানি যোগ করে কফির ঘনত্ব কমিয়ে প্রস্তুত হয় আমেরিকানো নামে আরেকটি কফির ধরন। কফির ভেতর এরাই নিটল তেতো কফি।
কর্টাডো এবং ফ্লাট হোয়াইট : কফির সাথে দুধ
এসপ্রেসোর উপর ধোঁয়া ওঠা গরম দুধ মিলিয়ে যে অল্প বুদবুদ তোলা কফি হয় সেটিই কর্টাডো। এখানে দুধের ব্যবহার কফির এসিডিটি কমায়। ডাবল শট এসপ্রেসোর সাথে আরেকটু বেশি মাত্রায় দুধ মিলিয়ে নিলে যেই ঘন কফি হবে সেটিকে বলে ফ্লাট হোয়াইট। এতে থাকে কিছুটা ফেনার বুদবুদ থাকে। সম্ভ্রান্ত কফির জগতে এরা নবাগত।
ক্যাপুচিনো আর লাটে : সাদা কফি বটে
এক শট এসপ্রেসোর সাথে ফোম করে ঘন দুধের মিশ্রণ ক্যাপুচিনো। ক্যাপুচিনোতে ঘন দুধ অপূর্ব কৌশলে ঢেলে কফির উপর চমৎকার ছবি বানানো হয়। এক ভাগ এসপ্রেসোর সাথে দুই ভাগ ফোম করা দুধ মেলালে হয় ক্যাফে ম্যাকিয়াতো । ক্যাপুচিনোর দ্বিগুন মাত্রায় দুধ মিশিয়ে হয় ক্যাফে লাটে ।
মোকা কফি
চিনি, বাদাম আর চকলেটের স্বাদে মোকা কফি সব থেকে বিলাসী। এক ভাগ এসপ্রেসোর সাথে দুই ভাগ দুধের সাথে এতে যুক্ত হয় ক্রিম আর চকলেটের সিরাপ।উপরে ছড়ানো হয় চকলেটের গুঁড়ো। এরাবিকা কফির গুঁড়ো এখানে মেশানো হয়। এর উৎপত্তি ইয়েমেনের মোকা অঞ্চলে।
অনেক তো হলো কফির বর্ণনা, এবার তো কফির স্বাদ নিতে যেতে হবে। ঢাকার অলিতে গলিতে আছে অনেক কফিশপ, কিন্তু যদি একটু অরিজিনাল আমেজ পেতে হয় তবে তো ঢু মারতেই হয় একটু নাম ডাকওয়ালা জায়গায়, যেখানে কফির সাথে থাকবে কফি পানের আবহ, জমে যাবে এক প্রহর আড্ডা দিয়ে অনায়াসে কফির ধোঁয়ায় আর শরীরটাও চাঙ্গা হয়ে যাবে।
কফি পানে যদি আভিজাত্যের খোঁজ থাকে তবে কফিবিলাস করতে যাওয়া যেতে পারে উত্তরার বিনস এন্ড এরোমা, গুলশানের গ্লোরিয়া জিন্স কফি কিংবা বেইলির কফিলেশাস এ। হোক না একটু কফির সাথে বুর্জোয়া বিলাস! তবে কফির বিশুদ্ধতম স্বাদের ছোঁয়াচ পেতে হলে অবশ্যই যাওয়া উচিত 'নর্থ এন্ড কফি' তে। এরা বিশ্বের নানা দেশ হতে কফি আমদানি করে, সাথে করে থাকে বিস্তর গবেষণা। কফি পানের পাশাপাশি এদের আউটলেট হতে নানা জাতের কফির রোস্ট করা গুঁড়ো সংগ্রহ করে নেয়া যাবে। কফির সাথে বই স্বাদ নিতে আছে ধানমন্ডির নার্ডি বিন কফি হাউস, যারা ভেতরের সাজসজ্জা বইপ্রেমীদের কথা ভেবে করা। আর কফির সাথে বাঙালির আড্ডায় গল্পের পাশাপাশি একটু খেলা, গান আর সিনেমার রেশ রেখে আছে লালবাগের চালচিত্র নামের ক্যাফে।
এখন শহর ডিসেম্বরে, চারদিকে শীতের আমেজ। তাই কোনো এক সন্ধ্যায় প্রিয় মানুষের হাতটি ধরে কফিশপে বেশ করে কেটে যাবে সময়।
সুস্মিতা রায় বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।
[email protected]