Loading...
The Financial Express

উপকূলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডব, ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারি বর্ষণ

| Updated: October 25, 2022 15:57:34


উপকূলে ঘূর্ণিঝড়  সিত্রাংয়ের তাণ্ডব, ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারি বর্ষণ

ভারি বর্ষণ আর স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সঙ্গী করে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

মাঝারি মাত্রার এ ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সানাউল হক মণ্ডল জানান, ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার ব্যাসের এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ সোমবার সন্ধ্যায় বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে।

সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোরের মধ্যে ভোলার পাশ দিয়ে এ ঝড় পুরোপুরি উপকূলে উঠে আসবে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অফিস।

উপকূল অতিক্রমকালে বন্দরের সতর্কতার কথা বিবেচনায় রেখে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। তবে কক্সবাজারের জন্য আগের মতই ৬ নম্বর বিপদ সংকেত বহাল রয়েছে।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, সন্ধ্যা ছয় টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিমি. দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালীসহ উপকলীয় জেলাগুলোতে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি চলছে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন। অনেক এলাকায় ঝড়ে গাছ ভেঙৈ পড়ার এবং বিদ্যুৎ বন্ধ থাকারও খবর আসছে।

জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের পূর্বাভাস বলছে, বাংলাদেশ সময় সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের চোখ বা কেন্দ্রভাগ পটুয়াখালীর রাঙাবালি বা চর মন্তাজ এলাকায় উপকূল স্পর্শ করবে। তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ৫০ নট বা ঘণ্টায় ৯৩ কিলোমিটারের মত।  

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরও বন্ধ রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাগুলোর ৭ হাজার ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে ২৫ লাখ মানুষ ঠাঁই নিতে পারবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।

সিত্রাংয়ের যে বিস্তার, তাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৩ জেলায় এ ঝড় তাণ্ডব চালাতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

এই জেলাগুলো হল– বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী। এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপ অঞ্চল মহেশখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ এলাকাও ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে বরগুনা সদর, পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়ে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বেশি পড়বে বলে মনে করছেন এনামুর রহমান।

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চীদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে। এসব এলাকায় ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

আর কক্সবাজার জেলা ও তার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে। এসব এলাকায় ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এছাড়া সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফরিদপুর, ঢাকা, মাদারীপুর, গোলাপলগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরে ৩ নম্বর নৌ-বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপকূলীয় ১৫ জেলার সাত হাজারের বেশি আশ্রয় কেন্দ্রে সন্ধ্যার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন সোয়া দুই লাখের বেশি মানুষ। সেই সঙ্গে অর্ধলক্ষাধিক গবাদি পশুকেও নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চর ফ্যাশনের ইউএনও আল নোমান জানান, সন্ধ্যা থেকে ঝড়ের বেশ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারি বর্ষণও রয়েছে।

“স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১২০০ লোক উঠেছে। তাদেরে রাতে খিঁচিুড়ি খেতে দেওয়া হবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”

Share if you like

Filter By Topic