প্রবাসী আয় দেশে আনতে অবৈধ ‘হুন্ডি’র মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগের মধ্যেই মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা এমএফএস এর ৪৮০ এজেন্টের হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে শুধু বুধবারই মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর দুই শতাধিক হিসাব ‘সাময়িক বরাখাস্ত’ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এমন পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রবাসী আয় অবৈধভাবে দেশে পাঠানোদের বিরুদ্ধে ‘শাস্তি’ নেওয়া হবে বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার বরখাস্ত হওয়া এমএফএস হিসাবগুলোর মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয় যাতে নগদায়ন করতে না পারে সেজন্য এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরে শর্ত পালন করতে পারলে প্রবাসী আয় উত্তোলনের সুযোগ দেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ নিয়ে অবৈধ পথে প্রবাসী আয় দেশে পাঠানোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে হাজার পাঁচেক এজেন্টশিপ বরখাস্ত করল বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
এমএফএসের ৪৮০টি হিসাবে লেনদেন স্থগিতের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘বৈধ চানেল ব্যবহার করে অবৈধ হুন্ডি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য সবসময় পর্যবেক্ষণ করে। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এমন পদেক্ষপ নেওয়া হয়েছে।’’
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসব এমএফএস হিসাবের মধ্যে অনেকগুলো বিকাশ ও নগদ এর এজেন্ট রয়েছে।
এ বিষয়ে বিকাশ এর মিডিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘‘বুধবার দিন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তাই মন্তব্য করা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দিনের যেকোনো সময়ে জানানো সম্ভব হবে, যদি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য থেকে থাকে।’’
আর নগদ এর পাবলিক কমিউনিকেশন্সের সিনিয়র ম্যানেজার লিংকন মো. লুৎফুজ্জামান সরকার বলেছেন, ‘‘নগদ এর কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য বা নিদের্শনা বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিএফআইইউর কাছ থেকে আসেনি এখনও।’’
অবৈধপথে রেমিটেন্স, নতুন সতর্কবার্তা
সাম্প্রতিক সময়ে বৈধপথে রেমিটেন্স আসা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়া অবৈধপথে হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠানোর বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ‘‘প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের প্রিয়জনদের জানানো যাচ্ছে যে, কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে (হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে) প্রেরণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
‘‘আপনাদের অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে না পাঠিয়ে বৈধ পথে/ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করুন, দেশ গড়ায় মূল্যবান অবদান রাখুন এবং আপনার প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন।’’
এতে বলা হয়, অবৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে প্রচলিত আইনে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময় অবৈধ চ্যানেল বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স অনেক বেশি আসে। কিন্তু সংক্রমণ কমে আসার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসা কমতে থাকে।
এর বড় কারণ হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠালে মুদ্রার বিনিময় হার বেশি পাওয়া যায়। আবার প্রবাসীর পাঠানো অর্থ প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যায় স্বজনরা। এসব কারণে প্রবাসীদের অনেকেই এখনও বৈধ পথে না গিয়ে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এর সঙ্গে এমএফএসগুলোর জড়িত থাকার তথ্যও পেয়ে এর আগে ব্যবস্থাও নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এমন অবস্থায় বৈধ পথে রেমিটেন্স দেশে পাঠাতে প্রণোদনাসহ নানা ধরনের নীতি সহায়তাও দেয় সরকার। এরপরও রেমিটেন্স কমছে চলতি অর্থবছরে।