Loading...
The Financial Express

উত্তর কোরিয়া: জাপানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পর নতুন করে উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার পাল্টা হুঁশিয়ারি

| Updated: October 05, 2022 17:06:49


উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আন/ ছবি: রয়টার্স উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আন/ ছবি: রয়টার্স

উত্তর কোরিয়া জাপানের আকাশসীমার ওপর দিয়ে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আকাশ থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালানোর মহড়া দিয়েছে। খবর বিবিসি বাংলা'র।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর যৌথ কমান্ডের প্রধান বলেছেন, এই মহড়ার মাধ্যমে তারা দেখাতে চেয়েছেন উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে যে কোন হুমকি শক্তভাবে মোকাবেলা করা হবে।

উত্তর কোরিয়া এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর আন্তর্জাতিকভাবে এর তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। পাঁচ বছর পর এই প্রথম আবার জাপানের ওপর দিয়ে উত্তর কোরিয়া এরকম ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়লো।

জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তার দেশ পাল্টা হামলা চালানোর সক্ষমতা তৈরি থেকে শুরু করে সবধরনের পথই খোলা রাখছে।

উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ে। উত্তর কোরিয়া যদি চায় এরকম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুয়াম দ্বীপে পর্যন্ত হামলা চালাতে পারবে।

উত্তর কোরিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর জাপানে কিছু নাগরিককে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়া হয়। এর আগে ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়া একই রকমভাবে জাপানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছিল।

উত্তর কোরিয়া যাতে কোন রকমের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা না চালায়, সেজন্যে দেশটির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোন দেশের দিকে বা দেশের সীমানার ওপর দিয়ে পূর্ব সতর্কতা ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থী।

বহু দেশই এধরণের পদক্ষেপ থেকে পুরোপুরি দূরে থাকে, কারণ এটিকে ভুলক্রমে একটি হামলা বলে গণ্য করা হতে পারে।

যদিও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষার মত অত বড় ঘটনা নয়, তারপরও এ ধরণের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে খুবই উস্কানিমূলক বলে গণ্য করা হয়।

সাইরেন বাজিয়ে সতর্কতা

জাপানের উত্তরে হোক্কাইডো দ্বীপ এবং আওমোরি শহরে আজ লোকজনের ঘুম ভেঙেছিল সাইরেনের আওয়াজ শুনে। তাদের কাছে কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনে টেক্সট মেসেজও পাঠায় যাতে বলা হয়: "উত্তর কোরিয়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে মনে হচ্ছে। আপনারা দয়া করে বিভিন্ন ভবনে বা ভূগর্ভে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।"

এই ক্ষেপণাস্ত্র যখন আকাশের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল, সেটি থেকে ধ্বংসাবশেষ খসে পড়তে পারে বলে লোকজনকে সতর্ক করে দেয়া হয়। তবে খবরে বলা হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষ আসলে শান্তই ছিল।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, টোকিওতে যখন লাউডস্পিকারে হুঁশিয়ারি বার্তা বাজানো হচ্ছিল, তখন অফিস-যাত্রীরা শান্তভাবে হেঁটে যাচ্ছেন।

তবে কিছু মানুষ বেশ বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। "যদি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, এটা শুধু এখানেই নয়, পুরো দেশের জন্যই বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে বলে আমি দুশ্চিন্তা করছিলাম", আশাহি শিম্বুন পত্রিকাকে বলছিলেন আওমোরি শহরের একজন বাসিন্দা কাজুকো এবিনা।

কর্মকর্তারা পরে জানিয়েছিলেন, মধ্যম পাল্লার এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র জাপান থেকে অনেক দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি স্থানে গিয়ে পড়ে এবং এতে কেউ হতাহত হয়নি।

উত্তর কোরিয়া থেকে ছোঁড়া কোন ক্ষেপণাস্ত্র এই প্রথম এত বেশি দূরে গিয়ে পড়লো। এটি প্রায় এক হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছেছিল, পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেরও অনেক উপরে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকে এক "সহিংস আচরণ" বলে বর্ণনা করেছেন। জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা বলেছেন, জাপানের প্রতিরক্ষা জোরদার করতে সব ধরণের বিকল্প পথ তারা খোলা রেখেছেন। এর মধ্যে 'নিজেদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার চিন্তাভাবনাও আছে' বলে তিনি জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র এড্রিয়েন ওয়াটসন একে এক "বিপদজনক এবং লাগামহীন" সিদ্ধান্ত বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি ঐ পুরো অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।

উত্তর কোরিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করলো এমন এক সময়, যখন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া এক সঙ্গে কাজ করছে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য।

গত সপ্তাহে এই তিনটি দেশ একসঙ্গে উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবেলায় একটি নৌ-মহড়া চালায়।

এ ধরণের মহড়া অবশ্য উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনকে আরও বৈরি করে তোলে। তিনি দাবি করে থাকেন যে, শত্রুরা যে তাদের দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এসব মহড়া তারই প্রমাণ।

উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালে এই তিন দেশের এরকম এক মহড়ার পরই জাপানের উপর দিয়ে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছিল। এক সপ্তাহ পর তারা একটি পরমাণু পরীক্ষাও চালিয়েছিল।

সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে উত্তর কোরিয়া হয়তো আরেকটি পরমাণু পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া হয়তো চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস শেষ না হওয়ার পর্যন্ত এরকম পরীক্ষা নাও চালাতে পারে, কারণ চীন তাদের প্রধান মিত্র।

কিছু বিশেষজ্ঞ অবশ্য আশংকা করছেন, উত্তর কোরিয়া একটি পরমাণু পরীক্ষা চালানোর ক্ষেত্র তৈরি করছে।

উত্তর কোরিয়া তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় মূলত কিছুটা উল্লম্ব পথে, যাতে তা আকাশের অনেক ওপরে ওঠে এবং যার ফলে এটিকে অন্য দেশের আকাশসীমার ওপর দিয়ে যেতে না হয়। কিন্তু জাপানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার মাধ্যমে তারা আসলে প্রকৃত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যেরকমটা করতে হতে পারে, সেটাই পরীক্ষা করার সুযোগ পায় - রয়টার্সকে বলছেন একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অংকিত পান্ডে।

Share if you like

Filter By Topic