এক রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।
শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর রাত পর্যন্ত সময়ে উপজেলার ধনতলা, চাড়োল ও পাড়িয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি খায়রুল আনাম জানান।
এর মধ্যে ধনতলা ইউনিয়নে নয়টি, চাড়োল ইউনিয়নে একটি এবং পাড়িয়া ইউনিয়নে চারটি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানান বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যানাথ বর্মণ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তিনি আরও বলেন, “ধনতলা ইউনিয়নের সিন্দুরপিণ্ডি থেকে টাকাহারা পর্যন্ত একটি হরিবাসর মন্দির, একটি কৃষ্ণ ঠাকুর মন্দির, পাঁচটি মনসা মন্দির, একটি লক্ষ্মী মন্দির ও একটি কালী মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেছে।
“এ ছাড়া চাড়োল ইউনিয়নে একটি কালীমন্দির, পাড়িয়া ইউনিয়নে একটি বুড়া-বুড়ি মন্দির, একটি লক্ষ্মী মন্দির, একটি আমাতি মন্দির এবং একটি মাসানমাঠ মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।”
বিদ্যানাথ বর্মণ বলেন, “প্রতিমাগুলোর হাত-পা, মাথা ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলেছে। আবার কিছু প্রতিমা ভেঙে পুকুরের পানিতে ফেলে রেখেছে।”
‘দুর্বৃত্তরা’এ ঘটনা ঘটিয়েছে উল্লেখ করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমরা চাই, প্রশাসন ঘটনাটি সঠিকভাবে তদন্ত করুক। সেইসঙ্গে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করা হোক।”
মন্দিরের প্রতিমা ভাঙার খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমার কাছে মনে হয়েছে ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশে বর্তমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।”
“এ ঘটনাটি কে করেছে বা কারা করেছে; এজন্য আমরা অবশ্যই মামলা নেব। সেই সঙ্গে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলাম। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
“ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য সচেতনতামূলক কাজ করা হবে।”
সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে উপজেলার প্রত্যেকটি মন্দিরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভাঙচুর করা প্রতিমা দেখতে মানুষজন মন্দিরে ভিড় করেছেন। মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও আতঙ্ক দেখা গেছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাসহ সাংবাদিকরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ বিকাল ৪টার দিকে সিন্দুরপিণ্ডি এলাকার হরিবাসর মন্দির পরিদর্শনে ছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও ছিল।
সেখান থেকে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মন্দিরটি বড় ও ঐতিহ্যবাহী। অনেক মানুষ এখানে প্রতিনিয়ত আসেন। এই মন্দিরের সবগুলো প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।”
“এটা খুবই দুঃখজনক ও আতঙ্কের। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই, জড়িতদের খুঁজে বের করুক প্রশাসন।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী আসলাম জুয়েল বলেন, “যেসব মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে এগুলো অনিরাপদহীনভাবে রাস্তার পাশে ছিল।”
“প্রতিমা ভাঙচুরের এই ঘটনাটি আসলে দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি। এ ছাড়া সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”
সিন্দুরপিণ্ডি এলাকার বাসিন্দা কাশীনাথ সিংহ বলেন, “হঠাৎ করে কে বা কারা রাতের আঁধারে প্রতিমাগুলো ভাঙচুর করেছে। এতে আমরা আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় আছি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।”