জামালপুরে একটি মডেল মসজিদ প্রকল্পে স্থাপিত সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানের ‘নামফলক অপসারণের’ প্রসঙ্গ তুলে প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একদল যুবকের বিরুদ্ধে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সোমবার দুপুরে সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইনে সারাদেশে একযোগে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করছিলেন।
২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টম্বর সরিষাবাড়ী উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। মুরাদ হাসানের নামযুক্ত এই ফলকটি পরে অপসারণ করা হয়।
তবে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানের কোনো সমর্থক এ কাজ করেননি বলে তার ভাষ্য।
এ ঘটনার পর প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান জনিসহ (৩২) চারজন সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
অন্যরা হলেন মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের উপ-ঠিকাদার (সুপারভাইজার) মো. রকিব (৩০), ঠিকাদারের কর্মচারী ওসমান গণি বিপুল (২৮) ও সৌরভ (২৫)।
মাসুদুর রহমান জনির অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনের জন্য সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলাকালে হঠাৎ একদল যুবক তার কাছে প্রকল্পের নামফলকে সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানের নাম নেই কেন জানতে চায়।
এ নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই যুবকরা তার ওপর হামলা চালায়; এ সময় ওই যুবকরা সেখানকার সিসিটিভির হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যায় বলেও মাসুদুর রহমানের অভিযোগ।
সরিষাবাড়ী উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদার ও সরিষাবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল মোর্শেদ তরফদার সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, মসজিদের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের সময় সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানের নামফলক ছিল। সেটি মসজিদ উদ্বোধনের আগে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ভেঙে প্রধানমন্ত্রীর নামফলক স্থাপন করা হয়।
ঢাকায় অবস্থান করা মুরাদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরিষাবাড়ী মডেল মসজিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আমন্ত্রণ না পাওয়ায় তিনি অনুষ্ঠানে যাননি, ঢাকায় আছেন। তার কোনো লোকজন সেখানে কোনো ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নন।
তাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করতে ‘বিএনপি-জামায়াত জোটের’ কতিপয় লোক বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে বলে তার অভিযোগ।
২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন মুরাদ হাসান। তখন তিনি তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
জামালপুর পৌর কাউন্সিলর সাখাওয়াত আলম মুকুল বলেন, অনুষ্ঠাস্থলে কোনো ঘটনা ঘটেনি। হৈচৈয়ের শব্দ শুনে ভেতর থেকে বের হলে তিনি দেখতে পান কিছু অপরিচিত যুবকদের সঙ্গে প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান জনির বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। পরে তিনি পরিস্থিতি শান্ত করে পুনরায় অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সরিষাবাড়ী থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংসদ সদস্যর ভিত্তিপ্রস্থর করা নামফলক না থাকায় কিছুটা উত্তেজনা ছিল। তবে আমাদের সামনে কিছু হয়নি। বাইরে কিছু হয়েছে কিনা তা জানা নেই। কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য মুরাদ হাসান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। একই দিন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক দায়িত্ব থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।