২১ শতকে এসে কে-পপ শব্দটির সাথে পরিচিত নয় এমন তরুণ-তরুণী খুব কম পাওয়া যাবে। কে-পপ হচ্ছে এমন একটি সঙ্গীত ধারা যার উৎপত্তি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াতে।
এটি মূলত সে দেশের পপ সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে হিপ-হপ, আর এন্ড বি, রক এবং ইলেকট্রনিক এর মতো সঙ্গীত ধারাগুলো।
বিটিএস
২০১৩ সালে ৭ জন তরুণের সমন্বয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান বিগ হিট এন্টারটেইনমেন্ট এর অধীনে একটি ব্যান্ডদল বিনোদন জগতে যাত্রা শুরু করে। সেই দলটির নাম ব্যাংট্যান সানিওনডান বা বিটিএস। দলটিতে রয়েছেন আরএম, জিন, সুগা, জে-হোপ, জিমিন, ভি ও জংকুক।
২০১৩ সালের ১২ জুন ‘টু কুল ফোর স্কুল’ একক অ্যালবামের মাধ্যমে দলটি তাদের যাত্রা শুরু করে। কিন্তু শুরু থেকেই কী বিটিএস এর জন্য কে-পপ জগতে চলার পথ মসৃণ ছিল? উত্তরটি হবে ‘না’। একটা পর্যায়ে এসে দলটি ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিগ হিট এন্টারটেইনমেন্ট যা বর্তমানে হাইবি লেবেলস নামে পরিচিত।
কিন্তু ২০১৬ সালে তাঁদের প্রথম ডেসাং ‘বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যালবাম’ পুরষ্কার জিতে নেয়ার পর থেকে দলটিকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২০ সালে তাদের স্টুডিও অ্যালবাম ‘ম্যাপ অব সোউল: ৭’ ছিল সেই বছরের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত অ্যালবাম।
বর্তমানে, ২০২২ সালে এসে বিটিএস হলো দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসের সেই দল যারা ‘বেস্ট-সেলিং আর্টিস্ট’। বিটিএস দেশীয় গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সমান ভাবে সমাদৃত হচ্ছে। মূলত তারাই কোরিয়ান ওয়েভ কে আন্তর্জাতিক বিনোদন অঙ্গনে নিয়ে গেছে।
আমেরিকার রেকর্ডিং ইন্ড্রাস্টি এসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে ‘গোল্ডেন সার্টিফিকেশন’ পাওয়া প্রথম কোরিয়ান দল তারা এবং একাধিকবার দখল করেছে বিলবোর্ড ১০০ এর প্রথম স্থান।
এছাড়াও তাদের ঝুলিতে রয়েছে আমেরিকান মিউজিক পুরষ্কার, বিলবোর্ড মিউজিক পুরষ্কার, গোল্ডেন ডিস্ক পুরষ্কার এবং দুইবার পাওয়া গ্র্যামি মনোনয়ন। বিটিএস - ই দক্ষিণ কোরিয়ার একমাত্র দল যারা গ্র্যামিতে মনোনয়ন পেয়েছে।
বিটিএস হচ্ছেন সেই দল যারা কে-পপ কে নিয়ে গেছেন নতুন শিখরে। যার মাধ্যমে দলটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে সবার শীর্ষে অবস্থান করছে।
এক্সো
১২ জন সদস্যের সমন্বয়ে ২০১২ সালে এসএম এন্টারটেইনমেন্ট এর অধীনে এক্সো দলটি তাদের যাত্রা শুরু করে। দলটি মূলত এক্সো-এম এবং এক্সো-কে দুটি ভাগে পরিচালনা করা হতো। এক্সো-এম এর সদস্যরা হচ্ছেন জুমিন, লে, চেন, ক্রিস, লুহান এবং টাও। এক্সো-কে এর সদস্যরা হচ্ছেন সুহো, বেকহিউন, চানইয়ল, ডি.ও, কাই এবং সেহুন।
কিন্তু শুরু থেকেই এক্সো দলটিকে অনেক ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এক্সো-এম ইউনিট এর তিন চাইনিজ সদস্য দলটি ছেড়ে চলে যান। বর্তমানে এক্সো এর সদস্য সংখ্যা ৯।
এক্সোকে বলা হয় কে-পপ এর রাজা এবং বিশ্বের বৃহত্তম বয়ব্যান্ড। ১০ বছরের ক্যারিয়ারে এক্সো জিতে নিয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কার ও সম্মাননা।
২০১৪ - ২০১৮ সাল পর্যন্ত এক্সো ছিলো ‘ফোর্বস কোরিয়া পাওয়ার সেলিব্রিটি’ তালিকার শীর্ষ পাঁচ সেলিব্রিটিদের মধ্যে একজন। ২০১৭ সালে ‘কোরিয়ান পপুলার কালচার এন্ড আর্টস এওয়ার্ড’ এর তরফ থেকে পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসাপত্র সম্মাননা।
তারা জিতে নিয়েছে এমনেট এশিয়ান মিউজিক এ টানা পাঁচবার ‘অ্যালবাম অফ দ্যা ইয়ার’ এবং মেলন মিউজিক এওয়ার্ড এ টানা দুইবার ‘আর্টিস্ট অফ দ্যা ইয়ার’ পুরষ্কার। এ ছাড়াও এক্সোর কাছে রয়েছে ২৩ টি ডেসাং পুরষ্কার।
ব্ল্যাকপিঙ্ক
২০১৬ সালে ওয়াইজি এন্টারটেইনমেন্ট এর অধীনে যাত্রা শুরু করে ব্ল্যাকপিঙ্ক নামক কে-পপ দলটি। ৪ জন নারী সদস্যের সমন্বয়ে তৈরি দলটিতে রয়েছেন জিসু, জেনি, রোজ এবং লিসা।
ব্ল্যাকপিঙ্ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে সফল কোরিয়ান নারী ব্যান্ডদল। তাদের প্রায়ই বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ও সফল নারী ব্যান্ডদল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ব্যান্ডদল হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকেই কুড়িয়ে চলেছেন প্রশংসা ও পুরষ্কার। কোনো পুরুষ ব্যান্ডদলকে যদি কেউ টক্কর দেয়ার ক্ষমতা রাখে সেটি হচ্ছে এই ব্ল্যাকপিঙ্ক।
ব্ল্যাকপিঙ্ক - ই প্রথম নারীদল বা গার্লগ্রুপ যারা আমেরিকান কোচেলা তে পারফর্ম করার সুযোগ পেয়েছে। বিলবোর্ড রেকর্ড থেকে শুরু করে নতুন গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড , কি নেই তাদের ঝুলিতে?
তাদের মিউজিক ভিডিও ‘দুরু-দুরু’ মুক্তি পাবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩৬.২ মিলিয়ন ভিউ অর্জন করে যা ২০১৮ সালের সবেচেয়ে বেশিবার দেখা ভিডিওর খেতাব অর্জন করে। ভিডিওটি মাত্র ১০ দিনে ১০০ মিলিয়ন ভিউ অর্জন করে নেয় যা সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে ঘটে বলে ধারণা করা হয়।
ব্ল্যাকপিঙ্ক এর অর্জিত বিখ্যাত পুরষ্কার গুলোর মধ্যে রয়েছে সিউল মিউজিক এওয়ার্ড, এমনেট এশিয়ান মিউজিক এওয়ার্ড, গোল্ডেন ডিস্ক এওয়ার্ড সহ অন্যন্য। সর্বশেষ ২০২২ সালে জিতেছে ‘এমটিভি ভিএমএ’ এর ‘বেস্ট মেটাভার্স পারফরমেন্স’ পুরষ্কার।
টোয়াইস
টেলিভিশন অনুষ্ঠান সিক্সটিন এর মাধ্যমে ২০১৫ সালে একটি গার্লগ্রুপ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবার জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্ট এর অধীনে দলটি কে-পপ জগতে তাদের যাত্রা শুরু করে।
৯ জন নারী সদস্য বিশিষ্ট দলটির নাম হচ্ছে টোয়াইস। এই দলের সদস্যরা হচ্ছেন নাইয়ন, থাহিয়ন, জংইয়ন, মোমো, সানা, জুয়ু, মিনা, ছ্যাইয়ং ও জিহ্যু।
২০১৬ সাল থেকেই টোয়াইস নিজ দেশে জনপ্রিয়তার মুখ দেখা শুরু করে। সে বছর তাঁদের একক অ্যালবাম ‘চিয়ার আপ’ ‘গাওন ডিজিটাল চার্ট’ এ এক নাম্বারে স্থান পায় এবং মেলন মিউজিক এওয়ার্ড ও এমনেট এশিয়ান মিউজিক এওয়ার্ড এর পক্ষ থেকে ‘বছরের সেরা গান’ পুরষ্কারে ভূষিত হয়।
২০২০ সাল অনুযায়ী দলটি দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানে যুগ্মভাবে ১ কোটি অ্যালবাম বিক্রি করে যা তাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত কে-পপ গার্লগ্রুপ এ পরিণত করে।
ফারজানা জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।