মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে আন্তঃলেনদেনের পাশাপাশি ব্যাংক হিসাবে সহজে টাকা পাঠানোর নতুন সেবা চালু হয়েছে।
এজন্য ‘বিনিময়’ নামে চালু নতুন প্ল্যাটফর্ম রোববার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ঢাকায় হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে এ সেবার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, শতভাগ মানুষকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সেবার আওতায় আনতে কাজ করছে সরকার।
আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ‘ক্যাশলেস সমাজ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি শতভাগ সরকারি সেবা ডিজিটালাইজ করার কথা বলেন তিনি।
“বর্তমানে প্রায় ৫-৬ কোটি গ্রামবাসীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। যদি আগামী নির্বাচনে জনগণ যদি আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় রাখে, তবে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকবে এবং তারা ক্যাশলেস হবেন।“
অনুষ্ঠানে ‘বিনিময়’ প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এ সেবা চালুর ফলে মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে পরিচিত মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) কোম্পানিগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির পারস্পরিক লেনদেন করা যাবে। অর্থাৎ বিকাশ থেকে রকেট, এম ক্যাশ এর মধ্যে যেমন লেনদেন করা যাবে তেমনি ব্যাংক হিসাবে আরও সহজে অর্থ স্থানান্তর করা যাবে।
‘বিনিময়’ প্ল্যাটফর্মে একটি আইডি খুলে এমএফএস, ব্যাংক ও পিএসপি হিসাবে সহজেই লেনদেন করা যাবে; পৃথকভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লেখার দরকার পড়বে না। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পরিষেবার ফি ও বিল পরিশোধ করা যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
আন্তঃলেনদেনের এ পদ্ধতিকে ‘ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্লাটফর্ম (আইডিটিপি) বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ‘বিনিময়’ নামে পরিচিত হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ১১টি ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি আন্তঃলেনদেন সংযুক্ত হচ্ছে।
এরমধ্যে আট ব্যাংক হল- রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, বেসরকারি ব্র্যাক, ইস্টার্ন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, আল-আরাফাহ ইসলামী, ইউসিবি ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
তিন এমএফএস কোম্পানি- বিকাশ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রকেট ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের এম ক্যাশ।
এছাড়া ‘টালি পে’ নামের একটি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) ‘বিনিময়’ সেবায় শুরুতেই যুক্ত থাকছে।
এর আগে এমএফএস কোম্পানিগুলোর মধ্যে লেনদেন চালু করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া উদ্যোগ মাঝপথে থেমে যায়। তখন সাকুর্লারও করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে এতে যুক্ত হয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনোভেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট একাডেমি (আইডিইএ) যৌথ উদ্যোগে বিনিময় প্লাটফর্ম তৈরি করা হয় বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন প্রধানত ঢাকা শহর ও চট্টগ্রামে ইন্টারনেটের সুবিধা ছিল। আমরা ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ শুরু করি। এখন ডিজিটাল সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে সর্ম্পূণ আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী।
তিনি বলেন, “নেটওয়ার্ক সিস্টেম স্থাপিত হয়েছে, সরকারের সেবা ডিজিটালাইজড হয়েছে, প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে, বাংলাদেশে বৃহৎ আইটি কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এখন দেশেই ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন সেট ও কম্পিউটার মেমোরি চিপস উৎপন্ন হচ্ছে এবং এগুলো রপ্তানি শুরু হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এনএম জিয়াউল আলম।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মেজবাউল হক নতুন চালু আইডিটিপি বা ‘বিনিময়’ প্লাটফর্মের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন।
বিনিময় কাজ করবে যেভাবে
অর্থ লেনদেন করতে বিনিময় প্ল্যাটফর্মে একটি হিসাব খুলতে হবে গ্রাহককে। আগে থেকেই অনুমোদিত এমএফএস, ব্যাংক ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) এতে যুক্ত থাকবে।
গ্রাহক হিসাব খোলার পর তার একটি গ্রাহক পরিচিতি নাম বা আইডি তৈরি হবে। তাহলেই তিনি ‘বিনিময়’ এর মাধ্যমে তার সংশ্লিষ্ট এমএফএস বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লেনদেনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।
আবার যে গ্রাহককে অর্থ পাঠাবেন তারও বিনিময় সেবায় হিসাব থাকতে হবে। যার কাছে টাকা পাঠানো হবে প্রেরকের পক্ষ থেকে শুধু আইডি লিখলেই হবে। অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কোনো হিসাব নাম্বার বা কোনো পরিচিতি সংক্রান্ত অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া লাগবে না।
বেসরকারি খাতের ভেলওয়ার লিমিটেড, মাইক্রোসফট বাংলাদেশ ও অরিয়ন ইনফর্মেটিকস লিমিটেড প্লাটফর্মটি তৈরিতে কাজ করেছে। বিনিময় প্লাটফর্মের দায়িত্ব সমন্বয় করবে ভেলওয়ার লিমিটেড।
চার্জ কত?
বিনিময় প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের মাশুল বা চার্জ গত বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এটি ব্যবহারের জন্য যে কোনো পরিমাণের প্রতি লেনদেনে ৫০ পয়সা সেবা ফি অর্থগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান দেবে বিনিময় প্ল্যাটফর্মকে।
অপরদিকে ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি এর মাধ্যমে পাঠানো অর্থের বিপরীতে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত শতাংশ হারে সেবা ফি গ্রাহকের কাছ থেকে নিতে পারবে কোম্পানিগুলো।
আর ব্যাংক থেকে ব্যাংক হিসাবে অর্থ পাঠাতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা সেবা ফি নেওয়া যাবে গ্রাহকের হিসাব থেকে।
সাকুর্লারে বলা হয়েছে, “ইন্টারঅপারেবল ফি অর্থ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করবে, যা
গ্রাহকের নিকট হতে আদায় করা যাবে না। অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তার গ্রাহক থেকে সাভির্স চার্জ বাবদ উল্লিখিত চার্জ আদায় করতে পারবে।
প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক হতে উক্ত সার্ভিস চার্জ এর অতিরিক্ত কোনো চার্জ আদায় করতে পারবে না।“