কেনেডি হত্যাকাণ্ড: হাজারো নথি প্রকাশ করল যুক্তরাষ্ট্র


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: December 18, 2022 14:32:19 | Updated: December 18, 2022 21:02:15


ম্যাসাচুসেটসের ব্রুকলিনে জন এফ কেনেডির বাসভবসনের বাইরে থাকা ফলক। ছবি রয়টার্স

হোয়াইট হাউসের নির্দেশের পর যুক্তরা্ষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত কয়েক হাজার গোপন নথি প্রথমবারের মতো অসম্পাদিত অবস্থায় প্রকাশিত হল। à¦–বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

এই ১৩ হাজার ১৭৩টি দলিল অনলাইনে আসায় ওই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সরকারের কাছে যা ছিল, তার ৯৭ শতাংশের বেশিই উন্মুক্ত হল, বলেছে হোয়াইট হাউস।

বিবিসি জানিয়েছে, এসব নথি থেকে চমকপ্রদ কিছু পাওয়া যাবে বলে আশা করা না হলেও হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যেতে পারে বলে ধারণা ইতিহাসবিদদের।

১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর টেক্সাসের ডালাস সফরকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মার যান কেনেডি।

১৯৯২ সালের এক মার্কিন আইনে ওই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত সব তথ্য ২০১৭ সালের অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশের কথা ছিল।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অসম্পাদিত ১৩ হাজারের বেশি নথি প্রকাশের অনুমোদন দিয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করেন।

সম্ভাব্য ‘শনাক্তযোগ্য ক্ষতি’ থেকে রক্ষায় আগামী বছরের জুন পর্যন্ত কিন্তু নথি গোপন রাখা হয়েছে, বলেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আর্কাইভ জানিয়েছে, ৫১৫টি নথি সম্পূর্ণ গোপন রাখা হচ্ছে, আর ২ হাজার ৫৪৫টি নথির আংশিক গোপন থাকছে।

ওয়ারেন কমিশন নামে পরিচিত কেনেডি হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত ১৯৬৪ সালের মার্কিন তদন্তে একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নে বাস করা লি হার্ভে অসওয়াল্ড নামে এক ব্যক্তিই টেক্সাসের ডালাসে সেসময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেন বলে উঠে আসে।

গ্রেপ্তারের দুইদিন পর ডালাস পুলিশ সদরদপ্তরের বেইজমেন্টে নিহত হন।

কেনেডির মৃত্যু নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্ম দিয়েছিল। যদিও বৃহস্পতিবার সিআইএ বলেছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে অসওয়াল্ড কখনোই যুক্ত ছিল না, à¦†à¦° এক ব্যক্তি একাই সাবেক প্রেসিডেন্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। মার্কিন তদন্ত কর্মকর্তারা তার সম্পর্কিত কোনো তথ্য গোপন রাখেননি।

তবে এবারের অসম্পূর্ণ নথিগুলোতে মেক্সিকো সিটিতে অসওয়াল্ডের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলেই আশা এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজ করা অনেক তাত্ত্বিক ও গবেষকের।

অসওয়াল্ড ১৯৬৩ সালের অক্টোবরে মেক্সিকো সিটিতে এক কেজিবি (সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তচর সংস্থা) কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

সর্বশেষ এক বিবৃতিতে সিআইএ জানায়, অসওয়াল্ডের মেক্সিকো সিটি ভ্রমণ বিষয়ক সব নথি আগেই প্রকাশ করা হয়েছে।

“২০২২ এর প্রকাশিত নথিতে এ সংক্রান্ত নতুন কোনো তথ্য নেই,” বলেছে তারা।

তবে মেরি ফেরেল ফাউন্ডেশন নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা বলছেন, অসওয়াল্ড মেক্সিকো সিটিতে যে সময় কাটিয়েছিলেন, সেই সময়ের অনেক তথ্যই সিআইএ গোপন রেখেছে। এই ফাউন্ডেশনই কেনেডি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত সব নথি প্রকাশের আবেদন জানিয়ে মামলা করেছিল।

তারা বলছে, সিআইএর কিছু দলিল কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আর্কাইভে জমা দেওয়া হয়নি। ফলে সদ্য প্রকাশিত দলিলপত্রের মধ্যেও সেগুলো নেই।

নতুন প্রকাশিত একটি দলিলে দেখা যায়, মেক্সিকোর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করেছিলেন যাতে তারা মেক্সিকোতে সোভিয়েত দূতাবাসে আড়িপাতার যন্ত্র বসাতে পারে। মেক্সিকোর সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি গোপনই রাখা হয়েছিল।

এই ফাইলটি যখন এর আগে প্রকাশ করা হয়, তখন সেটি সম্পাদিত অবস্খায় প্রকাশিত হওয়ায় নথি থেকে তথ্যটি কেটে বাদ দেয়া হয়েছিল।

হোয়াইট হাউজ বলছে, কেনেডি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পরিচালিত সরকারি তদন্ত ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে নতুন প্রকাশিত দলিলগুলো মানুষকে সাহায্য করবে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনও তার নির্বাহী আদেশে লিখেছেন, “যে প্রায় ১৬ হাজার নথি এর আগে অংশত কাটা-ছেঁড়া করে প্রকাশ করা হয়েছিল, সরকারি সংস্থাগুলো পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার পর সেগুলোর ৭০ শতাংশই পুরোপুরি প্রকাশের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও তার শাসনামলে কেনেডি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত হাজার হাজার নথি প্রকাশ করেছিলেন। তবে কিছু নথি জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে গোপন রাখা হয়েছিল।

এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রায় দেড় হাজার নথি প্রকাশ করলেও, অনেক কিছুই গোপন রেখেছিলেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক সাবেক রিপোর্টার এবং কেনেডি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে একটি বইয়ের লেখক ফিলিপ শেনন বলেছেন, অসওয়াল্ডের মনোভাব সম্পর্কে সরকার আগে থেকে কিছু আঁচ পেয়েছিল কিনা, নতুন প্রকাশিত দলিলপত্র হয়তো সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে পারবে।

“আমার সন্দেহ, লি হার্ভি অসওয়াল্ড যে খুবই বিপদজনক ব্যক্তি এবং সে যে হয়তো প্রকাশ্যেই প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যার কথা বলতো, এসব দলিলের কিছু তথ্য থেকে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।”

শেনন বলেন, “একটা প্রশ্ন কিন্তু সবসময় ছিল। সেটা হচ্ছে, এই লোকটা যে প্রেসিডেন্ট কেনেডির জীবনের জন্য হুমকি, তার কি কোন আঁচ যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, সিআইএ এবং এফবিআই পেয়েছিল? à¦¤à¦¾à¦°à¦¾ যদি এসব তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিত, তাহলে কি তারা প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করতে পারতো?”

Share if you like