ঋণ আদায়ে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখানের মামলা করতে পারবে না বলে যে রায় হাই কোর্ট দিয়েছিল, তা স্থগিত করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারকের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। হাই কোর্টের রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি আসামির জামিন বহাল রাখা হয়েছে ওই আদেশে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ঋণ আদায়ে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করতে পারবে না বলে গত ২৩ নভেম্বর রায় দিয়েছিল হাই কোর্ট।
সেখানে বলা হয়, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কেবল ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বিধান অনুযায়ী অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে।
চেক প্রত্যাখানের অভিযোগে ব্র্যাক ব্যাংকের করা এক মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর দণ্ড বাতিল করে সেদিন এ রায় দিয়েছিল বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ আলীর আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে। পাশাপাশি আসামির জামিন বহাল রেখেছে।”
আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন।
এদিকে হাই কোর্টের সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ঋণ প্রদানে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও আধুনিকীকরণের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে নিয়মিত বিরতিতে তা দেখাশোনা করার কথা বলা হয়েছে সেখানে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, “ব্যাংকের টাকা যেহেতু জনগণের টাকা। সেহেতু জনগণের টাকা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিচ্ছেন, তা জনগণের জানার অধিকার আছে। তাই প্রত্যেক ঋণ মঞ্জুরের সাথে সাথে স্যাংশন লেটার জনগণের অবগতির জন্য সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ প্রদান করা হল।
“আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ঋণের বিপরীতে ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করবে।”
রায়ে বলা হয়, খেলাপি ঋণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান কী পদ্ধতিতে আদায় করবে, সে বিষয়ে অনুমোদনপত্রে বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে।নিযেহেতু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩ মোতাবেকই তার খেলাপি ঋণ আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ নিতে হবে, সেহেতু ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণ আদায়ে চেক প্রতারণার মামলা করার সুযোগ নেই।
“তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি তার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি বিক্রয় করে এবং বিনিময়ে সম্পত্তির ক্রেতা হতে কোনো চেক গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে যদি সেই চেক প্রত্যাখ্যাত হয়, তখন উক্ত প্রতিষ্ঠান সেই প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে চেকের মামলা করতে হকদার। কিন্তু কোনভাবেই ঋণ আদায়ের নিমিত্তে চেক জামানত হিসাবে গ্রহণ করে তা প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা দায়ের করতে আইনত অধিকারী নয়।
“কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমন চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করলে তা বিচারিক আদালত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবেন।”